রথ দেখা

২৯ জুন সারাদেশে শুরু হবে রথযাত্রা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এদিন রথের রশি ধরে টানবেন। ৬ জুলাই উল্টোরথ টানার মধ্য দিয়ে শেষ হবে নয়দিনের এ উৎসব।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2014, 06:21 AM
Updated : 27 June 2014, 07:39 AM

দেশের বিভিন্ন স্থানেরমতো ঢাকা শহর, ঢাকার পার্শ্ববর্তী ধামরাই এবং সিলেটে বহুকাল ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী রথটানা উৎসব। এই তিনটি রথউৎসব নিয়ে লাইফস্টাইলের এ ভ্রমণ ফিচার।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা

২৯ জুন বিকালে ঢাকার স্বামীবাগে ইসকন আশ্রম থেকে শুরু হবে রথযাত্রার। লাখো ভক্ত এদিন রথের রশি ধরে টানবেন ঢাকার রাজপথে। শোভাযাত্রাটি সাধারণত ইসকন আশ্রম থেকে শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।

সনাতন ধর্মের সব বয়সের নারী পুরুষ নেয়েগেয়ে রথের রশি ধরে টেনে নিয়ে আসেন। পুরুষেরা শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসা, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে পরিবেশ মুখর করে তোলেন। আর নারীরা উলুধ্বনির মাধ্যমে রথটানায় শামিল হন।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

সনাতন ধর্মের লোকজন ছাড়াও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে রথ দেখতে সড়কের দুপাশে জড়ো হন হাজারো মানুষ। এসময় দর্শনার্থীদের দিকে রথ থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় কলা আর ধানের খৈ।

বিকেলে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রথযাত্রার শেষ হয়। নয়দিন পরে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে যাত্রা করবে উল্টো রথ।

ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা

প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়ার্ধে ধামরাইয়ে রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়। এদিন রথের শীর্ষে দেবতাদের মূর্তি উঠিয়ে রথটানা হয়। লাখো হিন্দু ধর্মবলম্বীরা এদিন ধামরাইয়ে সমবেত হন রথ টানতে। ধামরাই বাজারের এক প্রান্তে মাধব মন্দিরের সামনে থেকে এদিন রথ টেনে এনে রাখা হয় বাজারের অপর প্রান্তে। আর ওই পক্ষের দশমীতে পুনরায় সেই রথ টেনে আগের জায়গায় আনা হয়।

প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর আগে ধামরাইয়ে তৈরি হয়েছিল প্রথম রথ। বিশাল ৭ তলা রথ নির্মাণ করেছিলেন মানিকগঞ্জের বালিয়াটির তৎকালীন জমিদারগণ। প্রাচীন রথের উচ্চতা ছিল ৬০ ফুট। এই রথ ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।

ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

পরে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার একটি কাঠের তৈরি ক্ষুদ্র রথের যাত্রা অনুষ্ঠিত হত।

এ বছর ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা খরচ করে আদি রথের অনুরূপ একটি রথ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু এবং ২০ ফুট চওড়া কাঠের তৈরি এ রথের চারপাশে খোদাই করা হয়েছে বিভিন্ন দেব দবীর প্রতিকৃতি।

রথযাত্রা উপলক্ষে ধামরাইয়ে মাসব্যাপী গ্রামীণ ও কুটিরশিল্প মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিভিন্ন হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, পোশাক, ব্যাগ, বেত, কাসা ও পিতলের জিনিসপত্র, চুড়ি এবং নানান রকমের খেলনা, মিষ্টিজাতীয় খাবারের সমারোহ ঘটে।

এছাড়া পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, সার্কাস ইত্যাদিও থাকে এই মেলায়।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ঢাকার গুলিস্তান থেকে শুভযাত্রা, বিআরটিসি পরিবহন, গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, নবীন বরণ, ভিলেজ লাইন, জনসেবা পরিবহন, বাবু বাজার থেকে শুকতারা পরিবহনে চড়ে যাওয়া যায় ধামরাই। এছাড়াও ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ ও আরিচাগামী যে কোনো বাসে উঠেই নামতে পারেন ধামরাই বাস স্টেশন। ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় ধামরাই বাজার।

সিলেটের রথযাত্রা

সিলেটের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন আমেজে। এদিন শহরের বিভিন্ন মন্দির থেকে ভক্তরা রথ টেনে নিয়ে আসেন রিকাবী বাজারে। বেশ কয়েকটি রথ সেখানে জড়ো করে প্রার্থণা করেন ভক্তরা। দিনশেষে রথ নিয়ে আবার ফিরে যান তারা।

এ উপলক্ষে শহরের রিকাবী বাজার এলাকায় বসে রথের মেলা। এছাড়া ইসকনের আয়োজনেও একটি বর্ণাঢ্য রথযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে সহজেই আসা যায় সিলেট। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে গ্রীন লাইন, সোহাগ, শ্যামলী প্রভৃতি পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেট। ভাড়া ৯শ’ থেকে ১১শ’ টাকা।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ঢাকায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

এছাড়া, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক, সৌদিয়া প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এপথে। ভাড়া সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।

বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ২৪৫ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা।

সিলেট শহরে থাকার জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল আছে। যেখানে ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।