রূপ জিজ্ঞাসা

বিভিন্ন সমস্যার সমস্যা নিয়ে পাঠক জানতে চান। বেশিরভাগ সমস্যাই একই রকম। পাঠকের করা প্রশ্ন থেকে বাছাই করে সমস্যার সমাধান দেওয়া হল।

মনি ইয়াছিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2014, 02:42 AM
Updated : 17 August 2014, 02:42 AM

সৌন্দর্য বিষয়ে এইসব সমস্যা প্রায় সবারই একরকম। তাই পাঠক নিজের সমস্যার সঙ্গে মিলে গেলে, জেনে নিন সমাধান।

আর সমস্যার সমাধান দিয়েছেন আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ।

অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, কম বয়সে চুল পড়ে যাচ্ছে। অনেকের চুল খুব পাতলা ও চুল পড়ার সমস্যা আছে। কারও কারও সামনের দিকের চুল কমে যাচ্ছে। দেখতে খারাপ লাগে। কী করলে এই সমস্যা ঠিক হবে?

সমাধান: চুল খুব বেশি শক্ত করে বাঁধবেন না। সব সময় এক জায়গায় সিঁথি করবেন না। অনেক সময় চুল শক্ত করে বাঁধলে এবং এক জায়গায় বেশিদিন সিঁথি করলে, সিঁথির কাছটা মোটা হয়ে যায়। আর শক্ত করে বাঁধার ফলে চুল ঝরতে থাকে। ভেজা চুল কখনও আঁচড়াবেন না।

প্রতিদিন হার্বাল তেল মাথায় মালিশ করুন। হার্বাল তেল নিজে বানিয়ে নিতে পারেন। ১০০ গ্রাম অলিভ অয়েল ১ গ্রাম শুকনা আমলকি, ১ গ্রাম মেথি গুঁড়া করা, ১ মুঠ দূর্বাঘাস, ১০০ গ্রাম নারকেল তেল সব একসঙ্গে মিশিয়ে ফুটিয়ে অর্ধেক করে ছেকে রেখে দিন। এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করুন। এরপর হাল্কা হাতে মালিশ করুন। এরপর কোনো হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ধীরে ধীরে চুল পড়া কমে যাবে।

যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের উপর তাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ: মুখে লাবন্যতা কমে যাচ্ছে চোখে ও ঠোঁটের চারপাশে বলিরেখা দেখা দিচ্ছে। সমাধান কী?

সমাধান: সাধারনত শুষ্ক ত্বকে বয়সের ছাপ বেশি তাড়াতাড়ি পড়ে। যদি ত্বক স্বাভাবিক বা শুষ্ক হয় তবে প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার করার পর নারিশিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে ক্রিমের বদলে আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

প্রতিরাতে খুব ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। মুখে কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল হাতে নিয়ে দুইহাত একসঙ্গে করে ঘষে এরপর সারা মুখে লাগিয়ে নিন। চোখের চারপাশ এবং ঠোঁট বাদ দিবেন না। হাল্কা হাতে মালিশ করুন।

৫ মিনিট চোখের চারপাশ খুব হাল্কা হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করুন। রিং ফিংগার দিয়ে এরপর ঠোঁটের চারপাশও মালিশ করুন। এভাবেই ১ ঘন্টা রেখে দিন। তারপর ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ মুছে নিন। আর সব সময় এসপিএফ সমৃদ্ধ সান্সক্রিন ব্যবহার করে রোদে বের হবেন। এভাবে কিছুদিন করলেই সমস্যার সমাধান হতে শুরু করবে।

সমস্যা নখ খুব পাতলা। বড় করতে পারেন না, কিছুদিন পরপর ভেঙে যায়।

সমাধান: সাধারণত ক্যালশিয়ামের অভাবে এই সমস্যা হয়। সবসময় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় ভালো মানের খেজুর। প্রতিদিন ৫-৬টা খেজুর খাবার তালিকায় রাখুন।

এছাড়া একবাটি পানিতে ১ টুকরা ফিটকিরি ফেলে দিন। কিছুক্ষণ ভিজতে দিন। এরপর হাতের নখগুলো এই পানিতে চুবিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এভাবে প্রতিদিন করুন। একদিন করার পরই দেখবেন নখ একটু শক্ত হয়ে গেছে। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলে নখ ভাঙা সমস্যা থাকবে না।

কিশোরীদের প্রায় সবারই একই সমস্যা, তা হল ব্রণ। কী করলে ব্রণ ভালো হবে?

