ছুটিতে রাঙ্গামাটি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই লেকের বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট এর জেলা শহর আর আশপাশে সর্বত্রই রয়েছে নানান বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2014, 03:26 AM
Updated : 22 July 2014, 03:50 PM

এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে। তবে বর্ষার সাজ একেবারেই অন্যরূপ। অবসরে তাই সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণে সবার আগে দেখা উচিৎ জেলা শহরের উপজাতীয় জাদুঘর। পুরো জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা মিলবে জাদুঘর থেকে। এটি খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরে বড়দের প্রবেশ মূল্য পাঁচ টাকা ও ছোটদের দুই টাকা।

রাজবন বিহার, রাঙ্গামাটি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাঙ্গামাটির টুক টুক ইকো ভিলেজে পর্যটক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

উপজাতীয় জাদুঘর থেকে কাছেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নানান আচার অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দীপ জুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি। নৌকায় লেক পাড়ি দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়। রাজবাড়ির আঙিনায় পর্যটকদের যেতে বাঁধা নেই।

রাঙ্গামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে, একপাশে রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। এ দুটি বাজারেই মূলত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে।

রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

তবলছড়ি ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ছাড়াও এর ভেতরে আছে রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুটি। সেতু পেড়িয়ে সামনের পাহাড়ে উঠলে চোখের সামেন বিস্তীর্ণ কাপ্তাই লেইক।

এই লেইকের স্বচ্ছ পানি আর বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে।

ঝুলন্দ সেতু, শহরের তবলছড়ি কিংবা রিজার্ভ বাজার ঘাটে পাওয়া যায় কাপ্তাই লেইকে ভ্রমণের নানান রকম ইঞ্জিন নৌকা। তবে ঝুলন্ত সেতু থেকে নৌকা ভাড়া নিলে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়।

সারাদিনের জন্য একটি নৌকা ভাড়া করে সকালে চলে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। শুভলং যাওয়ার পথেই হাতের বাঁয়ে শুভলং ঝরণা। বর্ষাকালে এ ঝরণা প্রাণ ফিরে পায়।

বর্ষায় কাপ্তাই লেইক। কাপ্তাই লেইক, রাঙ্গামাটি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বর্ষায় কাপ্তাই লেইক। কাপ্তাই লেইক, রাঙ্গামাটি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শুভলং যাওয়ার পথে কাপ্তাই লেকের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ জুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখাকার রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম পাহাড়ি খাবার।

তবলছড়ি কিংবা রিজার্ভ বাজার থেকে সারাদিন ভ্রমণের জন্য একটি ইঞ্জিন নৌকার ভাড়া পড়বে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা। নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে বেড়াতে পারেন রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সংযোগ সড়কে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলতে ভালোই লাগবে। এ পথ ধরে কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রাম ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান।

কীভাবে যাবেন

কাপ্তাই লেইক, রাঙ্গামাটি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কাপ্তাই লেইক, রাঙ্গামাটি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গমাটি যায় শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া সাড়ে ৮শ’ টাকা। এছাড়া ডলফিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস ইত্যাদিা নন এসি বাসও যায় রাঙ্গামটি।  ভাড়া জনপ্রতি সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি বিশ মিনিট পর পর  রাঙ্গামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

রাঙ্গামাটি ভ্রমণে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো পর্যটন মোটেল (০৩৫১-৬৩১২৬)। এখানকার নন এসি কক্ষ দেড় হাজার টাকা। এসি কক্ষ আড়াই হাজার টাকা এবং ট্রাইবাল কটেজ ১ হাজার ৭শ’ থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা।

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেইকে পর্যটক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকার মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দেওয়া যায়।

এছাড়ার রাঙ্গামাটি শহরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেল হল: কাঠালতলীতে হোটেল সুফিয়া (০৩৫১-৬২১৪৫)। রিজার্ভ বাজারে হোটেল গ্রীন ক্যাসেল (০৩৫১-৬৩২৮২)। পর্যটন রোডে হোটেল মাউন্টেন ভিউ (০৩৫১-৬২৮৪৮) ইত্যাদি। এসব হোটেলে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় কক্ষ আছে।