ছাদের রেস্তোরাঁ

ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। এর মধ্যে আছে কিছু রুফটপ রেস্তোরাঁ। যেখানে খোলা আকাশের নিচে বসে উপভোগ করতে পারবেন বিভিন্ন খানাদানা।

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2014, 09:39 AM
Updated : 17 May 2014, 11:56 AM

তবে গ্রীষ্মের খরতাপে বিকাল বা সন্ধ্যায় এইসব রেস্তোরাঁয় যাওয়ার সঠিক সময়। 

ক্যাফেটেরিয়া, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

১৪, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভনিউ, বাংলামোটর।

নয়তলায় এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। সাধারণ মানের প্লাস্টিকের চেয়ার আর কাচের টেবিলের পাশে আছে কিছুটা সবুজের আবহ। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। 

পাওয়া যাবে প্রচলিত স্ন্যাকস আর চা। সুতরাং পুরো মাত্রায় উদোরপূর্তি এখানে হবেনা। তবে নয়তলায় বসে সন্ধ্যায় হাওয়ায় চা খেতে খুব খারাপ লাগার কথা নয়।

আবহাওয়া প্রতিকুল? চিন্তা নেই, চাইলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরিতে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন।

ক্যাফেটেরিয়া, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

অফ ট্র্যাক

বাড়ি ৮৪, রোড ১১, বনানী।

রুফটপ রেস্তোরাঁ হিসেবে বনানীতে এটি 'অনন্য' বলতে হয়। এক্সটেরিওর ডিজাইনে প্রাকৃতিক উপাদানের আধিক্য মনকাড়বে। প্রাকৃতিক রংয়ের চেয়ার-টেবিল ও টবে রাখা গাছের কারণে সবুজের উপস্থিতি চোখে দিবে প্রশান্তি।

তরুণ ও যুগলদের জন্য একেবারে আদর্শ! রাতের সোডিয়াম আলোর উপরে থেকে ঢাকা শহরের বনানী ও আশপাশের দৃশ্য দেখার সঙ্গে খাবার বা পানীয় ভালো লাগারই কথা।

বারবিকিউর ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তান্দুরি চিকেন, গ্রিল্ড রেড স্ন্যাপারের অর্ডার দেওয়া যেতে পারে। খোলা আকাশের নিচে ৭০ জন বসার ব্যবস্থা। একটি অংশ আচ্ছাদিত। মাথার উপরের এই 'ঢাকনি' স্বচ্ছ কাচের তৈরি। তাই চন্দ্র, তারা আর আকাশ দেখতে কোনো অসুবিধা হবে না।

চাইনিজ, থাই আর ভারতীয় ক্যুইজিন পাওয়া যায় এখানে। এরমধ্যে থাই ও চাইনিজ ক্যুইজিনে রয়েছে সি-ফুডের সমাহার।

দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খলা। ৪ কোর্স খাবার খেলে দুজনের জন্য সর্বনিম্ন খরচ পড়বে ২ হাজার ৪শ’ টাকা।

প্লাটিনাম টেরেস

প্লাটিনাম টেরেস

বাড়ি ৪২, রোড ১১, বনানী।

প্লাটিনাম সুইট আবাসিক হোটেলে রয়েছে রুফটপে খাবার ব্যবস্থা। বারবিকিউ চিকেন, শিশ কাবাব, হারিয়ালি ফিস কাবাবের বেশ চাহিদা এখানে| শুক্রবার সন্ধ্যায় লাইভ মিউজিক শুনতে শুনতে বুফে ডিনার। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জ্যাজ সঙ্গীতের সঙ্গে ডিনারের সেট মেনু। এজন্য খাবারের মূল্যসহ নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ গুনতে হবে। উপরে নীল আকাশ আর নিচে সবুজ গালিচা বিছানো মেঝেতে সুসজ্জিত চেয়ার-টেবিল। যে শহরে কালোধোঁয়ায় মাঝে মাঝে আকাশ ‘ঢেকে’ যায় সেখানে উঁচু ছাদে সবুজের আবহে খেতে ভালো লাগবে বলেই আশা করা যায়।

ব্যস্ততাহীন সময় কাটানোর একটি আদর্শ জায়গা হতে পারে প্লাটিনাম টেরেস। রেস্টুরেন্টটির আসন ব্যবস্থা রয়েছে ৫০ জনের।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা।

বার্ডস আই

বার্ডস আই

বাইতুল টাওয়ার, পুরানা পল্টন।

পুরানা পল্টন এলাকায় বাইতুল টাওয়ারের ২০ ও ২১ তলায় এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। লিফট বেয়ে উঠলেই প্রথমে আচ্ছাদিত অংশ। সেটি পেরোলেই ঢাকা শহরের বিশাল অংশই চোখের পড়ে।

একটু সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলে তো পোয়াবারো! এখান থেকে একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দেখা যাবে সারা শহর।

ব্যবস্থাপক এম মনোয়ার তো দাবি করে বসলেন, ‘‘পরিষ্কার দিনে হোটেল র‌্যাডিসন পর্যন্ত চোখে পড়বে।”

ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সর্বোচ্চ ফ্লোরে আছে ‘গ্লাস রুম’। সেখানে বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে খেতে খেতে উপভোগ করা যায় একই দৃশ্য। বলে রাখা ভালো যে এক্ষেত্রে মাথার উপরে থাকবে ছাদ।

রাতের বেলায় এই ‘যাদুর’ শহরে বাতিগুলো যখন একে একে জ্বলে উঠবে তা সম্ভবত কম মোহনীয় হবেনা। তার উপর আছে খেলার দিনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলো।

