বাঘা দেখে বানেশ্বর

চলছে আমের মৌসুম। রাজশাহী জেলার বাঘা থানায় আমের চাষ হয় প্রচুর। আরও আছে বহু পুরানো বাঘা মসজিদ। আর রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার বানেশ্বর।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2014, 05:14 AM
Updated : 14 June 2014, 06:04 AM

এসবকিছুই দেখে আসতে পারেন এক ভ্রমণে।

বাঘা মসজিদ

রাজশাহী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বাঘায় অবস্থিত। ইট দিয়ে তৈরি প্রাচীন মসজিদের চারপাশে চারটি ও মাঝখানে দুই সারিতে পাঁটিকের ১০টি গম্বুজ আছে।

মসজিদের পূর্বপাশে পাঁচটি দরজা। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের চারটি দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৩.১৬ মি. দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের এই মসজিদের ছাদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়। পরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গম্বুজসহ ছাদটি পুণঃনির্মাণ করে।

মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়া মাটিরফলক। ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে নামাজের জন্য একটু উঁচুতে তৈরি একটি বিশেষ কক্ষ আছে। অনেকের মতে এটি মহিলাদের নামাজের জায়গা ছিল। আবার অনেকে মনে করেন কক্ষটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত গভর্নরের জন্যই সংরক্ষিত ছিল।

বর্তমানে করাচিতে সংরক্ষিত মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরের শিলালিপি অনুযায়ি সুলতান নসরত শাহ মসজিদটি ১৫২৩ সালে নির্মাণ করেন। মসজিদের পাশেই আছে একটি কবরস্থান। বেশ কয়েকজন বুজুর্গ ব্যক্তি শায়িত আছেন এখানে।

বাঘায় আমের বাগান।

জনশ্রুতি আছে, খ্রিস্টীয় ১৫০৫ সালে হযরত শাহ দৌলা দানেশ মন্দ (র.) পাঁচজন সঙ্গীসহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ থেকে বাঘায় আসেন। সুলতান নসরত শাহও তার ভক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। শাহ দৌলা এ অঞ্চলে বাঘের পিঠে চড়ে বেড়াতেন বলে জায়গাটির নাম বাঘা, এ কথা প্রচলিত আছে লোকমুখে।

বাঘা মসজিদের পূর্ব পাশে আছে বিশাল দীঘি। শীতে অতিথি পাখিরা এসে ভীড় জমায় সেখানে।

বাঘার আমবাগান

বাঘার সবখানেই আমের বাগান। নতুন এবং পুরানো নানান রকম আম বাগানে ভরপুর। বাঘা মসজিদের পোড়া মাটির ফলকেও আমের উপস্থিতি জানান দেয়, এখানকার আমের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। যে কোনো বাগানে বেড়ানো যায় ইচ্ছেমতো। 

বানেশ্বর আমহাট

রাজশাহী থেকে বাসে বাঘা যাওয়ার পথেই দেখে নিতে পারেন এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের উপরেই বসে। হাটে আমের দামও তুলনামূলক কম। বিশাল এলাকাজুড়ে মহাসড়কের দুইধারে নানান জাতের আমের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।   

বানেশ্বরে আমহাট।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে রাজশাহী শহর। সেখান থেকে বাঘার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। রাজশাহীর শিরোইল বাস স্টেশনে সকাল থেকেই বাঘার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৩০ থেকে ৩৬ টাকা।

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়।

ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে গ্রীন লাইন ও দেশ ট্রাভেলসের এসিবাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

এছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহনের বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে রবিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস।

ভাড়া এসিবার্থ ৯৪০ টাকা। এসিসিট ৬৩০ টাকা। স্নিগ্ধা ৫২৫ টাকা। শোভন-চেয়ার ৩১৫ টাকা।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় রাজশাহীতে।

বানেশ্বরে আমহাট।

থাকার জায়গা

এ ভ্রমণে থাকতে হবে রাজশাহী শহরে। বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ পাওয়া যায়।

হোটেলগুলো হল: রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাবেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস্‌ ইন, লক্ষীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেব বাজরে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।