বাংলাদেশে অবশ্য এর প্রচলনটা খুব একটা নতুন না হলেও, প্রচার ও প্রসারের অভাবে মাত্রই পেখম মেলতে শুরু করেছে ইকেবানার যাত্রা। ঠিক ৪০ বছর আগে ঢাকায় ডা. এ.কে.এম. মোয়াজ্জেম হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় একবারেই আঁটোসাঁটো পরিসরে ইকেবানার পথচলা শুরু হয়।
আর ৫ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন।
নামের সঙ্গে পরিচিতি থাকলেও, ইকেবানার ব্যাপ্তি বা পরিধি সম্পর্কে হয়তোবা অনেকেরই জানা নেই।
মূলত তাজা ফুল নিয়ে গাছের ডাল, লতা-পাতার সঙ্গে বিশেষ আঙ্গিকে সাজিয়ে রাখার এক জাপানি শিল্পের নাম ইকেবানা। যদিও ইকেবানার জন্ম ইতিহাস নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তাই বা হবে না কেন? এমন কোন জাতি পাওয়া যাবে, যারা সামষ্ঠিকভাবে ফুল ভালোবাসে না!
ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তন ও গ্যালারি ৬-এ, ১৭ ও ১৮ অগাস্ট অনুষ্টিত হল দেশের ইতিহাসের প্রথম ইকেবানা ফেস্টিভাল। প্রথম বলতেই হচ্ছে, কেননা এর আগে নানানরকম আয়োজন হলেও, ইকেবানার আন্তর্জাতিক সংগঠনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশন এবারই প্রথম এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দু’দিনের এই আয়োজনে প্রদর্শনীর পাশাপাশি, আগ্রহীদের জন্য ছিল কর্মশালাও পরিচালনা করেছেন সংগঠনটির সদস্যরা।
কর্মশালায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোনে ছবি তুলছিলেন – সিমরানা চৌধূরী, ফাহমি ফেরদৌস ও আফরা ইসলাম। কথা হল মাত্রই কলেজ পাশ করা এই তিন তরুণীর সঙ্গে। জানালেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের এর প্রতি আগ্রহ থেকেই এই বিশেষ শিল্প মাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় তাদের। তবে সবারই যে সমান আগ্রহ থাকবে এমনটাও মনে করেন না তারা। যেহেতু পুরো বিষয়টিই অত্যন্ত নান্দনিক, তাই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়তে খুব একটা সময় লাগবে না বলেই বিশ্বাস তাদের।
দু’দিনেই দর্শক আর কর্মশালায় অংশ নেওয়া মানুষের আগ্রহ দেখে অভিভূত বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রাজিয়া জাহের। এমন এক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের কাছে ইকেবানাকে আরও বেশি পরিচিত করে তোলার পরিকল্পনাটা খুব বেশি দিনের নয়।
সেজন্যই দেশব্যাপী বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ইকেবানা প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলবার পরিকল্পনা করছেন তারা।
অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশে এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি ইকেবানা। তবে এর মাঝেও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। একক ও প্রকৃতির সঙ্গে যুগপৎভাবে গড়ে উঠা শিল্পমাধ্যম হওয়ায় ইকেবানা, মানুষের মনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে আসতে পারে।
আর যখন সারা বিশ্বই একটা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য সামষ্ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন এমন একটি চর্চা, নিঃসন্দেহে মানুষকে প্রকৃতির আর কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ছবি: ফায়হাম ইবনে শরীফ