চকবাজারে ইফতারি

বেলা গড়িয়ে দুপুর ৩টা। ইফতারের বাকি সাড়ে তিন ঘণ্টা। চকবাজারের উদ্দেশে যাত্রা। যথারীতি চির পরিচিত জ্যাম ঠেলে অবশেষে উপস্থিত চকবাজারের, আদি ইফতার বাজারে।

ফরহাদ জাহানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 12:39 PM
Updated : 22 July 2014, 11:10 AM

ঢুকতেই বামপাশে সুশীল কাকার মাঠার দোকান। তিনি ২৫ বছর ধরে দুধ ও দইয়ের সংমিশ্রণে মাঠা বিক্রি করে যাচ্ছেন। প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

মাঠার দোকানের পাশেই দীন মোহাম্মাদ চাচা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে রুচি বর্ধনশীল ও দ্রুত হজমদায়ক আচার ও হজমি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, "মানুষজন ইফতার কেনার পাশাপাশি আমার হাতের আচার ও চাট মসলা নিয়া যায়। হালিম, কাঁচা ফলমূল আথবা যেকোনো ধরনের ইফতার মাখানিতে চাট মসলা দিয়া খাইতে পারে।"

সুতা কাবাব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

শাহী জিলাপি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চাচার আচার প্রতি কেজি দেড়শ থেকে ৭শ' টাকা। আর হজমি এবং চাট মসলা ৩০ থেকে ৭০ টাকা। এরপরেই চোখ পরে ‘বড় বাপের পোলায় খাই, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’ এর উপর!

একটু এগুতেই দোকানের বর্তমান মালিক সালেহিনের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায় এই খাবারের ইতিহাস।

"আমার দাদা কামেল মহাজন ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে এ খাবার সর্বপ্রথম বিক্রি শুরু করেন। দাদা ইন্তিকালের পর আমার বাবা জানে আলাম এবং আমি এই খাবার বিক্রি করতেছি।"

"প্রতিকেজি ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' টাকা বিক্রি করে থাকি। এতে খাসির মাংস, আলুভাজি, মোরগের মাংস, সুতিকাবাব, কাঠিকাবাব, ডাল, ডিম, কলিজা, গরুর মগজ, কোয়েলের রোস্ট, গাওয়া ঘি, এলাচি, দারুচিনি, সাদা-গোলমরিচ, কালো-গোলমরিচ, কাবাব, চিনি, জায়ফল-জয়ত্রী, জিরা, জাফরান, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, শুকনামরিচ, হলুদ দিয়া এই খাবার তৈরি কইরা থাকি।" বললেন বড় বাপের পোলা সালেহিন।

এরপরেই কথা হল একজন আলোকচিত্রীর সঙ্গে। শ্যামলী থেকে এসেছেন বাসার জন্য ইফতার নিতে। পাশাপাশি ইফতারের পসরার আলোকবন্দি করে রাখছেন।

মুন্সিগঞ্জ থেকে এক চাচা এসেছেন ইফতার নিতে। তার ভাতিজা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, ভাতিজার সঙ্গে দেখা করতেই ইফতার নিয়ে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেলো, মুরগির রোস্ট ৩শ' টাকা, খাসি রানের রোস্ট ৪শ' টাকা,  কোয়েল পাখির রোস্ট ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

চকবাজারের ইফতারি। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চকবাজারে বিভিন্ন ফলমূলও কেটে রাখা হয়। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

কাবাবের মধ্যে আছে: শামি কাবাব ২০ টাকা, নার্গিস কাবাব ৩০ টাকা, শিক কাবাব ৩০ টাকা, মুঠিকাবাব ১৫ টাকা, টিক্কাকাবাব ২৫ টাকা। তবে সুতি কাবাব গরু ও খাসি ভেদে ৪শ' থেকে ৫শ' টাকায় মিলছে।

ঘুঘনি প্রতি কেজি ৭০ টাকা। ছোলা, বুট, বুন্দিয়া, বেগুনি, পিয়াজু, ডিম পোয়া ৩ থেকে ৫ টাকায় পাওয়া যায়।

দইবড়ার দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ফালুদা বক্স ভেদে ৮০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা লাবাং ৫০ থেকে ১১০ টাকা। বোরহানি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়া আছে রসের বড়া, দাম ১৪০ টাকা।

প্রতিকেজি শাহী জিলাপি ১৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। খেজুরের মধ্যে মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি ৬শ', বড়ই খেজুর কেজি প্রতি ২শ', দাবাস খেজুর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, লুলু খেজুর প্রতিকেজি ১৮০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

আরও আছে মিষ্টি পরোটা ও ঝাল পরোটা ৩০ টাকা। চিকেন পরোটা ৩৫ টাকা।

২ হাত ভর্তি ইফতার কিনে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন গাড়ি চালক, মিজান।

তার ভাষায়, "ইফতার নিতে আসছি নিকুঞ্জ থেকে, গাড়ি রাখছি কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে।"

পাঠক বুঝতেই পারছেন চকবাজারের এই ঐতিহ্যবাহী ইফতারির স্বাদ নিতে হলে একেই তো যেতে হবে আগেভাগে, সেই সঙ্গে গাড়ি দূরে কোথাও রেখে হেঁটেই যাওয়া শ্রেয়।