সমাধান: ব্রণের সমস্যা থাকলে ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না এবং দানাদার স্কার্ব একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্রণ ভালো করার জন্য নিমপাতা অল্প আঁচে পানি দিয়ে ফুটান। ঠান্ডা করে পানি ছেকে নিন। এবার এই পানির সঙ্গে কয়েক চামচ ভিনেগার মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। প্রতিদিন দুই তিনবার এই পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।

এছাড়া রাতে লবঙ্গ ও রসুন ভর্তা করে শুধুমাত্র ব্রণের মুখগুলোর উপর লাগিয়ে রাখুন। সকালে দেখবেন ব্রণগুলো একটু ছোট হয়ে আসছে। এভাবে প্রতিদিন করুন। আশা করা যায় ব্রণের সমস্যা কমে যাবে। এভাবে সমস্যার সমাধান না হলে ভালো মানের পার্লারে গিয়ে অ্যারোমা থেরাপি নিন।

যাদের চুল রুক্ষ তারা মোলায়েম করার পদ্ধতি জানতে চেয়েছেন। এছাড়া বাড়িতে হেয়ার স্পা করার উপায় জানতে চেয়েছেন অনেকে।

সমাধান: চুলের সঠিক যত্ন না নেওয়ার জন্য চুল রুক্ষ হয়ে যায়। সময় পেলে চুলে হার্বাল অয়েল মালিশ করুন। সম্ভব হলে তোয়ালে দিয়ে স্টিম নিন। এক ঘন্টা রেখে ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এরপর কন্ডিশনিং করুন চুলের গোড়া বাদে। এভাবেই চুল ফিরে পাবে তার প্রাণ।

বাড়িতেও হেয়ার স্পা করা সম্ভব। একটা ডিম ফেটিয়ে এর সঙ্গে ১ চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল, এক টেবিল-চামচ মধু, এক চা-চামচ লেবুল রস ও কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে নিন।

শ্যাম্পু করা চুলে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এই মিশ্রণ লাগান। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে নিন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনিং করুন। এভাবে সপ্তাহে একদিন বাড়িতে বসে হেয়ার স্পা করতে পারেন। এতে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে, হয়ে উঠবে সুন্দর ঝলমলে।

নাকের চারপাশে অনেক ছিদ্র দিন দিন যেন বেড়ে যাচ্ছেএই জন্য সব সময় নাকের চারপাশটা তেলতেলে থাকেযা কিছুই লাগাই কিছুক্ষ পর কালো হয়ে যায়। সমাধান কী?

সমাধান: মুখ ধোয়ার পরপরই টোনিং করতে ভুলবেন না। ত্বক মসৃণ টানটান এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য টোনিংয়ের বিকল্প নেই। ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে ও পুষ্টি জোগাতে লোমকূপ বন্ধ রেখে ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে টোনিং খুব ভালো কাজ দেয়। সব থেকে ভালো টোনার হচ্ছে, বরফ ঠান্ডা পানি। আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যালকোহল মেশানো টোনার মানে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট উপকারি। শুষ্ক এবং সেন্সেটিভ ত্বকের জন্য দরকার ঠান্ডা গোলাপজল।

মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে টোনিং করে নিন আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী। তাহলেই এই সমস্যা সমাধান হবে আশাকরি।

ব্রণের দাগ উঠানোর উপায় কী?

সমাধান: এখন ব্রণের সমস্যা যদি না থাকে বা, কমে গিয়ে থাকলে চালের গুঁড়ার সঙ্গে টকদই মিশিয়ে মুখ ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর ভেজা হাতে ক্লক ওয়াইজ ও অ্যান্টিক্লক ওয়াইজ ম্যাসাজ করুন। এরপর বেশি করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এছাড়া অর্জুন গাছের ছাল পাওয়া যায় সেটা বেটে ব্রণের দাগের উপর রাতে লাগিয়ে রাখুন। সকালে বেশি পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া ব্রণের দাগ ভালো করার উন্নত মানের কিছু ক্রিম পাওয়া যায়। সেগুলোও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশাকরি উপকার পাবেন।

চুলে খুব খুশকি। ভিষণ চুলকায়। অ্যান্টিডেন্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করেও কোনো উপকার হয়নি। কী করলে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

