রেস্তোরাঁয় বৈশাখ

বাঙালি হয়ে পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাবেন না, তা কী করে হয়! একদিনের বাঙালি হওয়ার জন্য পানি-ভাত ছাড়াও তো রয়েছে নানান দেশীয় খাবার। নববর্ষে সেসব খাবারের আয়োজনও করে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ।

ফজলে আজিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2014, 10:48 AM
Updated : 12 April 2015, 11:01 AM

রমনায় পান্তা-ইলিশ খেতে না পারলেও এসব রেস্তোরাঁয় দেশীয় খাবারের স্বাদ নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারেন বাংলা বর্ষের প্রথম দিন।

বিউটি বোর্ডিং, ১ নং শ্রীশদাস লেন, বাংলাবাজার।  

বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকদের আড্ডা যেখানে জমে উঠত, কথার ফুলঝুরি থেকে তৈরি হত কবিতার মালা কিংবা গানের সুর, পুরান ঢাকার সেই বিউটি বোর্ডিয়ের বৈশাখি আয়োজন নিয়ে জানালেন পরিচালক তারক সাহা। 

খাবারের বিশেষত্ব শুধু বৈশাখ এলেই নয়, সবসময়ই এখানে থাকে দেশীয় খাবারের আয়োজন। ব্রিটিশ আমলের বাড়িতে এখনও চলে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডা। কম খরচে মানসম্মত খাবার আর ইতিহাস আলোকিত করা ব্যক্তিদের আড্ডার জায়গা হিসেবে এখনও বিউটি বোর্ডিং পুরান ঢাকায় এক নামেই পরিচিত। ১৯৫০ সাল থেকে দোতলা বাড়িটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

এবারের বৈশাখ নিয়ে তারক বলেন, “বৈশাখ নিয়ে বিশেষ আয়োজন থাকছে না। আগে প্রতি বছর ‘বৈশাখি আড্ডা’ আয়োজন করা হত। সেখানে যোগ দিতেন দেশের নামকরা বুদ্ধিজীবীরা। এখন তাদের অনেকেই প্রবীণ হয়ে গেছেন। তাই এক টেবিলে সবাইকে পাওয়া সম্ভব নয়।”

তারপরও পহেলা বৈশাখে খাবারের তালিকায় থাকছে পোলাও, ইলিশ ভাজা, আম-ডাল, পাঁচমিশালি সবজি আর চাটনি। ভর্তাসহ বিভিন্ন রকম মাছের রান্নাও থাকবে। আম-ডাল বৈশাখের গরমে চমৎকার একটি খাবার।

তারক সাহা আরও জানান, এখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার রান্না করা হয়, তাই সবসময় টাটকা খাবার পাওয়া যায়। 

নিরব হোটেল, ১১৩/২, নাজিমউদ্দিন রোড, ঢাকা-১১০০।

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত নিরব হোটেলের ব্যবস্থাপক এবারের বৈশাখ নিয়ে জানিয়েছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বললেন, “এবার ইলিশের সরবরাহ কম, দামও বেশি। তাই খাবারের তালিকায় ইলিশ থাকছে না।” 

তবে, ১৫-২০ পদের দেশি খাবারের পদ থাকবে। সাধারণত ৭-৮ পদের ভর্তা সবসময়ই থাকে। এর মধ্যে কলা, ডাল, বেগুন, আলু ও চিংড়িভর্তা বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া তিন পদের শুটকিভর্তা প্রতিদিনই থাকে। ভাজির মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের শাক ও করলা ভাজি। এছাড়া কয়েক পদের মাছ ও মাংস থাকবে। চাইলে খাবার অর্ডার দিয়ে নিয়েও যাওয়া যায়।

এখানের খাবার দামে অপেক্ষাকৃত সস্তা। কাঁচকি ও চাপাশুটকির প্রতিটি পদ ২০ টাকা। লইট্যা ও চিংড়িভর্তা ৪০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য ভর্তা ও ভাজি ১৫ টাকা। 

অতিথিদের মনোরঞ্জনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সোনার গাও হোটেলে রাখা হয়েছে গ্রুপার মাছ।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল

বাংলা নববর্ষ ১৪২১ উপলক্ষে ১২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল হোটেলের লবিতে দেশীয় ঐতিহ্যের এক মেলার আয়োজন করছে। যেখানে বৈচিত্র্যময় দেশীয় পণ্য, বস্ত্র ও কুটিরশিল্প এবং মজাদার সব খাবারের সমারহ থাকছে।

প্রতি বছরের মত ‘ক্যাফে বাজার’-এ বৈশাখি আমেজের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজনে আছে বাঙালির চিরন্তন পছন্দের ইলিশ ভাজা। থাকছে শুঁটকি ও নানান রকম ভর্তা। রেস্তোরাঁর ‘সালাদ বার’-এ পরিবেশন করা হবে বরফি, মিক্সড ভেজিটেবল স্টিক, মিক্সড দেশি সালাদ, মশলাদার কুমড়ো সালাদ, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, পুদিনা ও টমেটোর চাটনি ও নানান রকম আচার।

এছাড়া ডেজার্ট হিসেবে থাকছে তাজা ফল, পিঠা, সেমাই, ফিরনি, রসমালাই, মিষ্টি দই, গুঁড়ের পায়েসসহ আরও অনেক কিছু।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে ধরা একটি বিশাল গ্রুপার মাছ রেখেছে। যা শুধুই দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়।

