দৃষ্টি ভঙ্গির ভিন্নতা

'গড্ডলিকা প্রবাহ' অর্থাৎ ভেড়ার দলের দলপতি যেদিকে যায় পেছনের সবাইও চোখ কান বন্ধ করে সেদিকেই ধায়। এটা যে কেবল ভেড়ার ক্ষেত্রেই সত্য তা নয় এটা মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2017, 09:11 AM
Updated : 11 Sept 2017, 09:49 AM

বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এর প্রমাণ মেলে।

ক্ষমতা থাকলে তার ব্যবহার এবং অন্যান্যদের তা গ্রহণ করার মন মানসিকতার মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক কারও ক্ষমতা থাকলে তার ব্যবহার ও সাধারণ মানুষ কীভাবে এই বিষয়টাকে গ্রহণ করছে তা নির্ভর করে দুপক্ষেরই দৃষ্টিভঙ্গির উপর।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষ সবসময়ই দলের মধ্যে থাকতে চায়। অর্থাৎ মানুষের মতামত যেমনই হোক না কেনো যদি তা সংখ্যা গরিষ্ঠের সঙ্গে মিলে যায় তবে সে তা ফলাও করে জাহির করে এবং যদি ভিন্ন হয় সেক্ষেত্রে মতামত প্রকাশে জোরালোভাব থাকে না।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কাজী হায়াৎ, কাজী মারুফ, কেকা ফেরদৌসী বা ডা. মাহফুজুর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে নানান ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি বা 'ট্রল' দেখা যায়।

এক্ষেত্রে, দর্শক বা শ্রোতা নাকি ওই ব্যক্তি- কার সমস্যা? জানতে চাইলে এই মনরোগ-বিশেষজ্ঞ বলেন, “এখানে সমস্যা কারও নয়, সমস্যা হল দৃষ্টি ভঙ্গির।”

“অর্থাৎ, কেউ যদি তার ক্ষমতা থাকার কারণে নিজেই নিজের চ্যানেলে অনুষ্ঠান করে বা কাজের খাতিরে রান্নার ভিন্নতা প্রদর্শন করে তবে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। একইভাবে দর্শকরা এই অনুষ্ঠান দেখে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করবে এটাও দর্শকদের নিজস্ব বিষয়।”

তবে অবশ্যই সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

তার মতে, “মানুষ খুব স্বাভাবিক নিয়মেই অন্যের অনুকরণ করে এবং দল ভারি করার প্রচেষ্টা চালায়। তাছাড়া মানুষ অন্যদের সঙ্গে তাল মেলাতে বেশি পছন্দ করে। তাই অনেক কাজই মানুষ ঝোঁকের বশে করে ফেলেন, একে বলা হয় ‘কনফোরমিটি'।”

” “যেমন- কেকা ফেরদৌসীর রান্নার অনুষ্ঠান বা ডা. মাহফুজুর রহমানের গানের অনুষ্ঠানের মতো বিষয়গুলো মানের দিক দিয়ে যাই হোক জনসাধারনের মনে প্রভাব রাখে 'ব্যক্তি।” “বললেন ডা. হেলাল

” “এগুলোর চেয়েও ভিন্ন মানের অনুষ্ঠান যে কোনো চ্যানেলে প্রচারিত হয় না বিষয়টা তা নয়। তবে এখানে ব্যক্তি প্রাধান্য পাওয়ায় তা বেশি আলোচিত হয়েছে। অনেকের কাছে হয়ত এই অনুষ্ঠান খারাপ লেগেছে, আবার কারও কাছে খুব সাধারণ মনে হয়েছে। অর্থাৎ এটা পুরোটাই নির্ভর করছে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপর।” “

তিনি আরও বলেন- ” “একেকজনের একেক মতামত থাকার পরও গুরুত্ব পায় সমালোচনা। কারও কারও কাছে অনুষ্ঠানগুলো ভালোলাগে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই মনোভাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন বিষয়টিকে নিয়ে কাটাছেড়া করতে। যা তাদের এক ধরনের আনন্দ দেয়।” “

” “ ফলে অনুষ্ঠানটা দেখতে যাই হোক বিনোদন সৃষ্টি করেছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।” “

এই চিকিৎসকের মতে, ” “প্রতিটা মানুষেরই নিজের মতামত প্রকাশ ও স্বাধীন-ভাবে কাজ করার অধিকার আছে। আর কোনো কিছু অপছন্দ হলে তার সমালোচনা করার অধিকারও মানুষের থাকে।” “

“কিন্তু এই সমালোচনা অবশ্যই গঠনমূলক হওয়া প্রয়োজন। আর কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি আঘাত করে বা তাকে অন্যের কাছে ছোট করে এমন কোনো কাজ করা বা কথা বলা উচিত নয়।”

তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই অনেক বেশি সহনশীলতার চর্চা করতে হবে। সমালোচনার অবশ্যই ভালো দিক আছে। তাই তা গঠনমূলক হতে হবে এবং কোনো ব্যক্তি বা ঘটনাকে ব্যাঙ্গ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করা ঠিক নয়। এটা ব্যক্তি ও জনসাধারনের জন্যও খারাপ।”

“তাছাড়া সোশাল মিডিয়াকে এভাবে ব্যবহার করা হলে এটা থেকে মানুষের উপকারের চেয়ে বেশি অপকারই হবে। তাই এসব মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বুদ্ধি ও বিচার বিবেচনার প্রমাণ দেওয়া দরকার।” পরামর্শ দিলেন এই মনরোগ-চিকিৎসক।