টি-শার্টে অনন্যা

গরমের পোশাক হিসেবে টি-শার্টের তুলনা হয় না। পরে আরাম, ধোয়ার ঝামেলা কম।

ওমর শরীফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2014, 03:36 AM
Updated : 21 May 2014, 01:45 PM

সাধারণত তরুণদের মধ্যেই টি-শার্ট পরার প্রবণতা বেশি। ছেলেরা ছাড়াও মেয়েরা, বিশেষ করে কিশোরীদের মধ্যে এই পোশাকের প্রতি প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তথ্যটি জানালেন দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘নোঙর’-এর স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “টিনএইজ মেয়েরাই টি-শার্টের বেশিরভাগ ক্রেতা। এই গরমে পরে আরাম বলে বিক্রিও হচ্ছে বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “ছেলেদের থেকে মেয়েদের টি-শার্টের প্যাটার্নে রয়েছে পার্থক্য। সাধারণত মেয়েদের টি-শার্টের কাটিংয়ে কার্ভ থাকে। ছেলেদেরটা হয় স্ট্রেইট।”

গ্রীষ্মের পোশাক হিসেবে বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলো টি-শার্টের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এই পোশাকের জন্য বিখ্যাত আজিজ সুপার মার্কেট ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে গরমে পরার উপযোগী টি-শার্ট।

আরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের মতো হাউজগুলো সাধারণত নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে গেঞ্জির কাপড় কিনে টি-শার্ট তৈরি করে। তাই ডিজাইন ও কাটিংয়ে থাকে দেশীয় আমেজ। নকশার মাধ্যম হিসেবে বেশিরভাগই ব্যবহার করা হয় স্ক্রিন প্রিন্ট।”

“মেয়েদের মধ্যে লাল, গোলাপি, হলুদ, কালো রংয়ের টি-শার্টের চাহিদা বেশ।” কথার ফাঁকে বললেন আরিফুল।

এদিকে রাজধানীর নিউমার্কেটের দক্ষিণ ভবনের দোতলা, তিনতলাসহ ঢাকা কলেজের উল্টা পাশের মার্কেটেগুলোতেও রয়েছে টি-শার্টের আয়োজন।

মিরপুর রোডের নেহার ভবনের মনির ক্লথের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের সংগ্রহে যেসব টি-শার্ট রয়েছে তা সবই এক্সপোর্ট কোয়ালিটি।

তার কথায়, “বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে আমরা এসব পোশাক সংগ্রহ করি। তারপর নিজেরাই প্যাকিং করি বা ডিসপ্লে করে বিক্রি করি।”

তাই এখানকার টি-শার্টগুলোতে রয়েছে পশ্চিমা ধাঁচ। এই মার্কেট ঘুরে দেখা গেল অনেক ছেলের পাশাপাশি মেয়েরাও এসেছেন টি-শার্ট কিনতে।

ইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রুখসানা আক্তারও কিনতে এসেছেন টি-শার্ট। কেনো এই পোশাক? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভাই, আমরা কয়েকজন মিলে একটা ফ্ল্যাটে ভাড়া করে থাকি। এই গরমে কাপড় ময়লা হয় তাড়াতাড়ি। বাসায় সবার কাপড় ধোয়ার বেশি সময়তো পা্‌ওয়া যায় না। সেদিক দিয়ে এই টি-শার্ট ধুতে কম সময় লাগে। আর গরমে বাসায় পরেও আরাম।”

এ্ররকম ব্যাখ্যার পর প্রশ্ন জাগতেই পারে তবে কি মেয়েরা শুধু বাসায় পরার জন্যই টি-শার্ট কেনে?

জবাবে দেশীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রঙয়ের অন্যতম স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, “আসলে টি-শার্ট পরার মধ্যে ‘ক্যারি’ বা ধারণ করার বিষয় আছে। সবাইতো আর বাইরে সব ধরনের পোশাক পরতে স্বস্তিবোধ করে না।”

তিনি আরও বলেন, “আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি কিশোরী থেকে তরুণীদের মধ্যেই টি-শার্ট পরার চল বেশি। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঘরে পরা ছাড়াও বাইরেও পরা যেতে পারে টি-শার্ট।”

মেয়েদের টি-শার্টের কাটিং সম্পর্কে এই ডিজাইনারের মন্তব্য হচ্ছে, “মেয়েদের টি-শার্ট সাধারণত একটু শর্ট ও কোমরের কাছ চাপা হয়। আবার কিছু টি-শার্ট আছে লং, প্রায় হাটু পর্যন্ত। তাই কাটিং হিসেবে এই পোশাক স্লিম বা ফিট শরীরের অধিকারীদের জন্যই মানানসই বেশি।”

“তাই বলে যে অন্যরা টি-শার্ট পরতে পারবেন না তা নয়। সেক্ষেত্রে বাইরে পরার জন্য মানাচ্ছে কিনা, তা বুঝে এই পোশাক ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করি আমি।” বললেন বিপ্লব।

বিপ্লবের পরামর্শ হচ্ছে, গ্যাবার্ডিন বা ডেনিম দিয়ে টি-শার্ট পরলে মানায় বেশি। তবে ইদানিং মেয়েরা লেগিংস, জেগিংস ও পালাজ্জো প্যান্ট দিয়েও পরছে টি-শার্ট।

নোঙরের আরিফুল বলেন, “আমাদের এখান থেকে বেশিরভাগ মেয়েরাই টি-শার্টের সঙ্গে পরার জন্য মানানসই প্রিন্টেড লেগিংস কেনে।”

ছেলে ও মেয়েদের টি-শার্টের ছাঁটে ও নকশায় পার্থক্য থাকলেও দাম প্রায় একই রকম। রাজধানীর মিরপুর রোডের দোকানগুলোতে মেয়েদের যেসব টি-শার্ট পাওয়া যায় সেগুলোর মূল্য ৩শ’ টাকা থেকে শুরু। দরদামে পারদর্শী হলে আড়াইশ’তেও কেনা যায়।

আর ২শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর টি-শার্ট।

মডেল শান্তা রহমান।

ছবি: নয়ন কুমার।