নববর্ষের মঙ্গলায়োজন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে লাগবে রংয়ের ছটা। চারপাশে উৎসবের আমেজ। মনপ্রাণ আপনাতেই নেচে উঠে। বোঝা যায় জোরেসোরেই চলছে বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2014, 10:41 AM
Updated : 11 April 2014, 12:19 PM

চারুকলার শিক্ষার্থীদের আঁকা জলরংয়ের ছবিগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশেই সরাচিত্র, মুখোশসহ নানান ধরনের ঘর সাজানোর সরঞ্জাম। এগুলোও তাদেরই কষ্টের ফল।

সব মিলিয়ে চারুকলা প্রাঙ্গণ যেন রঙিন মেলা। প্রবেশপথ দিয়ে একটু সামনে এগুলেই দেখা যাবে ছাঁচে আঠা দিয়ে কাগজ সেঁটে চলছে মুখোশ বানানো। সেগুলো রোদে শুকানোর পরই রংয়ে সাজানো হবে। বেশকিছু মুখোশ তৈরি হয়ে গেছে, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

চারুকলার ভেতর খোলা জায়গায় চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিকৃতি নির্মাণের কাজ। বাঁশ, কঞ্চি বিভিন্ন আকারে কেটে, জোড়া দিয়ে বিভিন্ন পশুপাখির কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। পহেলা বৈশাখের আগেই রংয়ের টানে সেগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠবে।

এখান থেকে সংগ্রহ করা যাবে পছন্দমতো মুখোশ বা সরাচিত্র। ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই আয়োজন। চলবে ১৩ এপ্রিল রাত পর্যন্ত।

মুখোশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে রাজারানির জোড়ামুখোশ, দৈত্য, প্রতিমা, সর্দার, চোখসহ নানান আকৃতি। এসব মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রায় হাঁটতে চাইলে খরচ করতে হবে ১৫শ’ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাছাড়া ছোট আকারের বেশকিছু মুখোশ রয়েছে যেগুলোর দাম ৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।

প্রতিবারের মতো এবারও থাকছে সরাচিত্রের আয়োজন। ঘর সাজানোর জন্য বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে রঙিন নকশায় ভরিয়ে তোলা হয়েছে মাটির ঢাকনাগুলো। কাজ ও নকশাভেদে দাম পড়বে ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

৮০ টাকা থেকে শুরু চোখে ধরার বিভিন্ন আকৃতির ছন্মবেশগুলোর দাম।

যারা ছবি পছন্দ করেন তারা যদি চারুকলার শিক্ষার্থীদের আঁকা জলরংয়ের ছবিগুলো কিনতে চান তাহলে গুনতে হবে ৩শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা।

শুধু মুখোশ, সরাচিত্র বা জলরংয়ের ছবি নয়, চারুকলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে আরও অনেক ধরনের হাতের কাজের ঘরসাজানোর শিল্পকর্ম।

এ আয়োজনের অন্যতম সংগঠক চারুকলার ড্রয়িং অ্যান্ড পেইনটিং বিভাগের মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র জুয়েল এ. রব বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন, প্রতিকৃতি তৈরি আর কর্মরত ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্যই এসব শিল্পকর্ম বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।”

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকছে একটি মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘জাগ্রত কর, উদ্যত কর, নির্ভয় কর হে।’

 

জুয়েল আরও বলেন, “এবারের শোভাযাত্রার প্রতিকৃতিগুলোর মধ্যে থাকছে ময়ূর, হাঁস, বাঘের পিঠে টেপা পুতুল, যামিনী রায়ের বিড়াল এবং দুটো বাঘের মাথা।”

২৫ বছর ধরে চলে আসছে চারুকলার এই আয়োজন। এবার অনুষ্ঠিত হবে ২৬তম মঙ্গল শোভযাত্রা। শুধু বৈশাখের প্রথম দিনেই নয়, চৈত্রের শেষদিনে আর বৈশাখের দ্বিতীয় দিনেও থাকছে বিশেষ আয়োজন।

১৩ এপ্রিল বিকেল ৫টায় শুরু হবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার সমস্ত আয়োজন থাকবে এই দিনে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের জন্য আয়োজন করা হবে বাংলা খাবার। তাছাড়া হালখাতা তো থাকছেই।

এরপরই শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

পালাগান, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গান ও নাচ। থাকছে গানের দল ‘জলের গান’য়ের পরিবেশনা।

১৫ এপ্রিল হবে যাত্রাপালা। চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের আয়োজনে এবারের যাত্রা ‘তাজমহল’। শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।

 

জয়নুল আবেদিনের নিজের হাতে গড়া বাচ্চাদের যে স্কুল ঘরটি রয়েছে তাও প্রতিবার রাঙানো হয় নানান সাজে। এবারে পুরনো বাংলা সিনেমার পোস্টারের ধাঁচে সাজানো হচ্ছে ঘরটি।

সব মিলিয়ে বাংলা নতুন বছর বরণ করার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। মঙ্গল শোভাযাত্রার স্রোতে ভাসতে হাতে একটি মুখোশ বা প্রতিকৃতি মন্দ নয়, আর এ নিয়ে প্রস্তুতির শেষ নেই।

তবে চারুকলার এই আসর শুধুই বৈশাখ। অন্য সময় গেলেও সেখানে চিত্রকর্ম এবং সরাচিত্রের দেখা মিলবে। তবে সেগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগেই বিক্রি করা হয়।