সত্যিই, বিশ্বজুড়েই সুগন্ধির আবেদন এতটাই যে, পোশাক কিংবা অলঙ্কার নয়, ভিড়ের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে সৌরভময় উপস্থিতিই যথেষ্ট। আর বিশেষ উপলক্ষ হলে তো কথাই নেই। উৎসবের সাজ পরিপূর্ণ করতে আসল পারফিউমের রাজ্যে একবার ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন।
ব্র্যান্ডেড পারফিউম এবং দরদাম
ঢাকায় বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের নামীদামি পারফিউম এখন হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। তবে এতসব বিপণিবিতানের হরেক রকম দোকানের পণ্যসম্ভারের মধ্যে আসল পারফিউম খুঁজে পাওয়া, এই দশকের শুরুতেও একটু কঠিনই ছিল।
ক্রেতাদের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়েছে দেশের অন্যতম সুগন্ধি রিটেইল 'পারফিউম ওয়ার্ল্ড'। ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের ৯টি শোরুমে আন্তর্জাতিক ৩২টি ব্র্যান্ডের সুগন্ধির পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির ধানমণ্ডি শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাসাফ-উদ-দৌজা উলফাত বাংলাদেশে পারফিউম ব্যবসার শুরুর দিকের কথা জানান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সত্যিকারের ব্র্যান্ডেড পারফিউমের ডিলার বাংলা পারফিউম এবং স্টার এশিয়া নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। তারাই এতদিন ধরে পারফিউম আমদানি করে আসছে। তবে তাদের নিজেদের কোনো শোরুম নেই। সেক্ষেত্রে পারফিউম ওয়ার্ল্ডই কেবল সুগন্ধি নিয়ে রিটেইল বিজনেসের পাইওনিয়ার বলতে পারেন।”
মেয়েদের জন্য আছে গুচি, ভার্সাচি, হুগো বস, এসকাডা, ক্রিড, বারবেরির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো। অন্যদিকে ছেলেরা বেশি পছন্দ করেন বস, ডানহিল, ফেরারি, জিরো জিরো সেভেন, অ্যাজারো, লাকস্টের মতো ব্র্যান্ডগুলো।
ফুলেল সৌরভে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলে হুগো বসের ফ্লোরাল কালেকশন থেকে বেছে নিতে পারেন যে কোনো একটি। এই ব্র্যান্ডের বস জুওর সুগন্ধিও ফ্লোরাল ফ্লেইভারে। দাম ৪ হাজার ১৭০ থেকে ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
ফ্লোরাল ফ্লেইভারের অন্য সুগন্ধির ভেতরে রয়েছে গুচির এনভি মি, গিল্টি এবং ইনটেন্স নামের পারফিউমগুলো। মেয়েদের জন্য তৈরি পারফিউমগুলো পাওয়া যায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটারের বোতলে।
আর ‘অ্যাবসোলিউডট পারফিউম’ সংগ্রহ করতে চাইলে দামটা একটু বেশিই পড়বে। গুচির এই দুই ধরনের পারিফিউমের দাম ৪ হাজার ধেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ফুলেল সৌরভ পছন্দ না হলে মৌসুমি ফল কিংবা চকোলেটি ফ্লেইভারের পারফিউমও দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে এসকাডা, মোশিনো, থেরি মাগলারের মতো ব্র্যান্ডগুলো।
এসকাডার রয়েছে ডিজায়ার মি, অ্যাবসোলিউট মি, ইনক্রেডিবল মি— নামের পারফিউম। আরও আছে, চেরি ইন দ্য এয়ার, আইল্যান্ড কিস এবং রকিং রিও। ফ্রুটি ফ্লেইভারের এসব পারফিউমের দাম ৩ হাজার ২শ' থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকার মধ্যে।
ইতালির ব্র্যান্ড মোশিনোর আছে ফ্রুটি ফ্লেইভারের হ্যাপি ফিজ এবং চিপ অ্যান্ড শিক নামের দুটি পারফিউম। আছে ক্যান্ডি ফ্লেইভারের পিঙ্ক বুকে। দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে।
এক্ষেত্রে সবার থেকে আলাদা ফরাসি সুগন্ধি ব্র্যান্ড ক্রিড। ছেলেমেয়ে সবার জন্যই পারফিউম তৈরিতে প্রসিদ্ধ এই ব্র্যান্টটির দাবি, তিন নোটের নিখুঁত সংমিশ্রণে সবচেয়ে ভালো মানের পারফিউম তারাই তৈরি করে। এই ব্র্যান্ডের সুগন্ধিগুলোর দামও তাই সবচেয়ে বেশি। ফ্লোরাল ফ্লেইভারের লাভ ইন হোয়াইট এবং লাভ ইন ব্ল্যাক-এর মতো পারফিউমগুলো পাওয়া যাবে ১৬ হাজার টাকায়।
