ঈশ্বরদীর লিচু বাগানে

চলছে মধুমাস। পাকতে শুরু করেছে মধু মাসের রসালো ফল লিচু। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী এখন এই ফলের রঙে রঙিন।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2014, 02:45 AM
Updated : 23 May 2014, 07:11 AM

মাইলের পর মাইল লিচু বাগান আছে ঈশ্বরদীতে। স্বাদে ও আকারে এখানকার লিচু বেশ আকর্ষণীয়। এই সময়ে তাই ঈশ্বরদীর লিচু বাগান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

ঈশ্বরদীর সবখানেই এখন লিচু চাষ হয়। তবে এখানকার লিচু চাষের প্রধান এলাকাগুলো হল: জয়নগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারী, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, বড়ইচড়া, শিমুলচড়া ইত্যাদি।

এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি হেক্টর জামিতে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়। ঈশ্বরদীতে বেদানা, বোম্বাই, চায়না-১, মোজাফফরপুরী, বারী-১সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বোম্বাই জাতের লিচু।

ঈশ্বরদীর লিচু। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাগানে থোকা থোকা লিচু। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঈশ্বরদীতে বাগানে বাগানে এরমধ্যে লিচু পাড়ার ধুম পড়ে গেছে। নাটোরের বনপাড়া ছেড়ে পাবনা সড়কে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে শত শত লিচু গাছ। গাছের ডালে ডালে পাকা লিচুর থোকা। যে কোনো বাগানে ঢুকলেই দেখা মিলবে চাষীদের ব্যস্ততা। কেউবা গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন, কেউ আবার বাছাই করছেন, কেউ আবার সেগুলো শহরে পাঠানোর জন্য ঝুড়িবন্দী করছেন।

বাগান থেকে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পছন্দের লিচু কেনাও যাবে। লিচু বাগান দেখার জন্য ঈশ্বরদীর সবচেয়ে ভালো জায়গা হল- ছলিমপুর আর মিরকামারী। এখানকার সব বাগানই মূলত মহাসড়কের দুইপাশে।

লিচু বাগান দেখে বেড়িয়ে আসতে পারেন এখানকার দর্শনীয় কিছু জায়গা।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

লালনশাহ সেতু। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঈশ্বরদীর পাকশীতে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। পদ্মা নদীর ওপরে নির্মিত এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯১০ সালে, শেষ হয় ১৯১২ সালে। তবে ১৯১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এ সেতুতে রেল চলে। পরে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ লর্ড হার্ডিঞ্জ সেতুটির উদ্বোধন করেন।

প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্পাত দিয়ে তৈরি এ সেতুটি তৈরিতে তৎকালীন প্রায় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১শত ৬৫ টাকা ব্যয় হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর মর্টারের আঘাতে এর বারোতম স্প্যানটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেটি আবার সংস্কার করা হয়।

হার্ডিঞ্জ সেতুর পাশাপাশি প্রায় তিনশ মিটার সমান্তরাল দূরত্বে পদ্মা নদীর ওপরে অবস্থিত লালনশাহ সেতু। প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১ মিটার প্রস্থ এ সেতুটি ২০০৪ সালে চালু হয়। এ অঞ্চলের সাধক পুরুষ বাউল সম্রাট ফকির লালনের নামে এর নামকরণ করা হয়।

বাজারজাত করার জন্য বস্তাবন্দী করা হয়েছে লিচু। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গাছ ভর্তি মধু মাসের মধু ফল। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে ও রেলে ঈশ্বরদী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস, পাবনা এক্সপ্রেস ও সনি এক্সপ্রেসে চড়ে যেতে পারেন ঈশ্বরদী। এসব বাসে ভাড়া ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে কপোতাক্ষ ও মধুমতি এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস এবং সৈয়দপুর থেকে রূপসা এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদীতে যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর ট্রেনের বর্তমান ভাড়া: তাপানুকূল বার্থ ৮১০ টাকা। তাপানুকূল সিট ৫৪০ টাকা। প্রথম শ্রেণী বার্থ ৫৪০ টাকা। প্রথম শ্রেণী ৩৬০ টাকা। স্নিগ্ধা শ্রেণী (এসি চেয়ার) ৪৫০ টাকা। শোভন চেয়ার ২৭০ টাকা। শোভন ২২৫ টাকা।

বাগানে থেকে লিচু সংগ্রহ চলছে। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাগানের লাল লাল লিচু দেখলেই মনে হবে পেড়ে খাই। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

থাকার জায়গা

ঈশ্বরদীতে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে আছে হোটেল ফয়সাল, ঈশ্বরদী ও উত্তরা। এসব হোটেলে ২৫০ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় থাকা যায়।

বাজেট বেশি থাকলে পাকশী রিসোর্টে থাকতে পারেন। জায়গাটিতে থাকা এবং খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে।

আর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পাকশীতে অফিসার্স রেস্টহাউজ কিংবা ভিআইপি রেস্টহাউজেও থাকা যায়।

আলোকচিত্র: মুস্তাফিজ মামুন