পুঠিয়ায় বেড়ানো

মন্দিরের শহর পুঠিয়া। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দক্ষিণ পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ীর বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া মন্দিরসহ আরো অনেক প্রাচীন স্থাপনা। একদিনের ভ্রমণ কর্মসূচীতে দেখে আসতে পারেন পুঠিয়ার এসব কিছু।

মোস্তাফিজুর রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2014, 09:20 AM
Updated : 30 May 2014, 09:25 AM

শিব মন্দির

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে সরু সড়কে সামান্য দক্ষিণে ঢুকলেই পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রবেশপথ। এখানে পুকুর পাড়ে বিশাল আকারের মন্দিরের নাম শিব মন্দির। পুঠিয়ার রাণী ভুবন মোহিনী দেবী ১৮২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

চারদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ এই শিব মন্দির একটি উঁচু ভিতের উপরে নির্মিত। চার কোণায় চারটি আর কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে। মন্দিরের দোতলায় একটি মাত্র কক্ষ আর চারপাশে দুই স্তরে বারান্দা। মূল কক্ষের ভিতরে আছে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ।

এশিয়ার অন্যতম বড় শিব মন্দির হিসেবে খ্যাত এই স্থাপনার দেয়াল জুড়ে পৌরাণিক কাহিনী চিত্র খচিত।

পাশেই আছে গোল গম্বুজাকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির।  

দোলমঞ্চ

শিব মন্দির ছাড়িয়ে একটু দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে চারতলা বিশিষ্ট দোলমন্দির। দোলমঞ্চের আকারে মন্দিরটি ধাপে ধাপে উপরে উঠে গেছে। একদম উপরে আছে গম্বুজাকৃতির চূড়া। প্রত্যেক তলার চারপাশে টানা বারান্দা। ধরা হয় আনুমানিক নির্মাণকাল ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশকে, নির্মাণ করেছিলেন পুঠিয়ার আরেক রাণী হেমন্ত কুমারী দেবী।

পুঠিয়া রাজবাড়ি

দোলমঞ্চের সামনের মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে মুখোমুখী দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল প্রাসাদ, পুঠিয়া রাজবাড়ি। রাণী হেমন্তকুমারী দেবীর শাশুড়ি মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন এ রাজবাড়ি।

বর্তমানে লষ্করপুর ডিগ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই প্রাসাদ। ভবনের পূবদিকে আছে রাণী পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রাণী পুকুরের দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব এখনো দেখা যায়।

গোবিন্দ মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রাচীরের ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরের চারপাশে বার্গাকার চারটি কক্ষ আছে।

২৫০ বছর পুরানো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্রফলক দেখে ধারণা করা হয়, স্থাপনাটি ঊনবিংশ শতাব্দিতে নির্মিত।

বড় আহ্নিক মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। এর পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্ব মূখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকায করা মন্দিরের নির্মাণ শৈলী বেশ আকর্ষণীয়।

গোপাল মন্দির

বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমূখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১৬.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪৭ মিটার প্রস্থের এ মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার।

যাতায়াত

রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যে কোন বাসে পুঠিয়া যাওয়া যায়। রাজশাহী থেকে পুঠিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে চড়ে আসতে হবে পুঠিয়া। ভাড়া ৩৫-৪০ টাকা।

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়।

ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে গ্রীন লাইন ও দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৬শত টাকা। এছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যমলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস।

ভাড়া এসি বার্থ ১১৭৩ টাকা, স্নিগ্ধা ৬৫৬ টাকা, শোভন চেয়ার ৩৪০ টাকা।

থাকার জায়গা

পুঠিয়ায় পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই রাত কাটানোর জন্য রাজশাহী ভালো জায়গা। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। রুম হিসেবে ভাড়া ৫শ’ থেকে ৬ হাজার টাকা।

রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাবেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস্‌ ইন, লক্ষীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেব বাজরে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।