মৌসুমি সাজ-পোশাক

বর্ষা শেষেও চলে মেঘের ঘনঘটা। মাঝেমধ্যে এক পসলা বর্ষণ। ঋতু বদলের প্রভাব প্রকৃতিতে ফুটে ওঠার পাশাপাশি সাজপোশাকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই মেঘ তো এই রোদ্দুর। গ্রীষ্মের মতোই থাকে রোদের তাপ। তাই এই সময়ে মেইকআপ করাটাও ঝামেলার বিষয়। সাজগোজ করে বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটায় পুরোটাই মাটি। আবার মেঘলা দিন দেখে ঘরে বসে থাকাও সম্ভব নয়। এরপরও কোনো না কোনো উপায় তো অবশ্যই আছে।

মরিয়ম সেঁজুতিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2013, 02:27 AM
Updated : 14 August 2013, 12:25 PM

বৃষ্টির দিনে সাজ পোশাক একটু ভেবেচিন্তে করতে হয়। বেছে নিন এমন পোশাক, যাতে বৃষ্টিতে ভিজলেও আপনাকে খারাপ না দেখা যায়। গরমের জন্য আরামদায়ক পোশাক হচ্ছে সুতি। তবে বৃষ্টির দিনে সুতির আরাম বাদ দিয়ে জর্জেট, শিফনসহ অন্যান্য কৃত্রিম তন্তুর পোশাক পরা ভালো। কারণ কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক ভিজলেও তেমন ক্ষতি হয় না। শুকায়ও তাড়াতাড়ি।

রংয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো উজ্জ্বল রং বেছে নিতে পারেন। যেমন ফিরোজা, লেমন, হলুদ, গোলাপি, কমলা, লাল ইত্যাদি।

বর্ষার পোশাক সম্পর্কে বিবিয়ানা ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, “এই মৌসুমের উপযুক্ত কাপড় হল ভালো জর্জেট কাপড়ের পোশাক। তবে জর্জেটে যাদের এলার্জি আছে তারা এ সময়ে সিফন, টিস্যু কিংবা মসলিন কাপড়ের পোশাকও ব্যবহার করতে পারেন। জর্জেটের মতো এসব কৃত্রিম তন্তুর পোশাকও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। পরে ইস্ত্রি করার তেমন ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় না।”

বিবিয়ানাসহ বিভিন্ন দেশীয় তৈরিপোশাকের প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে বর্ষা উপযোগী ফতুয়া এবং সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যায়। দাম, ফতুয়া ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। সালোয়ার কামিজ ১২শ’ টাকা থেকে ১৮শ’ টাকা।

এছাড়া চাঁদনী চক, গাউছিয়া, মৌচাক, মিরপুর হকার্স মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটসহ প্রায় সব মার্কেটেই বর্ষা-গরম উপযোগী পোশাক পাওয়া যায়।

তরুণদের জন্য রয়েছে থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, পাতলা কাপড়ের জিন্স, গ্যাবার্ডিন প্যান্টসহ নানান পোশাক। রাজধানীর বঙ্গ মার্কেট ও নিউমার্কেটের দক্ষিণ অংশের দোতলা-তিনতলা জুড়ে কাপড়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় এসব পোশাক। দাম ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে দরকষাকষি করতে ভুলবেন না।

পোশাকের পাশাপাশি মেইকাপের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় এই সময়। ওম্যান’স ওয়ার্ল্ডের রূপ-বিশেষজ্ঞ কণা আলম জানালেন বিস্তারিত।

বেশি ভারি মেইকআপ এ আবহাওয়ায় না নেওয়াই ভালো। মেইকআপ করার আগে মুখমণ্ডলে কিছুক্ষণ বরফ ঘষে নিন। এরপর তেলমুক্ত সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

দিনের বেলায় ফাউন্ডেশন না লাগানোই ভালো। এর পরিবর্তে ফেইস-পাউডার লাগাতে পারেন। এতে ত্বক অনেক বেশি মসৃণ ও সুন্দর দেখাবে। একান্তই যদি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হয় তবে ম্যাট ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বক কম ঘামবে এবং কম তৈলাক্ত হবে।

ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর এর উপরে প্রয়োজনে পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে মুখের যেখানে সাধারণত বেশি ঘাম হয়। এবার পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে হালকা বাদামি রংয়ের আইশ্যাডো লাগালে অনেক বেশি সতেজ দেখাবে।

