ঢাকার দুই নতুন ক্যাফে

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2014, 05:09 PM
Updated : 20 Jan 2015, 07:42 PM

ব্রুজ অ্যান্ড বাইটস

ত্রিশ অনুর্ধ্ব দুই তরুণের উদ্যোগে ব্রিউজ অ্যান্ড বাইটস মাস দুয়েক আগে যাত্রা শুরু করে ১১২ গুলশান অ্যাভিনিউয়ে। ঢাকার বিকাশমান কফি জগতের অন্যতম নতুন সংযোজন এটি।

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, এখানে কফি বানানো হয় শুধু বিশ্বখ্যাত ইলি কফি বিনস দিয়ে। ইতালি থেকে বাজারজাত হওয়া এই কফি বিক্রি হয় প্রায় একশ চল্লিশটিরও বেশি দেশে!

আরো ভালো কথা, ইলি কফির বাংলাদেশে যারা বিপণন করে থাকেন তারাই কিন্তু খুলেছেন এই ক্যাফে! আর তাই স্বাদ বা গন্ধ নিয়ে বোধ হয় থাকছেনা কোনো সংশয়!  

আনিশ কাপুর কালেকশন

এসপ্রেসো তিরামিসু

অন্দরসজ্জায় আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। রংয়ের ব্যবহারে ইলি কফির সিগনেচার লাল ও সাদার আধিক্য। ইলি কফির বিভিন্ন ধরনের কাপ ও কফির অন্যান্য অনুষঙ্গ এখানে সাজানো আছে, যদিও এই মুহূর্তেই তা বিক্রির জন্য নয় বলে জানা গেল। তবে, এর মধ্যে বিলেতের প্রখ্যাত ভাষ্কর আনিশ কাপুরের কালেকশন থাকাটি একটু চমকপ্রদই বলতে হয়।

যে পেয়ালাতে আসবে আপনার ‘এসপ্রেসো’ বা ‘কাফে লাতে’- তার ডিজাইনও কিন্তু ইলি কোম্পানিরই করা। আর অন্যতম কর্ণধার আদিল আহমেদ দাবি করলেন ‘এসপ্রেসো তিরামিসু ঢাকার কোথাও পাবেন না’। কথার ফাঁকেই আবার জানা গেল আহমেদ আমাদের বিদ্রোহি কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি!

হট ও কোল্ড মিলে ১৬টি ভিন্ন স্বাদের কফি মিলছে এখানে। ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পড়বে প্রতি কাপ কফির দাম। এই সাইফুল্লাহ আবার বেশ ক’বছর বারিস্তা হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকার একটি কফি শপে।

ব্রুজ অ্যান্ড বাইটস স্ট্রবেরি চিজ কেইক

ব্রুজ অ্যান্ড বাইটস

দুই স্লাইস আম দিয়ে তৈরি এখানকার ম্যাংগো পাই খেলে এর স্বাদে পাশে থাকা বন্ধু আথবা বান্ধবীকে ভুলে যাওয়ার জোর সম্ভবনা থাকতে পারে!সাবধান থাকা ভালো! এখানকার পিৎজা হবে থিন ক্রাস্টের, অর্থাৎ শুদ্ধ ইতালিয়ান ঘরানার।     

বসার ব্যবস্থা আছে প্রায় ৪০ জনের। এক দিকে সোফায় যেমন বসতে পারবেন আবার শপের বারান্দায় পাতা টুলে বসে কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে দেখতে পারেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড গো বাই’।

ব্রোনিয়া ক্যাফে অ্যান্ড গ্যালারি

মাস ছয়েকের একটু বেশি আগে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এর যাত্রা শুরু। কফির সঙ্গে শিল্পকর্মকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এখানে। অন্যতম কর্ণধার কাজী মোসাদ্দেকুর রহমান নিজেই পড়াশোনা করেছেন শিল্পকলা বিষয়ে। জানান অন্দরসজ্জার পরিকল্পনাও তারই মস্তিষ্কপ্রসূত।   

রহমান বলেন, ‘ত্রিশটিরও বেশি চিত্রকর্ম আছে এই ক্যাফেতে’।

ব্রোনিয়া ক্যাফের ক্যাপুচিনো

ব্রোনিয়া ক্যাফে অ্যান্ড গ্যালারি

কনকচাপা চাকমার মতো শিল্পীর ছবিও আছে এখানে। সম্প্রতি নেপালের একদল শিল্পীর চিত্রও ঠাঁই করে নিয়েছে। পাহাড়কে বিষয়বস্তু করে আঁকা বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম চোখ এড়ালোনা।      

হুসেইন মোহাম্মদ ফারুক নামের এক চিত্রশিল্পী এখানে প্রায়ই অতিথিদের জন্য ‘পোট্রেইট’ করেন। রহমানের দাবি, ‘দেশে এটি প্রথম জায়গা যেখানে কফি ও শিল্পকর্মকে পাশাপাশি রাখা হয়েছে।’ 

আসা যাক কফির কথায়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিনস দিয়ে বানানো হয় এখানকার কফি। এখন ব্যবহার করা হচ্ছে স্টারবাকসের কয়েকটি রোস্টিং। ক্যাপুচিনোর কাপে গন্ধের সঙ্গে কফি আর্টও মন্দ মিলবেনা এখানে।   

বেশ কয়েক ধরনের খাবার মিললেও যেটি বিশেষ ভালো লাগলো তা হলো গ্রিল্ড চিকেন স্যান্ডউইচ। চিকেনের ওপর-নিচে চিজ থাকায় স্বাদটি জিভে মৃদু ধাক্কা দেবে বেশ চটজলদি!   

বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যাফের পাশের একটি কক্ষে একেবারেই বিনা খরচায় সিনেমা দেখার বন্দোবস্তও রয়েছে। এর মধ্যে একদিন আবার বরাদ্দ রাখা হয় শিশুদের নিয়ে সিনেমার জন্য।   

কাচেঘেরা কফিশপ আর রেস্তোরাঁ দেখে অভ্যস্ত যারা, তিন তলায় পুরোপুরি চারদেয়ালে ঘেরা ক্যাফেটি দেখে অবাকই হতে পারেন।

হাতে ঘন্টা দুয়েক সময় থাকলে দেয়ালে ঝোলানো চমৎকার সব শিল্পকর্মের পাশে বসে একটি বই হাতে নিয়ে কফির ‘মাতাল’ করা মোহনীয় ঘ্রানে হারিয়ে যেতে বোধ হয় খারাপ লাগবেনা!

চাইলে এখানে ঢু মারা যাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা অবধি। ৫২ জন বসতে পারবেন ক্যাফেতে, আর সিনেমা দেখার অংশে আছে ৪২টি চেয়ার।

ঠিকানা:  ৬৮ গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা