শীতে শিশুর পরিচর্যা

যে কোনো ধরনের অসাবধানতা থেকে শিশুদের ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। তাই এই শীতে শিশুর জন্য অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি যত্ন নিন। পরামর্শ দিয়েছেন নিবেদিতা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল হক।

মরিয়ম মনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2014, 03:06 AM
Updated : 23 Jan 2014, 08:25 AM

অন্য মৌসুমের চেয়ে শীত ঋতুর বিষয় আলাদা। এ সময়ে শিশুর প্রতি রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতা। শিশু মায়ের পেটে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রায় সে শীত অনুভব করে। তা ছাড়া শিশুর শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি হতেও সময় লাগে। তাই যে শিশু কিছুদিন হল পৃথিবীতে এসেছে তাকে উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখুন।

যদি ঘরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি হয়, তবে সুতিকাপড় পরিয়ে কাঁথা দিয়ে মুড়ে রাখুন। এই মাত্রার নিচে হলে সোয়েটার ব্যবহার করতে পারেন। শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। ফলে শিশু সহজে ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয় না। যেসব শিশু কোনো কারণে বুকের দুধ খায় না বা পায় না, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

দিনের বেলা জানালা খুলে রোদ ও (ঠাণ্ডা বাতাস এলেও) নির্মল বাতাস ঘরে ঢুকতে দিন। ঘরের মধ্যে কাপড় না শুকিয়ে অবশ্যই রোদে শুকান। বাচ্চাকে দোলনায় বা আলাদা মশারির নিচে না রেখে মায়ের কোলঘেঁষে শোয়াবেন। এতে বাচ্চা উষ্ণ থাকবে, মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়বে এবং বুকের দুধ খাওয়াতে সুবিধা হবে।

যদি পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো আত্মীয়ের সর্দি, কাশি, ভাইরাস জ্বর ইত্যাদি থাকে তবে তারা মা ও শিশুর কাছে আসা থেকে বিরত থাকুন। শিশুকে শীতকালে ঘরের বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

রোদে দিতে হলে জানালার পাশে বা ঘরের বারান্দা থেকে রোদ লাগান। তবে নবজাতককে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে গোসল করানোর দরকার নেই। বাচ্চার নাভি না শুকানো পর্যন্ত তাকে গোসল করাবেন না। সপ্তাহে দু’দিন গোসল করানোই যথেষ্ট।

গোসলের আগে ঘরের দরজা-জানালা লাগিয়ে নিন। গোসলের জন্য প্রয়োজনীয় হালকা গরম পানি (৪৫০ ডিগ্রি), নরম কাপড় বা স্পঞ্জ, তোয়ালে, ভ্যাসলিন, ডায়াপার ইত্যাদি সব হাতের কাছে গুছিয়ে নিয়ে গোসল করাতে বসুন।

নবজাতকের সামান্য কাশি বা হাঁচিও কিন্তু সন্দেহজনক। তাই কাশি, শব্দ করে শ্বাস টানা, দুধ টেনে খেতে না পারা, শ্বাস নিতে কষ্ট বা পাঁজর নিশ্বাসের সঙ্গে বেঁকে যেতে থাকলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

যা করবেন না

* শিশুকে অতিরিক্ত সোয়েটার পরিয়ে রাখবেন না। এতে ঘাম জমে সেই ঘাম শীতকালীন ঠাণ্ডা বাতাসে শুকিয়ে শিশুর সমস্যা তৈরি করতে পারে।

* শিশুর গায়ে বেবি-অয়েল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন।

* শিশুকে রাতের বেলা ডায়াপার পরিয়ে শোয়ান।

* শীতকালে নবজাতকের মাথা কামানো যাবে না।

* শিশুর নাক বা মুখের ওপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি দেবেন না।

দেড় মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুর যত্ন

* শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ রাখুন। ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। স্যাঁতসেঁতে ঘরেও তাকে রাখা ঠিক হবে না।

* বাচ্চাকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান। ফিডারে খাওয়ালে অল্প গরম দুধ দিন। ঘুমের মধ্যে ঠাণ্ডা দুধ দেবেন না।

* ছয় মাসের বেশি হলে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিন। খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, লাল শাক, পালং শাক অল্প করে দিতে পারেন। লেবুর রস দেবেন, কমলার রস খাওয়াবেন। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে।

* যেসব বাচ্চা হামাগুড়ি দেয়, দেখবেন তারা যেন ঠাণ্ডা মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। তবে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ কার্পেটের রোয়া বা ধুলা থেকে অ্যালার্জি হয়। তাই মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করা ভালো।

* ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ১ দিন অন্তর গোসল করান। গোসলের পর বেবি লোশন লাগাবেন। তেল-জাতীয় কিছু লাগাবেন না।

* বাচ্চাকে নরম কাপড়ের জুতা পরানোর অভ্যাস করুন। শোয়ানোর সময় মোজা পরিয়ে শোয়ান। তবে উলের মোজা পরানোর প্রয়োজন নেই।

* এ বয়সী বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই সর্দি, কাশি সহজেই লেগে যায়। বাচ্চাকে খুব জনবহুল জায়গায় (মেলা, পিকনিক) না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

১ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুর যত্ন

* এই বয়সে শিশুরা অনেক খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। তাই খুব বেশি গরম ও ভারী কাপড় পরার প্রয়োজন হয় না। তবে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ও বিকেলে খেলতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত উষ্ণতা নিশ্চিত করুন।

* বাচ্চাকে স্কুলে পাঠালে পরস্পরের মাধ্যমে শীতকালে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগ হতে পারে। তাই বাচ্চার ত্বকের প্রতি খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।

* শীতকালীন শাকসবজি ও ফল-কমলা, বরই বেশি করে খেতে দিন।

শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে শীতের আবহকে উপভোগ করুন পরিপূর্ণভাবে।

আগের বছরে ব্যবহৃত শিশুর শীতের পোশাকের যথাযথ যত্ন নিন। শীত এলে সেগুলো ব্যবহারের সময় আসে। ফলে সেগুলোর যথাযথ যত্ন এখনই নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে তা হলো-

শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ঝেড়ে ঘরে রাখতে হবে। আর ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসবের ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।

নবজাতকের মায়েরা ছোট্ট শিশুটিকে সামলাতেই ব্যস্ত সময় পার করেন। তাই নিজের প্রতি খেয়াল করে ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ জন্য বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় ত্বকচর্চার অনুষঙ্গগুলো আনিয়ে নিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।

সদ্য নবজাতকের যত্নে বেছে নিতে পারেন ভালো কোনো ব্র্যান্ডের বেবি লোশন, বেবি অয়েল, যা আপনার পারিবারিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়।

শীতে মেয়েদের একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। কেননা মেয়েরা ঘরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রে কাজ করে। এ ছাড়া ঘরে সন্তানের লালনপালনের কারণে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া অনেক মা-ই ভুলে যান। তাই এ সময় মেয়েদের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত।

শিশু মডেল : মাদিহা ও তাহসিন

মডেল : বৈশাখি

ছবি : অপুর্ব খন্দকার ও আরিফ আহমেদ