রিমা ও সাহেদ, বিয়ে করেছেন প্রায় পাঁচমাস হতে চললো। বিয়ের পর এবারই প্রথম ঈদ। আর এ নিয়ে দু’জনের মধ্যেই উত্তেজনার কমতি নেই। সবার জন্য উপহার কেনা, ঘর সাজানো সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। তবে রিমা কিছুটা দোটানায় ভুগছেন। কারণ বিয়ের পর প্রথম ঈদ তার কাটাতে হবে শ্বশুর বাড়িতেই। আর এই নিয়ে কিছুটা মন খারাপও তার।
উপরের ঘটনাটি প্রতীকী হলেও, অনেকের জীবনেই এরকম হয়। আর তাই ঈদের সময়টি ভাগাভাগি করে শ্বশুরবাড়ি এবং নিজের বাড়ির মধ্যে কাটানো গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য এড়িয়ে যাওয়া যায়।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজির অধ্যাপক শাহীন ইসলাম বলেন, “এটি পুরোপুরি পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো থাকলে এই সংক্রান্ত জটিলতাগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় সহজেই।”
তিনি বলেন, “আসলে ঈদের প্রস্তুতি তো শুরু হয়ে যায় রোজা শুরুর আগে থেকেই। আর রোজার মাস জুড়েই থাকে ঈদের আমেজ। এই পুরো মাস জুড়েই আমি সমন্বয় করার চেষ্টা করেছি। ঈদের দিনও ভাগাভাগি করে নিয়েছি। প্রথমভাগ যদি আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাই তাহলে পরের ভাগ কাটাবো শ্বশুরবাড়িতে।”
অপুর স্ত্রী সায়মা খান বলেন, “নতুন একটি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারা পুরোপুরি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। নিজের পরিবারকে ‘মিস’ করবো। তবে একেবারেই যে নিজের বাড়িতে যাওয়া হবে না তা নয়, দু’বাড়িতেই সমানভাবে ঈদের সময়টি ভাগ করে নেওয়া হবে।”
রেডিও ফুর্তির সাদিয়া হেদায়েত। সালিম শাদমান পাঠানের সঙ্গে বিয়ের পর এবারই তার প্রথম ঈদ। আর ঈদের দিনটি কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
অধ্যাপক শাহীন ইসলাম মনে করেন এ বিষয়গুলোতে পরিবারের সহায়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে, বিয়ের পর মেয়েরা প্রথম ঈদ পালন করবে শ্বশুরবাড়িতে, এমন ধারনাই প্রচলিত। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবার ছেড়ে ঈদ পালনের বিষয়টি কিছুটা কষ্টদায়ক। আর তাই শ্বশুরবাড়ির সহায়তা থাকা খুবই প্রয়োজন।”
বিপা নূর-এ-নাজিয়া বিয়ে করেছেন বেশ কিছুদিন। এর আগে একটি ঈদ কাটিয়েছেন শ্বশুরবাড়িতে। কাজ করছেন একটি কনসালটেন্সি ফার্মে।
তিনি জানান, দেশে তার মা ছাড়া অন্য কেউ থাকেন না। তাই সময়ের বড় একটি অংশ দিতে হয় তার মা-কে।
ঈদে উপহার দেওয়ার বিষয়গুলোও স্বামী-স্ত্রী মিলে ঠিক করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ঈদে উপহার দেওয়ার বিষয়টিও আমার স্বামী ইমরান আলী ইমামের সঙ্গে বসে ঠিকঠাক করে নিয়েছি। তাছাড়া আমরা জামা-কাপড়ের বাইরে পছন্দের জিনিসগুলো উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
বিয়ের পর প্রথম ঈদ, দু’টি পরিবারের জন্য নতুন এবং সুন্দর অভিজ্ঞতা হতে পারে সহজ কিছু বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে। তাই প্রথম ঈদ কীভাবে কাটাবেন তা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলেই যদি আগে থেকে ঠিক করে নিতে পারেন তাহলে দু’জনের জন্যই সহজ এবং আনন্দময় হয়ে উঠবে ঈদের কয়কটি দিন।