সমাধান: একদিন পর পর শ্যাম্পু করুন। তারপর খুব ভালো করে পানি দিয়ে শ্যাম্পু ধুয়ে ফেলুন। অনেক সময় শ্যাম্পু ভালোভাবে পরিষ্কার না করার কারণেও খুশকি হয়। প্রতিদিন ২ চা-চামচ লেবুর রস, ১ চা-চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে পুরো মাথায় লাগান। খেয়াল রাখবেন মাথা যেন শুকনা থাকে।

১ ঘন্টা রেখে রিঠাযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রিঠাযুক্ত শ্যাম্পু হাতের কাছে না পেলে একমুঠ রিঠা গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে চটকে নিলেই হার্বাল শ্যাম্পু তৈরি হয়ে যাবে। এটা দিয়েই চুলে ফেনা করে শ্যাম্পু করুন।

এতে চুলে একটা চকচকে ভাব আসবে এবং খুশকিও কমে যাবে। এভাবে একদিন পর পর কয়েকদিন করলেই খুশকি দূর হবে আশা করি।

কাজল লাগালেই চোখ চুলকাতে থাকে। পানি পড়ে। তারপর কাজল নষ্ট হয়ে যায়। সমাধান কী?

সমাধান: ভালো ও উন্নত মানের কাজল ব্যবহার করুন। ভালোমানের ওয়াটারপ্রুফ কাজল ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন। এতে চোখের পানি বা অন্যকোনো কারণে কাজল ঘেটে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

অনেক সময় কারও কারও ক্ষেত্রে কাজলে এলার্জি থাকে। সেক্ষেত্রে চোখের নিচের পাতায় কাজল না লাগিয়ে আইলাইনারেও কাজলের কাজ সারতে পারেন।

অনেকেরই হাত-পায়ের পশম বড়। ওয়াক্সিং করাতে ভয় পান, কারণ এতে নাকি পশম আরও বড় বড় হয়ে যায়। এর পরিবর্তে হেয়ার রিমুভাল ক্রিম ব্যবহার করা উচিত কি না?

সমাধান: বড় বড় লোম ওয়াক্সিং করেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ওয়াক্সিং করাতে প্রথম একটু ব্যাথা লাগবে তবে এতে ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না। ওয়াক্সিং করালে আরও বড় বড় পশম বের হবে, এটা একেবারেই ভুল।

হেয়ার রিমুভাল থেকে ওয়াক্সিং নিরাপদ। এটা মাসে একবার করতে হয়। ধীরে ধীরে পশমের বৃদ্ধি কমে আসবে। তখন মাসে একবার না করালেও হবে। ওয়াক্সিং করাতে করাতে ত্বকের ডেড সেল বা  মরা চামড়াও অনেকটা কমে আসবে। তাই এটাই সব থেকে ভালো পদ্ধতি।

চন্দন ব্যবহার করলে কী উপকার পাওয়া যায়?

সমাধান: চন্দন হল রোদে পোড়া ত্বকের ঘরোয়া দাওয়াই। এর ভেতর সান্সস্ক্রিনের গুণ আছে। আর সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।

নিয়মিত চন্দনের ব্যবহারে ত্বক ফিরে পায় তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা ও সতেজভাব। তবে চন্দন অনেক ধরনের হয়। অনেক সময় নিম্ন মানের চন্দনের গুঁড়া পাওয়া যায়। সেটা কোনো উপকারে আসবে না।

দামী চন্দনকাঠ শিল পাটায় ঘষে ঘষে ব্যবহার করতে হয়। ভিজিয়ে একটু ঘসলেই পেস্ট বের হয়। এই পেস্ট পরিষ্কার ত্বকের উপর ব্যবহার করুন। ব্রণ থাকলে ব্রনের দাগের উপর লাগান, অথবা স্ক্রাবের সঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাবিং করুন। এটা ব্যবহারে ত্বকে মোলায়েমভাব ফিরে আসবে।

* রূপচর্চা ও সৌন্দর্য বিষয়ক যে কোনো পরামর্শ ও সমস্যা আপনার বয়স, ত্বকের ধরণসহ বিস্তারিত লিখে আমাদের ফেইসবুক পেইজে https://www.facebook.com/pages/lifestylebdnews24com/628202540574635 ইনবক্স করতে পারেন।

সমাধানসহ প্রতিবেদন সহকারে প্রকাশ করা হবে।