ঝুঁকিপূর্ণ খাবার

বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো চমৎকার একটি সন্ধ্যার কথা মনে করুন তো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বা অফিস শেষে সবাই মিলে কোনো এক ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকে একগাদা খাবার অর্ডার দেওয়া, তারপর হুল্লোড় করে খেয়ে-দেয়ে জম্পেশ আড্ডার পর ঘরে ফেরা। আর এভাবেই রাতটা পার করা। এভাবে সন্ধ্যা কাটিয়ে মনের ক্লান্তি তাড়ান যতটাই জুতসই, ঠিক ততটাই কিন্তু ক্ষতিকর আপনার স্বাস্থ্য ও নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের জন্য।

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2014, 02:31 AM
Updated : 23 Feb 2014, 02:31 AM

তাহলে উপায় কী? বন্ধুদের আড্ডা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া? নাকি আড্ডায় গিয়ে ‘কিছু খাব না’ বলে ক্ষুধা পেটে মুখ গোমরা করে বসে থাকা?

এসবের কোনো কিছুরই আসলে প্রয়োজন নেই। আড্ডায় যাবেন। খাবারও খাবেন, বন্ধুদের সঙ্গও দেবেন। শুধু কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলুন। আর খেতেই যদি হয় তবে একবাটি সালাদ খেয়ে এরপর খান বন্ধুদের অর্ডার দেওয়া খাবারের সামান্য অংশ।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ আসফিয়া আজিম।

পাস্তা: এক প্লেট পাস্তায়, এক প্লেট ভাতের থেকেও বেশি ক্যালরি থাকে। পাস্তা আসলে কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার। এই খাবারের সঙ্গে যখন চিজ বা অলিভওয়েল মেশানো হয় তখন এর ক্যালরিগুণ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই সন্ধের পর পাস্তা যদি খেতেই হয় তবে সালাদ বা সুপ খেয়ে এরপর ছয়জন মিলে খান এক বাটি পাস্তা।

এক প্লেট পাস্তায়, এক প্লেট ভাতের থেকেও বেশি ক্যালরি থাকে।

এক টুকরা পিৎজা শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি নির্জীব করে দেয়। ছবি: হাসান বিপুল/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

পিজা: এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। চিইজি জুসি, পিৎজার একটি কামড় ‘মন’কে ঝটপট চাঙা করে দেয়। আবার এই এক টুকরা চিইজি পিৎজাই পারে শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি নির্জীব করে দিতে। পিৎজার ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ খুব বেশি অর্থাৎ সামান্য পিৎজাও আমাদের শরীরে খুব তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে রক্তে চিনি’র পরিমাণ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। যা শরীরে চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে অল্প সময়ে ওজন বাড়ায়।

মিষ্টি: ক্যান্ডি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেলে আপনি দুঃস্বপ্ন দেখবেন। হাসছেন? বিষয়টা কিন্তু সত্যি। যেকোনো সুগারি খাবার ব্রেনকে অতিরিক্ত সচল করে তোলে। আমাদের শরীর যেকোনো খাবার থেকেই তার প্রয়োজনীয় জ্বালানিটুকু সংগ্রহ করে    নেয়। আলাদা করে চিনি বা সুগারি কিছু খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই রাতে প্রশান্ত, সুন্দর, বিরতিহীন ঘুম চাইলে বিকেলের পর ক্যান্ডি, মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিন।

মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেলে আপনি দুঃস্বপ্ন দেখবেন। ছবি: হাসান বিপুল/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

রেড মিট হজম হতে সময় নেয় বেশি।

রেড মিট: যদিও প্রোটিন আর আয়রনের খুব ভালো উৎস, তবে ২৫ বছর বয়সের পর এই খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে থাকুন। রেড মিট হজম হতে সময় নেয় বেশি। আর আমাদের শরীরের মেটাবলিক-প্রক্রিয়া বিকেলের পর থেকেই ধীর হতে শুরু করে। ফলে সন্ধ্যার পর রেড মিট খেলে তা ভালোভাবে হজম হয় না, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চকলেট: ডার্ক চকলেট হার্টের জন্য উপকারী। এক টুকরা ডার্ক চকলেট দিনের যেকোনো সময়ে আপনি খেতেই পারেন। সন্ধের পর এই চকলেট বা এই চকলেট দিয়ে বানানো কোনো খাবার দিকে হাত না বাড়ানোই ভালো। ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইন বেশি থাকায় এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। 

ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইন বেশি থাকায় এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

বাঁধাকপি ও ব্রোকলিতে আঁশের পরিমাণ বেশি, ফলে অনেক রাতে খেলে হজমে অসুবিধা হয়।

বাঁধাকপি, ব্রোকলি: রাতের খাবারে ব্রোকলি বা বাঁধাকপির সুপ বা দেশি মসলায় রান্না পাতলা ঝোলের তরকারি হিসেবে খেতে পারেন বাঁধাকপি। তবে এই সবজিগুলো সালাদ হিসেবে বা প্রচুর পরিমাণে বেশি রাতে না খাওয়াই ভালো। বাঁধাকপি ও ব্রোকলিতে আঁশের পরিমাণ বেশি, ফলে অনেক রাতে খেলে হজমে অসুবিধার সৃষ্টি করবে, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে।

পানীয়: কোক, কফি, চা-এসবে ট্যানিন এবং ক্যাফিন দুটোই উপস্থিত। যা মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত সচল আর উদ্দীপিত করে তোলে। সন্ধ্যার পর তাই চা, কফি, কোক না খাওয়াই ভালো।

চিপস: কুড়মুড়ে চিপস খেতে কিন্তু দুর্দান্ত। তবে চিপসে প্রচুর পরিমাণে তেল থাকে, ফলে এতে ক্যালরির পরিমাণও অনেক বেশি। ১০০ গ্রামের এক প্যাকেট চিপস থেকে প্রায় ৫২৫ কিলো-ক্যালরি পাওয়া যায়। যেখানে সারা দিনে একজন মানুষের প্রয়োজন ১৮শ’ থেকে ২ হাজার কিলো-ক্যালরি। ভেবে দেখুন, সামান্য এক প্যাকেট চিপস সারাদিনের ক্যালরি চাহিদার ৪ ভাগের ১ ভাগ পূরণ করে দিতে যথেষ্ট। পাশাপাশি চিপসে লবণ বেশি থাকে, তাই এই খাবার ব্লাডপ্রেসার বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও একটি বড় ভূমিকা রাখে।

তাই মুভি দেখার সময় কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় চিপসের প্যাকেটের বদলে বাদাম খান বা  ছোলা-মুড়ি। খাবার দুটি দেখতে অতটা স্মার্ট না হলে কী হবে, আপনাকে স্মার্ট আর ছিপছিপে রাখতে এদের জুড়ি মেলা ভার।