যৌতুকের শাস্তি

নারী নির্যাতনের অপরাধগুলো কঠোরেভাবে দমনে উদ্দেশ্যে ২০০০ সালে প্রণয়ন করা হয়, 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০'।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2014, 11:21 AM
Updated : 12 August 2014, 11:42 AM

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার অ্যাট ল' রুমিন ফারহানা।

যৌতুকের আইন দিয়ে যেসব অপরাধগুলো দমনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা হল: যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণের জন্য মৃত্যু, নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌন পীড়ন, ইত্যাদি।

নারী নির্যাতনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি কারণ হল যৌতুক। সাধারণভাবে যৌতুক বলতে বোঝায় কনেপক্ষের কাছে বরপক্ষের অর্থসামগ্রী বা, মূল্যবান কোনো সম্পদ দাবী।

তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ধারা ২ এর অনুচ্ছেদ (ঞ)'তে যৌতুকের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে

যৌতুক অর্থ:

(ক) কোনো বিবাহের বর বা, বরের পিতা বা, মাতা বা, প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সঙ্গে জড়িত বর পক্ষের অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত বিবাহের সময় বা তৎপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বিবাহের পণ হিসেবে কনে পক্ষের নিকট দাবীকৃত অর্থ সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ;

অথবা,

(খ) কোনো বিবাহের কনেপক্ষ কর্তৃক বিবাহের বর, বা বরের পিতা বা মাতা বা প্রত্যক্ষভাবে বিবাহের সঙ্গে জড়িত বরপক্ষের অন্য কোনো ব্যক্তিকে উক্ত বিবাহের সময় বা তৎপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদ।

পরে ২০০৩ সালে এই সংজ্ঞার সামান্য পরিবর্তন এনে যৌতুকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয় এভাবে,

ব্যরিস্টার রুমিন ফারফানা

'বিয়ের সময় বা বিয়ের আগে বা, পরে যে কোনো সময়ে বিয়ের পণ হিসেবে কনেপক্ষ কর্তৃক বরপক্ষকে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত বা, কনেপক্ষের কাছে বরপক্ষ কর্তৃক দাবীকৃত অর্থ, সামগ্রী বা, অন্যবিধ সম্পদ।

অর্থাৎ ২০০৩ এর আগ পর্যন্ত যৌতুক বলতে বোঝানো হত সেই অর্থ-সামগ্রী, যা কিনা বিয়ে স্থির থাকার শর্তে কনেপক্ষের কাছ থেকে বরপক্ষ দাবী করে।

২০০৩ এর সংশোধনের মাধ্যমে যৌতুকের সংজ্ঞাকে আরও প্রশস্ত করে এখন বরপক্ষ কর্তৃক কনেপক্ষের দাবী করা যে কোনো অর্থ সামগ্রী বোঝানো হয়েছে।

যৌতুকের জন্য স্বামী বা স্বামীপক্ষের কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো নারীর মৃত্যু ঘটলে বা, তাকে জখম বা, আহত করা হলে অথবা তার মৃত্যু বা জখমের চেষ্টা করা হলে অপরাধী ব্যক্তি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আর নারীর মৃত্যু না হলে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

যদি যৌতুকের দাবীতে কাউকে মারাত্মক জখম করা হয় তাহলে অপরাধী ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অনধিক ১২ বছর কিন্তু অনুন্য ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

যৌতুকের দাবিতে যদি কাউকে সাধারণ জখম বা আহত করা হয়, তাহলে অপরাধী ব্যক্তি সাধারণ জখম করার জন্য অনধিক ৩ বছর কিন্তু অনুন্য ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, ধারা ১১ (ক) এর বিধানানুযায়ী যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি হিসেবে মৃত্যদণ্ডই একমাত্র শাস্তি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে মৃত্যুদণ্ডের নিচে কোনো শাস্তি প্রদানের কোনো অবকাশ নাই।

যৌতুকের ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে— বিয়ের সময়, বিয়ের আগে অথবা পরে যে কোনো সময়ে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত বা, দাবীকরা অর্থ-সামগ্রী বা, সম্পদ যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এই আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটনে জড়িত মূল এবং প্রত্যক্ষভাবে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে না যদি

(ক) তাকে মুক্তি দেওয়ার আবেদনের উপর অভিযোগকারী পক্ষকে শুনানীর সুযোগ দেওয়া না হয়, এবং

(খ) তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ আছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হন।

অপরাধী ব্যক্তি যদি নারী বা শিশু হয় অথবা শারীরিকভাবে অসুস্থ কোনো ব্যক্তি হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার কারণে ন্যায়-বিচার বিঘ্নিত হবে না— এই মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যাবে।

যৌতুকের অপরাধে অপরাধী কোনো ব্যক্তির বিচার কেবলমাত্র ২৬ ধারার অধীনে গঠিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হবে।

ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানী শুরু হলে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কার্যদিবসে একটানা চলবে। বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচার কাজ শেষ করবে।

ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া আদেশ, রায় বা আরোপিত দণ্ড দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ উক্ত আদেশ, রায় বা দণ্ডাদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপীল করতে পারবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর অধীন কোনো অপরাধের বিচার চলাকালে যদি ট্রাইব্যুনাল মনে করে, কোনো নারী/শিশুকে নিরাপত্তামূলক হেফাজতে রাখা প্রয়োজন, তবে ট্রাইব্যুনাল উক্ত নারী/শিশুকে কারাগারের বাইরে ও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে সরকারি কর্তৃপক্ষের হেফজতে ও ট্রাইব্যুনালের বিবেচনায় যথাযথ অন্যকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিতে পারবে।