খাবারের ব্যাপারে মনোয়ার বলেন, “চাইনিজ, থাই আর ভারতীয় খাবার তৈরি করি অতিথিদের জন্য।”

কথার ফাঁকে আরো জানান, একজন ভারতীয় রন্ধনশিল্পীর তত্ত্বাবধানে চলে রসুইঘরের কর্মকাণ্ড। তাতে যোগ দেন আরও বেশ কয়েকজন।

রুফটপ অংশে আরও আছে একটি ‘ওপেন’ জুসবার। মনোয়ার জানান এখানে গলদা চিংড়ি যেমন পাওয়া যায় তেমনি চাইলে রেড স্নাপার (হোল) তান্দরিও চেখে দেখা যাবে। ৩ জনের জন্য ৬ কোর্স খাবার খেলে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৯০০ টাকার মতো খরচ হবে।

খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা। 

গ্রিল অন দ্যা স্কাই লাইন

গ্রিল অন দ্যা স্কাই লাইন

এয়ারপোর্ট রোড, নিকুঞ্জ -২।

রিজেন্সি হোটেলের ১৪ তলার উপর এর অবস্থান। খোলা থাকে প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। ছাদের নীচে বসতে পারবেন ২০ থেকে ২৫ জন। এমনটাই জানালেন মোহাম্মাদ বেলাল হোসেন।

এই রেস্তোরাঁ থেকে ঢাকার উত্তর দিকের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য চোখে পড়বে। একদিকে নিকুঞ্জের সবুজাভ দৃশ্য, অন্য পাশে ঢাকা এয়ারপোর্টে বিমানের উঠা-নামা, সঙ্গে খাবার— এসবই এখান থেকে উপভোগ করা সম্ভব যদি পকেটটা একটু ভারি থাকে!

হোসেন জানান, এখানে স্টারটার শুরু ৮৫১ টাকা থেকে। স্পাইসি গ্রিলড বেবি চিকেন (হাফ) পড়বে ১,৩২০ টাকা। এই মূল্য ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ বাদে। বিফস্টেক (অস্ট্রেলিয়ান) ২,৮৯০ টাকা। গলদা চিংড়ির প্রতি ১০০ গ্রামের জন্য গুনতে হবে ৬০০ টাকা।

কথার ফাঁকে হোসেন দাবি করেন, “এই ইউনিক রেস্তোরাঁর গ্রিল ঢাকার অন্যতম সেরা।”

মারমেইড বিচ ক্যাফে

মারমেইড বিচ ক্যাফে

প্লট ৩২, ব্লক জে, বারিধারা, প্রগতি সরনী।

ভাবুনতো নয়তলার উপর ‘সি বিচে’ বসে জুস হাতে বসে আছেন আর চোখে ‘ভেসে’ আসছে নিয়নের আলো! বলছি মারমেইড বিচ ক্যাফের কথা। ছাদের উপর বালি আর নুড়ি ফেলে তৈরি করা হয়েছে এই আবহ।

১৫ জনের বসার ব্যবস্থা। এর মধ্যে একটি চেয়ারে বসতে পারবেন পুরপুরি সমুদ্রতটে রোদ পোহানোর ভঙ্গিতে।

পুরো দালানের চারতলা জুড়ে এই রেস্তোরাঁ, নীচতলার বেকারি। তাই রুফটপে শুধু শুধু জুস নয়, খেতে পারবেন তালিকায় থাকা যে কোনো খাবার। তাদের রয়েছে সিফুডের পাশাপাশি ইতালীয় 'সিনফুল' খাবারের আধিক্য।     

কালামারি রিং বা, পাস্তা জিভে বেশ জল আনবে। ভালো কফিও মিলবে। ২ জনের জন্য ৩ কোর্সে খরচ সর্বনিম্ন ২,৫০০ টাকা।

এখন ইন্টারনেটের জামানা। তাই এই 'সি বিচ'-এ বসেই ওয়াইফাই ব্যাবহার করা যাবে!

খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১২টা।

লেইক টেরেস

লেইক টেরেস

২৫/২, লেইক ড্রাইভ রোড, সেক্টর-৭, উত্তরা

উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। পাশেই লেইক, চোখে পড়বে সহজেই! খোলা আকাশের নিচে সর্ব্বোচ্চ ৬০ জনের বসার ব্যবস্থা। পেছন থেকে ভেসে আসবে সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। রেস্তোরাঁর বাইরের ‘সবুজ’ চোখে ভালো না লাগার উপায় নেই বললেই চলে। দিনে ও রাতে আলোর ভিন্নতায় তৈরি হয় দুই ধরনের আবহ। বিমানবন্দরের অবস্থান কাছে হওয়ায় মাঝেমাঝে বিমান ওঠানামা দেখা যাবে।  

ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহতাবউদ্দিন বলেন ‘‘মুলত কন্টিনেন্টাল আর দক্ষিনপপূর্ব এশিয়ার খাবারের আয়োজন আছে এখানে।’’ এই দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার খাবারের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ান, মালয় ও থাই খাবারের আধিক্য।   

বিশেষ খাবারের মধ্যে পাওয়া যাবে গলদা চিংড়ি প্রতি ১০০ গ্রাম পড়বে ৩৬০ টাকা, জানালেন ব্যবস্থাপক।

রন্ধনশিল্পীদের মধ্যে একজনের রয়েছে বাহরাইনের একটি পাঁচতারা হোটেলে ৪ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা, কথার ফাঁকে জানান মাহতাবউদ্দিন।    

২ জনের জন্য ৩ কোর্স ডিনার করলে ট্যাক্স ছাড়া দিতে হবে ন্যূনতম ১৫০০ টাকা।

ওয়াইফাই আছে। খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা।