উকুন তাড়ান

চুলের বিরক্তিকর কিছু সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল উকুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর নিয়মিত গোছল করলে উকুনের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2014, 10:45 AM
Updated : 23 August 2014, 10:45 AM

উকুনের কারণ ও রেহাই পাওয়ার উপায় নিয়ে জানিয়েছে মালিবাগ সিটি মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরীয়ার শরীফ।

উকুন হওয়ার কারণ

আসলে অপরিচ্ছন্নতাই উকুন হওয়ার প্রধাণ কারণ। ঠিকমতো গোছল না করলে বা চুল নিয়ম মতো পরিষ্কার না করলে উকুন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাছাড়া উকুন ছোঁয়াচে। একজনের মাথায় উকুন হলে তা পাশাপাশি অন্যের শরীরের ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্যের ব্যবহৃত চুলের ব্রাশ বা চিরুণি, তোয়ালে, টুপি ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে উকুন ছড়াতে পারে।

আবার চুল পরিষ্কার করা হলেও যদি ঠিকমতো শুকানো না হয় বা ভেজা চুল বেঁধে রাখার অভ্যাস থাকে তাহলেও উকুন হতে পারে।

ডা. শরীফ বলেন, “উকুন বেশি হলে এবং চুলকানোর পরিমাণ বেড়ে গেলে তা থেকে মারাত্বক ক্ষত হতে পারে। এবং সেই ক্ষত থেকে রোগ সংক্রমণ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উকুনের জীবাণু থেকে রোগ সারা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতি করতে পারে।”

উকুন তাড়ানোর উপায়

“উকুন তাড়ানোর জন্য কার্যকর একটি ওষুধ হলো পারমিথ্রিন।” বললেন, ডা. শাহারিয়ার শরীফ।

এই ওষুধ ব্যবহারবিধি সম্পর্কে ডা. শরীফ বলেন, "পারমিথ্রিন নারিকেল তেলের সঙ্গে ১:৫ অনুপাতে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। এভাবে সাতদিন অন্তর আবারও ব্যবহার করতে পারেন। দু’বার ব্যবহারেই উকন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই সাত দিনের বিরতিতে বাজারে পাওয়া যায় এমন উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়।"

পারমিথ্রিন ছাড়াও ওষুধের দোকানে বিভিন্ন ধরনের উকুন নাশক ওষুধ পাওয়া যায়, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে এ ওষুধ এবং উকুননাশক শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। নইলে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে।

শিবানিজ অ্যারোমা বিউটি সেলুনের কর্ণধার, শিবানি দে উকুন থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু ঘরোয়া উপায় জানান।

* যাদের উকুনের সমস্যা বেশি তারা নিয়ম করে, চুল আঁচড়িয়ে উকুন ফেলার চেষ্টা করুন।

* ১০০ মি.লি. অলিভ অয়েলের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ গ্রাম তামাক পাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এর সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ ফোঁটা নিমের তেল এবং ১ চিমটি লবঙ্গগুঁড়া মিশিয়ে ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিতে হবে।

এই তেলটি প্রতিদিন রাতে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে, সকালে যে কোনো উকুন নাশক শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে টানা ১৫ দিন ব্যবহার করলে উকুন দূর করা সম্ভব।

* শ্যাম্পুর বোতলে ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা টি-ট্রি অয়েল মিশিয়ে রাখতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় ঝাঁকিয়ে ব্যবহার করলে উকুনের প্রকোপ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে।

* ন্যাপথলিন গুঁড়া করে নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এভাবে উকুন কমে আসবে।

সাবধানতা

উকুন মারতে অনেকে মাথায় অ্যারোসল বা কিটনাশক স্প্রে করেন। এরকম খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

এই সর্ম্পকে ডা. শরীফ বলেন, "এটা কখনোই করা উচিত নয়। কারণ কিটনাশক এক ধরনের বিষ। যা পোকামাকড় মারতে ব্যবহার হয়। এই কিটনাশক ত্বকের জন্য যেমন ক্ষতিকারণ তেমনি বিষাক্ত বলে স্বাসপ্রশ্বাসের জন্যেও ক্ষতিকর।"

শিবানি দে পরামর্শ দেন, যাদের চুলে উকুন আছে, তাদের টাওয়াল, গামছা, চিরুনি অন্যদের ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। তাছাড়া তাদের টাওয়াল এবং বালিশের কভার প্রতিদিনই গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।

ভেজা চুল বেঁধে রাখা উচিত নয়। আর নিয়ম মতো চুল পরিষ্কার করা জরুরি।

প্রতীকী ছবির মডেল: চৈতি।

ছবি: ই স্টুডিও।