সানি লিওনির দাম ৫২ হাজার

ঈদ  ঘিরে বরাবরের মতো এবারও ঢাকার বিপণীবিতানগুলোতে ভারতীয় থ্রি-পিস ও থান কাপড়ের পসার জমেছে।

ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2013, 03:05 PM
Updated : 31 July 2013, 03:12 PM

নতুন নতুন ডিজাইন ও জাকজমকপূর্ণ এসব থ্রি-পিস পেয়েছে ভারতীয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র তারকাদের নাম। এর মধ্যে সবচেয়ে দামি থ্রি-পিসের নাম দেওয়া হয়েছে বলিউডের অভিনেত্রী সানি লিওনির নামে, আগে ইন্দো-কানাডিয়ান পর্নো চিত্রে অভিনয়ের জন্য যাকে নিয়ে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

তবে কাজ আর ফ্যাশন ভেদে ঈদপোশাক সানি লিওনির নামের পোশাকেও রয়েছে দামের ভিন্নতা। সর্বনিম্ম ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার টাকায় এ পোশাক বিক্রির কথা জানিয়েছেন দোকানিরা।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের লামিসা ফ্যাশনসের মালিক মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ বছর ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে সানি লিওনি, খোয়াব, মুঘলে আজম, আশিকি-২, রানঝানা, বিপাশা-১, বিপাশা-২, আক্সারা, এশা দেওল, কানপুরী, আয়শা টাকিয়া ইত্যাদি থ্রি-পিস এসেছে।

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, নেটের উপর কাজ করা ‘সানি লিওন’ ছাড়া অন্য থ্রি-পিসগুলোর মধ্যে খোয়াবের দাম সাত হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, এশা দেওলের দাম ৯ থেকে ১৬ হাজার টাকা, বিপাশা-১ ও ২ মিলছে সাত থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকা এবং অন্যান্য থ্রি-পিসগুলোর দাম ৭ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।

এসব রং-বেরংয়ের ঝলমলে পোশাক দোকানে আলো ছড়ালেও এখনও ক্রেতাদের ভিড় ততটা হয়ে ওঠেনি বলে জানান কয়েক দোকানি।

মেহেদী হাসান বলেন, “গতবারের তুলনায় এবারের অবস্থা খারাপ। এখনও মার্কেট জমে ওঠেনি। বিক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থী বেশি।”

একই কথা বলেছেন ধানসিঁড়ি ফ্যাশনসের স্বত্বাধিকারী মোতালেব হোসেন। তিনি বলেন, “তবে এর জন্য সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই দায়ী।”

মোতালেব বলেন, “ঈদ উপলক্ষে আমরা রোজার আগে থেকেই দোকান সাজাতে শুরু করি। কাপড়ের জোগানও আসা শুরু করে রোজার আগে থেকেই। কিন্তু এবার টানা ৪-৫ দিন হরতালের কারণে যথাসময়ে কাপড়ের জোগান আসেনি।

“তাই আমাদের গুছিয়ে উঠতে দেরি হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার মতো না।”

ঈদের বাজারে থ্রি-পিসের পাশাপাশি লেহেঙ্গার চাহিদা বেশ বলে জানান বিক্রেতারা।

গাউসিয়া মার্কেটের সুবর্ণা ফ্যাশনসের স্বত্বাধিকারী নুরুল হক বলেন, “ঈদে লেহেঙ্গার চাহিদা প্রচুর। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।”

সর্বনিম্ন  আড়াই হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকায় লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর গাউসিয়া ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এখানকার দোকানগুলোতে ভারতীয় থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে  চার থেকে নয় হাজার টাকার মধ্যে।

ভারতীয় থ্রি-পিস ও থানকাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বেশ চলছে দেশি সুতিকাপড়ের পোশাক।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের তিনি’স ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী জিয়াউদ্দিন জানান, সুতিকাপড়ের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে চার থেকে ১২ হাজার টাকায়।   

তিনি বলেন, “স্যাটেলাইটের প্রভাবে মানুষের মধ্যে ভারতীয় থ্রি-পিস, লেহেঙ্গার চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কাপড়ের তুলনায় দেশি কাপড় টেকে বেশি, মানও ভালো।”

ক্রেতাদের অসন্তোষ

গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম প্রায় দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে বলে জানান একাধিক ক্রেতা।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রী কাহকাশে ইফফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম অনেক বেশি। গতবার ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় যে পোশাক কিনেছি, এবার তার দাম রাখা হচ্ছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা।”

একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনিক হাসনাত (৩৫) মার্কেটে আসেন মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে।

“আমার বাজেট ফেল করেছে। গতবার যে পোশাক আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় কিনেছি, এবার তার দাম পাঁচ হাজার টাকা।” বললেন তিনি।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর পরিবার নিয়ে দেশে ঈদ করতে এসেছেন লন্ডন প্রবাসী বিলকিস বানু।

ঢাকার বাজারে পোশাকের দাম দেখে বিস্ময়ের সুরে তিনি বলেন, “আমরা আগে যেমনটা ভাবতাম, দেশে এসে দেখছি পুরো ভিন্ন ব্যাপার। এখন প্রচুর ভ্যারাইটিজ আছে, কিন্তু প্রতিটি প্রডাক্টই এক্সপেন্সিভ। ইংল্যান্ডের কাপড়ের প্রাইস রেটের সঙ্গে খুব একটা তফাৎ আছে বলে মনে হচ্ছে না।”

গতবারের চেয়ে পোশাকের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শান্তা ইসলাম, শারমিন নাহার, মুহিত আলমসহ আরও অনেক ক্রেতা।

গতবারের তুলনায় এবার কাপড়ের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের অনন্যা ফ্যাশনসের স্বত্বাধিকারী রাকিব হাসান বলেন, “ঈদের সময় কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই থেকে কাপড়ের জোগান আসে। তাই কাপড়ের দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে থাকে।

“এবার কলকাতা থেকে কোনো জোগান আসেনি। আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে ‍দিল্লি ও মুম্বাইয়ের লটের উপর। তাই এবার কাপড়ের দাম অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি।”