হ্যাঁ, কাদামাটি, বাঁশ ও অনান্য অনেক ‘প্রাকৃতিক’ নির্মাণ সামগ্রীর মিশেল দিয়ে রীতিমতো গ্রামীণ আবহ তৈরি করা হয়েছে সই থ্রিতে। আধুনিকতা আর চাকচিক্যর ‘প্রতিযোগিতা’ যে রাস্তার নিত্যসঙ্গি, সেখানেই উল্টোপথে এই রেস্তোরাঁর শুরু ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে।
তবে এই শুরু নাকি ছিল প্রায় বছরজুড়ে পরিশ্রমের ফসল, জানান অন্যতম কর্ণধার শাহেদ হোসেন। হোসেন জানান, চারজন দেশি স্থপতির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন এক স্কটিশ ভদ্রমহিলাও। তিনিও পেশায় একজন স্থপতি।
কয়েকটি ভাগে বিভক্ত এই রেস্তোরাঁ। ঢুকতেই চোখে পড়বে মাটির গামলায় রাখা কচুরিপানা। ঠিক তার পেছনেই বসার জন্য দুটি টেবিল রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে হওয়ায় মাথার উপরে পাবেন ছাতা। এখান থেকে দুটি জিনিস বেশ লাগবে। একপাশের কাবাব বানানোর সুঘ্রাণ আর রেস্তোরাঁটির দেয়ালে আঁকা গ্রামীণ মোটিফের সহজাত নকশা। প্রকৃতির প্রেরণা থেকে উৎসারিত এই সরল নকশাও তো আবার আমাদের জীবনের আধুনিকতার ধাক্কায় হারিয়ে যাওয়ার জোগাড়।
পাশেই আবার এই রেস্তোরাঁর একমাত্র অংশ যেখানে আধুনিকতাকে ‘একঘরে’ করা হয়নি। বড়জোড় ১৫-২০ বসতে পারবেন এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অংশে। একটি অংশে অবশ্য একেবারে জুতা-স্যান্ডেল খুলে যোগাসনের মতো বসতে পারবেন নরম সোফায়।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলা ওঠার সময় বাঁদিকের দেয়ালটি যে মাটির তৈরি সেটা বোধহয় টেরই পাবেন না। মাটির সঙ্গে মেশানো হয়েছে স্টোন চিপস। উপরেও বসার ব্যবস্থা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। একপাশে খোলা বারান্দা, অন্যদিকে শুধুমাত্র বাঁশের তৈরি চিকের আবরণ দিয়ে ঢাকা। এই পাশে তবু মাথার উপর ছাদ আছে। অন্য অংশ একবারেই উন্মুক্ত। সেখানে আছে কংক্রিটের তৈরি চেয়ারের ব্যবস্থা। অনেকটা নদীর তীরের খাবারের দোকানগুলোর কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো! পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায় ‘ব্যাক টু দ্য নেইচার’ মন্ত্রই জপ হয়েছে রেস্তোরাঁটি জুড়ে।
দেয়ালে দেয়ালে এই ‘কুঁড়েঘর’ রংয়ের রহস্যটিও থলে থেকে বের করে দিলেন হোসেন। “লাল রংয়ের মাটি গুলিয়ে তাতে মেশানো হয় এক ধরনের আঠা, তারপর দিতে হয়েছে আগুনের তাপ।” বলেন তিনি। আরও দাবি করেন, এই রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত সমস্ত চেয়ার টেবিল রিসাইকেলড কাঠ দিয়ে বানানো।
মেন্যুতে ভারতীয় খাবারের আধিক্য বেশি। ‘বিলাত ফেরত’রা আবার চমকে উঠতে পারেন ‘চিকেন টিক্কা মাসালা’র নাম দেখে! আছে কিছু কন্টিনেন্টাল খাবারও। তবে বিশেষ করে বলতেই হয় এখানকার কাবাব প্ল্যাটারের কথা। রেশমি, আফগান মালাই, বিফ শিক ও মাটন বটি কাবাব, এ সবই মিলবে একসঙ্গে একই প্লেটে। ৫৫০ টাকায় পাওয়া যাবে এই খাবার। আস্ত একটি গ্রিল্ড ভেটকি মাছ মিলবে ৭৩০ টাকায়, জিভে জল তো ফ্রি! চমৎকার রংয়ের পানীয় ব্লু জ্যাজ-এর দাম পড়বে ১৭০ টাকা।
এখানে বসার ব্যবস্থা আছে প্রায় ১০০ জনের।
খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
দোতলার ছাদ দেওয়া হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন দিয়ে। ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’র মতো ‘ঝুম’ বৃষ্টির দিনে টিনের ছাদে জলফোটা আছড়ে পড়ার আওয়াজ ছোটবেলার ‘ফেলেআসা’ গ্রামের বাড়ির কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। নিদেনপক্ষে চারপাশ থেকে আসা জলের ঝাপটায় শরীরে জাগতে পারে শিহরণ। আর এমন আবেশে উদরপূর্তি করতে গিয়ে আধুনিকতাকে একটু দূরেই রাখুন না, থাকুক না মোবাইলটি পকেটে বা ব্যাগে!
(এখানে ওয়াইফাই ব্যবস্থাই রাখা হয়নি!)
ছবি: মামুনুর রশীদ শিশির ও সই থ্রির সৌজন্যে