এই সময়ে ফরাসিদের মধ্যে অন্যতম খ্যাতিমান পারফিউমার হলেন থিয়েরি মাগলার। তার ব্র্যান্ডের সুগন্ধিগুলোতেও তিন নোটের সুষম সংমিশ্রণ পাওয়া যায় বলেই পারফিউম ওয়ার্ল্ডের তরফ থেকে জানানো হলো। এই ব্র্যান্ডের সুগন্ধিগুলোর আরকটি বিশেষত্ব এর বোতলের নকশা। কেবলমাত্র স্বতন্ত্র এবং নান্দনিক নকশার কারণেই অনেকে এই ব্র্যান্ডের পারফিউম সংগ্রহ করে থাকেন। চকোলেটি, ক্যান্ডি, স্পাইসি— নানান রকম সৌরভের এই ব্র্যান্ডের দাম ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে।
শুরুতে একটু ঝাঁঝালো গন্ধ, অথচ কয়েক মুহূর্ত পরই অন্য এক সুবাসের মাদকতা— এমন সৌরভকেই বলে স্পাইসি ফ্লেইভার। ছেলেদের মধ্যে এমন সৌরভের জনপ্রিয়তা বেশি। এক্ষেত্রে এগিয়ে অ্যাজারো, ডিএসকোয়ার্ডটু'র মতো ব্র্যান্ডগুলো।
ছেলেদের মেধ্যে জনপ্রিয় ওশেন ওয়েট উড, রকি মাউন্টেইন উড, সিলভার উইন্ড উড নামের পারফিউমগুলো। মেয়েদের জন্য আছে ক্রিস্টাল ক্রিক উড, গোল্ডেন লাইট উড এবং ভেলভেট ফরেস্ট উড নামের পারফিউম। দাম পড়বে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার ৬শ' টাকার মধ্যে।
ছেলেদের জন্য স্পাইসি ফ্লেইভারের লাকস্টে ব্র্যান্ডেরও গাঢ় সুবাসের সুগন্ধি আছে। ব্ল্যাঙ্ক পিওর, ব্লু-পাওয়ারফুল ইনটেন্স, ভার্ট-রিল্যাক্সড, এনার্জেটিক টিজার— এই নামের পারফিউমগুলো পাওয়া যাবে ৫ হাজার ১শ' থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
যেখানে পাবেন
ঢাকায় পারফিউম ওয়ার্ল্ডের শোরুমগুলো আছে পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ধানমণ্ডির প্লাজা এআর, বনানী ১১' চাঁদনীওয়ালা ম্যানশন, উত্তরার পলওয়েল কার্নেশন এবং যমুনা ফিউচার পার্কে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রয়েছে দুটি শোরুম— জিইসি মোড়ের ইউনুসকো সিটি সেন্টার আর পাঁচলাইশের আফমি প্লাজায়। সিলেটের একমাত্র শোরুম জিন্দাবাজারের আলহামরা শপিং মলে।
এছাড়াও বড় বড় লাইফস্টাইল শোরুমগুলোতেও পাওয়া যাবে আসল পারফিউম। স্টার এশিয়া তাদের নিজেস্ব আমদানিকৃত পারফিউমের সম্ভার সরবরাহ করে এসব দোকানে।
এই শোরুমগুলোর মধ্যে রয়েছে, গুলশান-১ এর ডায়মন্ড, যারা ফ্যাশন মল, নেহা ফ্যাশন, গুলশান-২ এর ইউনিমার্ট, বিউটিশপ, আর্টিস্টি, ঢাকা রিপাবলিক, বেইলিরোডের স্টারডাস্ট, আমেইজিং ডিসকাউন্ট, ফ্যাশন হাউজ এক্সটেসির উত্তরা ও বসুন্ধরা সিটি আর যমুনা ফিউচার পার্কের শোরুমেও বিক্রি করা হয় পারফিউম।
ধানমণ্ডি ২৭-এর ট্রেন্ডজ আউটলেটেও পাওয়া যাবে পারফিউমের বিশাল সমাহার।
পারফিউম নিয়ে কিছু টিপস
সুগন্ধি কিনতে গিয়ে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন পারফিউম ওয়ার্ল্ডের মোহাম্মদ কাসাফ-উদ-দৌজা।
আসল পাফিউম চেনার উপায়: প্রথমবার স্প্রে করার পর গন্ধটা যদি ১৫ ঘন্টার বেশি টিকে যায়- তাহলেই বুঝবেন সেটা আসল সুগন্ধি। আর যদি না টেকে, তাহলে বুঝতে হবে ঠকেছেন আপনি।
পারফিউম সংরক্ষণ: অনেক দাম দিয়ে পারফিউম কিনলেন, তবে কিছুদিন পরেই কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলল সেই সুগন্ধি। এমনটা হলে পানিতেই যাবে কষ্টের টাকা। পারফিউম সঠিকভাবে সংরক্ষণের নিয়ম হল, কেনার পর একে রাখতে হয় ছায়াঘেরা শীতল স্থানে। সূর্যের আলো যাওয়া-আসা করে, এমন জায়গায় পারফিউম রাখা মানা। তাহলে, কিছুদিনের মধ্যেই কর্পুরের মতো উবে যাবে আপনার প্রিয় সুগন্ধি।
কোন মৌসুমে কোন সুগন্ধি: বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে মৌসুম বুঝেই বেছে নিতে পারেন সুগন্ধির ধরন। গরমের মৌসুমে চিটচিটে আবহাওয়ায় বেশি টিকবে গাঢ় পারফিউমগুলো। অন্যদিকে শীতকালে হালকা সুবাসের সুগন্ধিই টিকে থাকবে অনেকক্ষণ।