এছাড়া দিনের মেইকআপে আপনি হালকা বাদামি বা ব্রিক অরেঞ্জ-- এসব রং ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতের সাজটায় একটু গাঢ় করেই চোখটা সাজালে ভালো।

এক্ষেত্রে মেরুন, কফি, সবুজ, নীলচে শেইডগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ষা শেষ হলেও অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ মাশকারা এবং পেন্সিল আইলাইনার ব্যবহার করা উচিত। কারণ মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে।

দিনের সাজে চোখের নিচের পাতায় আইলাইনার কিংবা মাশকারা না লাগানোই ভালো। ব্লাশন এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হয়। যদি ব্যবহার করতেই চান তবে খুব সাবধানে পাউডার ব্লাশন ব্যবহার করুন। স্বাভাবিক ভাব আনতে আলতো হাতের ছোঁয়ায় পাউডার ব্লাশন লাগালে ভালো করবেন।

রাতের বেলা দুগালে হালকা করে গোলাপি, পিচ অথবা ব্রোঞ্জ রংয়ের ব্লাশন লাগিয়ে নিতে পারেন। লিপস্টিক বাছাইয়ে ম্যাট অথবা পাউডার ধরনের কিছু বাছাই করুন। ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ পিঙ্ক, কোরাল, ব্রোঞ্জ অথবা বিভিন্ন ফলের রং বেছে নিতে পারেন।

লিপ ব্রাশ ব্যবহার না করে আঙুল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। এতে ঠোঁটে এক ধরনের ন্যাচারাল শেইড আসবে। তবে লিপস্টিক লাগানোর আগে লক্ষ করুন,  যেন আপনার ত্বকের রংয়ের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

পোশাক আর ত্বকের পাশাপাশি চুলের সাজের প্রতিও লক্ষ নেওয়া উচিৎ। যাদের চুল লম্বা, তারা দুই বেণী অথবা খোপা করতে পারেন। যাদের চুল ছোট, তারা ক্লিপ দিয়ে ভালোভাবে আটকে নেবেন।

একইভাবে জুতার প্রতিও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির দিনে ‘সু’ না পরাই ভালো। স্লিপার, স্যান্ডেল, চটিজাতীয় জুতাই এই মৌসুমে উপযোগী।

রোদের ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টি হয় এখন। তাই যতটা সম্ভব ফরমাল পোশাক এড়িয়ে চলুন। ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে পারেন। তাই বলে নিজের ব্যক্তিত্ব আর স্মার্টনেস জলাঞ্জলি দিয়ে নয়।

তরুণরা যে কোনো আরামদায় পোশাক পরতে পারলেও কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে সাধারণ পোশাক পরা অনেক সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই নিজের পরিপাটি দিকগুলোকে ধরে রাখতে রেইনকোট কিংবা ছাতা ব্যবহার করা ভালো। বাজারে এখন অনেক ফ্যাশনেবল রেইনকোট পাওয়া যায়।

আবার কোনো কোনো সময় রোদ থাকে। মেঘ-বৃষ্টির খেলায় রোদের তাপ কম থাকলেও আল্ট্রাভায়োলেট-রে বা অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের বেশ ক্ষতি করে। তাই রোদে অবশ্যই ছাতা বা রোদচশমা ব্যবহার করুন।

পাশাপাশি কয়েকটি নিয়ম মেনে চলুন।

বাইরে থেকে বাসায় এসে ক্লিনজিং মিল্ক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন এবং ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ ক্রিম লাগান। ত্বকের দীপ্তি ঠিক রাখতে মধু, দুধের সর, চন্দনগুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

* ত্বকের মরা চামড়া ঝেড়ে ফেলতে এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব ব্যবহার করুন।

* খুব হালকা কিংবা খুব গাঢ় মেইকআপ না করে মাঝামাঝি মেইকআপ করুন।

* বাসায় ফিরে মেইকআপ তুলতে অবশ্যই ক্লিনজার ব্যবহার করুন।

পোশাকের ছবি : অপূর্ব খন্দকার

মেইকআপের ছবি : সৌজন্যে- ওম্যান’স ওয়ার্ল্ড