ঢাকার ইকেবানা

ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অযাচিত কিছু নয়। সৌন্দর্যের প্রতি এক ধরনের জৈবিক ভালোবাসা থেকেই মানুষ সকল 'ভালো'র পুজারি হয়ে বেড়ে ওঠে। ফুলের প্রতি মানুষের অমোঘ আকর্ষণ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে 'ইকেবানা'।

শরীফ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 11:53 AM
Updated : 20 August 2014, 11:53 AM

বাংলাদেশে অবশ্য এর প্রচলনটা খুব একটা নতুন না হলেও, প্রচার ও প্রসারের অভাবে মাত্রই পেখম মেলতে শুরু করেছে ইকেবানার যাত্রা। ঠিক ৪০ বছর আগে ঢাকায় ডা. এ.কে.এম. মোয়াজ্জেম হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় একবারেই আঁটোসাঁটো পরিসরে ইকেবানার পথচলা শুরু হয়।

আর ৫ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন।

নামের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও, ইকেবানার ব্যাপ্তি বা পরিধি সম্পর্কে হয়তোবা অনেকেরই জানা নেই।

মূলত তাজা ফুল নিয়ে গাছের ডাল, লতা-পাতার সঙ্গে বিশেষ আঙ্গিকে সাজিয়ে রাখার এক জাপানি শিল্পের নাম ইকেবানা। যদিও ইকেবানার জন্ম ইতিহাস নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তাই বা হবে না কেন? এমন কোন জাতি পাওয়া যাবে, যারা সামষ্ঠিকভাবে ফুল ভালোবাসে না!

তবে সে যাই হোক, শেষ প্রায় সাড়ে ছয়শো বছর ধরে জাপানিরাই লালন-পালন ও বিস্তার ঘটিয়েছে এই অপরূপ শিল্প প্রদর্শনীর। অনেক জায়গাতেই উল্লেখ আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানসিক বিষন্নতা কাটাতে অনেক আমেরিকান সৈন্যই, পরিবারের সঙ্গে জাপান থেকে শিখে যাওয়া, এই বিশেষ ব্যাকরণে ফুল সাজাতে শুরু করেন প্রশান্তি লাভের আশায়। বর্তমান বিশ্বের প্রক্ষাপটে যুদ্ধরত লাখো মানুষের জন্য এমন ইতিহাস অনুপ্রেরণাই বটে।

ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তন ও গ্যালারি ৬-এ, ১৭ ও ১৮ অগাস্ট অনুষ্টিত হল দেশের ইতিহাসের প্রথম ইকেবানা ফেস্টিভাল। প্রথম বলতেই হচ্ছে, কেননা এর আগে নানানরকম আয়োজন হলেও, ইকেবানার আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন এবারই প্রথম এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দু’দিনের এই আয়োজনে প্রদর্শনীর পাশাপাশি, আগ্রহীদের জন্য ছিল কর্মশালাও পরিচালনা করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা।

কর্মশালায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোনে ছবি তুলছিলেন – সিমরানা চৌধূরী, ফাহমি ফেরদৌস ও আফরা ইসলাম। কথা হল মাত্রই কলেজ পাশ করা এই তিন তরুণীর সঙ্গে। জানালেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের এর প্রতি আগ্রহ থেকেই এই বিশেষ শিল্প মাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় তাদের। তবে সবারই যে সমান আগ্রহ থাকবে এমনটাও মনে করেন না তারা। যেহেতু পুরো বিষয়টিই অত্যন্ত নান্দনিক, তাই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়তে খুব একটা সময় লাগবে না বলেই বিশ্বাস তাদের।        

দু’দিনেই দর্শক আর কর্মশালায় অংশ নেওয়া মানুষের আগ্রহ দেখে অভিভূত বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রাজিয়া জাহের। এমন এক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের কাছে ইকেবানাকে আরও বেশি পরিচিত করে তোলার পরিকল্পনাটা খুব বেশি দিনের নয়।

তাড়াহুড় করে এমন আয়োজন হলেও, মানুষের সাড়া পেয়ে সংগঠনের আর সবার মতোই বেশ খুশি তিনি। জানালেন, ১৯৯৩ সালে যখন ল্যান্ডস্কেপিংয়ের পাশাপাশি যখন ইকেবানার চর্চা শুরু করেন, তখন বিষয়টা খুব একটা পরিচিত ছিলো না। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থাপনার ল্যান্ডস্কেপিং-এর সময় নিজের কাজে ইকেবানাকে জায়গা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন, শহুরে হাঁপিয়ে উঠা জীবনেও ফুল-গাছ আর প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষকে এখনও প্রশান্তি এনে দেয়।

সেজন্যই দেশব্যাপী বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ইকেবানা প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলবার পরিকল্পনা করছেন তারা।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি ইকেবানা। তবে এর মাঝেও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। একক ও প্রকৃতির সঙ্গে যুগপৎভাবে গড়ে উঠা শিল্পমাধ্যম হওয়ায় ইকেবানা, মানুষের মনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারে।

আর যখন সারা বিশ্বই একটা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য সামষ্ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন এমন একটি চর্চা, নিঃসন্দেহে মানুষকে প্রকৃতির আর কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