ঘাবড়ানোর কিছুই নেই। এরকম সমস্যায় যদি কেউ পড়েন তবে বুঝতে হবে মুখের নার্ভে এমন কোনো সমস্যা হয়েছে যার ফলে মুখের মাংশপেশী স্বাভাবিক কাজ কর্মের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যাকে ডাক্তারী ভাষায় বেল’স পলসি বলে। এটি মুখ অবশ রোগ নামেও খ্যাত।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন, ডিপিআরসি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মোঃ সফিউল্যাহ প্রধান।
মানুষের মুখমণ্ডল এক বিশেষ ধরনের মাংশপেশী দিয়ে তৈরি। যার সাহায্যে মানুষ মুখের মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ করে কথা না বলেও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। মুখমণ্ডলে মানুষের সৌন্দর্য ও দৈনন্দিন কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অঙ্গ যেমন- মুখ, নাক, চোখ, কপাল, কান ইত্যাদি রয়েছে। যেগুলোর সাহায্যে মানুষ খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, শ্বাস গ্রহণ করা, দেখা, শোনার মতো কাজগুলো করে থাকে।
এ সব কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদনের জন্য মুখে কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট মাংশপেশী রয়েছে। যেগুলোকে আদেশ নির্দেশ প্রদানের জন্য মগজ থেকে কানের পাশ দিয়ে নেমে সপ্তম ক্রেনিয়াল বা ফেইশল নার্ভ ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে মুখমণ্ডলের বিভিন্ন মাংশপেশীকে সচল রাখে। কোনো কারণে মস্তিষ্কের ক্রেনিয়েল বা ফেইশল নার্ভে প্রদাহ, প্রতিবন্ধকতা বা যদি আঘাত পায় তবে মাংশপেশী স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
যদিও বেল’স পলসির সঠিক কারণ অনেক ক্ষেত্রেই জানা কঠিন। তবে ফেইশল নার্ভের ভাইরাস আক্রমণ, অতিরিক্ত ঠাণ্ডার আঘাত, স্ট্রোক— এ সব কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
মুখমণ্ডলের স্বাভাবিক কাজের জন্য যেসব প্রধান মাংশপেশী কাজ করে:
১। অক্সিপিটর ফ্রন্টালিস- ভ্রু উপরে উঠায়।
২। করোগেটর ও প্রসেসিস- ভ্রু কুচকায়।
৩। অরবিকুলার অকুলি- চোখ বন্ধ করে।
৪। জাইগো মেট্রিক- মেজর ও মাইনর (উপরের ঠোঁটসহ মুখের কোণা উপরে ওঠায়।)
৫। বাক্সিনেটর- গাল ফোলায়, চুষতে সহায়তা করে।
হঠাৎ করেই এ রোগ হতে পারে। হওয়ার আগে অনেক সময় মাথা ব্যথাসহ মুখের যে দিকে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে সেদিকের কানের গোড়ায় ব্যথা করতে পারে। তারপর হঠাৎ করেই চোখ বন্ধ করতে, কথা বলতে, কপাল কুচকাতে বা উপরে তুলতে, থুথু ফেলতে, পানি পান করতে, খাবার চিবাতে অসুবিধাসহ মুখ এক দিকে বেঁকে যেতে পারে।
চিকিৎসা
স্নায়ুবিক সমস্যা থেকে মাংশপেশীর অবশতা থেকেই এই রোগ হয়। তাই প্রধান চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে একজন নিউরো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো প্রয়োজন বোধে স্টিরয়েড, ভিটামিন এবং পাশাপাশি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সাধারণত ইলেক্ট্রিক নার্ভ ইস্টিমুলেশনসহ পদ্ধতিগত চিকিৎসা ব্যায়াম ও মালিশ উপকারী। ব্যায়ামগুলো হল:
১। জোর করে চোখ মারার চেষ্টা করা।
২। শিশ বাজানোর চেষ্টা করা।
৩। ঠোঁট চেপে ধরে গাল ফোলানোর চেষ্টা করা।
৪। কপাল কুচাকানো।
৫। ভ্রু কুচকানো ইত্যাদি।
এছাড়াও শক্ত খাবার আক্রান্ত গালে খেতে হবে এবং অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাওয়া বা লাগানো থেকে দূরে থাকতে হবে।
এ সমস্ত রোগীর চিকিৎসায় ক্ষেত্র বিশেষে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। মনে রাখবেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ফেইশল প্যারালাইসিস রোগের একমাত্র এবং মূল চিকিৎসা।
ছবির মেয়ে মডেল: সালমিন।
ছবি কৃতজ্ঞতায়: ই স্টুডিও।