আবীর আবদুল্লাহর প্রদর্শনী: মৃত্যু ফাঁদ

বিকেল আনুমানিক সাড়ে চারটা। সংবাদ সংগ্রহের কারণেই বিশেষ অনুমতি মিলল উদ্বোধনের আগে আলোকচিত্রীর সঙ্গে কয়েক মিনিট আলাপ এবং সেই সূত্রে জনশূন্য গ্যালারিতে ছবি দেখার। আলিয়ঁস ফ্রসেজের লা গ্যালারিতে তখনও সবগুলো বাতি জ্বালানো হয়নি। আলো-আঁধারিতে দূরে এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে আগুন নেভাচ্ছেন এক অগ্নিনির্বাপন কর্মী। ওই পাশে তেজগাঁওয়ে ধ্বসে পড়া ফিনি· ভবন থেকে অচেতন দেহ বের করে নিয়ে আসছেন আরেক কর্মী। সব সাদাকালো ছবি, আগুনের লাল রং দেখা যায় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্যালারিতে আগুনের তাপও লাগে না গায়ে। তবু পোড়ায়।

হাসান বিপুলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2014, 03:24 PM
Updated : 10 April 2014, 03:24 PM

আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের উৎপাদনখাতে সংঘটিত দুর্ঘটনার ছবি তুলছেন। সেই কাজের অংশ হিসেবে তিনি একের পর এক ভবনধস ও অগ্নিকাণ্ডের ছবি ধারণ করেছেন। ওই ছবি নিয়েই ‘মৃত্যু ফাঁদ’ নামে বৃহস্পতিবার এক প্রদর্শনীর উদ্বোধন হল ধানমণ্ডির আলিয়ঁস ফ্রসেজে।

আবীর বললেন, “নানা কারণে আগুন লাগে। কখনও এত তুচ্ছ কারণে এই আগুনের সূত্রপাত হয়, তা হয়ত একটু সচেতনতার মাধ্যমেই রোধ করা যেত।”

৩৩টি ছবিতে উদ্ধার কার্যক্রম, অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা, অসহায়ত্বসহ নানামাত্রার গল্প তুলে এনেছেন আলোকচিত্রী। “রাজধানীবাসী যে প্রতিনিয়ত আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে-- এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আমি বেশকিছু বছর ধরে কাজ করছি। আমি আমার কাজের মধ্যদিয়ে দেখেছি, অগ্নিকাণ্ডের সময় সাধারণ মানুষ অন্যকে বাঁচাতে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখে। যথার্থ প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের ঘাটতিসহই উদ্ধার কর্মীরাও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডে আহত ও ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।”

আবীর বলেন, “নিমতলী থেকে তাজরিন, বসুন্ধরা সিটি থেকে বিএসইসি ভবন, প্রতিটা অগ্নিকাণ্ডের পরই আলোচনা হয়, বলা হয়-- এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয় তা আমরা সম্ভবত সবাই জানি।”

অগ্নিকাণ্ডবিষয়ে নানা মন খারাপ করা ছবি আর গল্পের পাশাপাশি আশাও প্রকাশ করলেন আলোকচিত্রী। বললেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমার ছবিগুলো সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং আশা করি, একটি গোটা জনগোষ্ঠীর জান-মাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এই ছবিগুলো অনুঘটকের কাজ করবে।”

প্রামাণ্য আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ সংবাদচিত্রের পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী আলোকচিত্র প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছেন। জিতেছেন মাদার জোন্সসহ একাধিক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। আলোকচিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘পাঠশালা: সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি’র সাবেক উপাধ্যক্ষ আবীর কাজ করেছেন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক হিসেবেও।

সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনীটি চলবে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত।  সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে, তবে রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।