কস্তুরি রেস্তোরাঁর বৈশাখি আয়োজন ফ্রাই।

কস্তুরি, পুরানা পল্টন, ৮ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০।

পহেলা বৈশাখে অতিথিদের বরণ করতে প্রস্তুত এই রেস্তোরাঁ। বৈশাখি সাজে সজ্জিত সিঁড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় থাকছে তরমুজ দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা। আর বিদায়ের সময় থাকছে পান।

এখানে পহেলা বৈশাখে থাকবে শর্ষে-ইলিশ আর কাসুন্দি দিয়ে রান্না পাটশাক। শুটকির ভর্তাও থাকবে। আছে মাছের বেশ কয়েকটি পদ। শিশুদের জন্য থাকবে পোলাও আর মুরগির কোর্মা। ৮০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে।

হোটেল ওয়েস্টিন, ঢাকা।

বাঙালিয়ানায় বৈশাখ বরণ করতে এখানে থাকছে মুখরোচক দেশীয় খাবার। ইলিশ, নানান স্বাদের ভর্তাসহ বিভিন্ন পদ। হোটেল সংলগ্ন সাউথ পার্কে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল আয়োজন হবে বৈশাখি মেলা।

চাইলে এখানে খাবার অর্ডার দিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। স্প্ল্যাশে বয়ে যাওয়া ঝরনা পাশে বসে উপভোগ করতে পারেন ‘স্প্ল্যাশ’ বৈশাখি আয়োজন। যেখানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে হকার্স মার্কেটের রূপে। রাস্তায় যেভাবে খাবার বিক্রি করা হয় এখানেও সেভাবে বসানো হবে খাবারের পসরা। এই আয়োজনে থাকছে দই-ফুচকা, চটপটি, বিভিন্ন দেশীয় পিঠা ও মিষ্টি।

সাউথ পার্কে আয়োজিত মেলায় আরও থাকছে বাউল গানের পরিবেশনা, ফেইস পেইন্টিং, নাগরদোলা রাইড, ফ্যাশন শো ও শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা।

কুটুম বাড়ি

কুটুম বাড়ি , ২/১২, ব্লক এফ, লালমাটিয়া।

বাংলা বছরের প্রথম দিনই 'কুটুম' হয়ে উদরপূর্তি করে আসতে পারেন লালমাটিয়ার এই রেস্তোরাঁয়। তাদের বিভিন্ন ধরনের দেশীয় খাবারের আয়োজনে আছে— পান্তা-ইলিশ, ইলিশ-পোলাও ও ইলিশ খিচুড়ি। ভর্তার মধ্যে— টাকি-ভর্তা, চাপা-শুটকির ভর্তাসহ ৮ পদের ভর্তা। বিশেষ আয়োজন হিসেবে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন খাবার। এছাড়া নিয়মিত পদ ইরানি বিরানি, ইরানি মোরগ পোলাও, দিল্লিকা খিচুড়িতো থাকছেই।

পুরান ঢাকা

পুরান ঢাকা, বাড়ি ১০৩, রোড ১৩/এ, বনানী।

তাদের বৈশাখি আয়োজনে আছে বায়োস্কোপ, বেলুন নিশানা ও ফটো কনটেস্ট।

খাবারের প্যাকেজগুলোও সাজানো হয়েছে ব্যতিক্রমভাবে।

ইলিশ ভাজা, চিকেন বিরিয়ানি ও গোলাপ জামুন পাওয়া যাবে ৫৫৫ টাকায়। পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা, ২ পদের ভর্তা ও গোলাপ জামুনের প্যাকেজের দাম ৫৮০ টাকা। ৬০০ টাকার প্যাকেজে থাকছে ইলিশ পোলাও, চিকেন রোস্ট ও গোলাপ জামুন। ৬৯০ টাকার প্যাকেজে থাকবে ১০ পদের ভর্তা, যার মধ্যে আছে ইলিশ, চিংড়ি, শুটকি, আলু, টমেটো, ডাল, বেগুন, মরিচ, সীম ও বরবটি। 

২ হাজার ১৫০ টাকার প্যাকেজে থাকবে আস্ত ইলিশভাজা। একসঙ্গে কয়েকজন খেতে পারবেন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাঁধুনি, ৩২ পুরানা পল্টন, ঢাকা -১০০০।

বর্ষবরণের কিছুদিন আগে আলাদা আয়োজন থাকলেও এবারে সে রকম কিছু থাকছে না বলেই জানান কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ঘরোয়া পরিবেশে এক সঙ্গে ৮০ জনের স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা আছে এখানে। খাবারের তালিকায় থাকবে খাশির ঢাল গোস্ত, মুড়িঘণ্ট। থাকবে ১৮ রকমের ভর্তা ও শুটকি। মুরগির ঝাল ফ্রাই ও রোস্ট।

Radisson Blu বৈশাখি খাবার।

Radisson Blu Hotel, Dhaka

বাংলা খাবারের আয়োজনের মধ্যে থাকছে— চিংড়িভর্তা, বেগুন ভাজি, চিতলমাছের কোফতা। ইলিশ ভাজা তো থাকছেই।

বুফে লাঞ্চ ও ডিনারে পহেলা বৈশাখের এসব খাবারের আয়োজন রাখা হয়েছে। আরও আছে নানান ধরনের পিঠা।

মিঠাইয়ের মধ্যে আছে গুড়ের সন্দেশ।

বৈশাখের আবহ ষোলআনা পূর্ণ করতে থাকছে বাংলা গানের ব্যবস্থা।

ছবি: স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে