বিবাহিত জীবনে নিজের অজান্তেই পুরুষরা এমন কিছু তুচ্ছ ভুল করেন যা ক্রমেই ঠেলে দেয় বিচ্ছেদের দিকে। তবে এই অভ্যাসগুলো বদলাতে পারলে নিজের এবং দাম্পত্য জীবনে মঙ্গল ডেকে আনবে।
ভুলগুলো শোধরাতে না পারলেও শুধু চিহ্নিত করা ও স্বীকার করতে পারলেও সংসারিক জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।
সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী গ্লোরিয়া ভ্যানডারহোর্স্ট বলেন, “অপ্রকাশিত নেতিবাচক অনুভূতিগুলো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ডেকে আনে যা দাম্পত্য জীবনে টানাপড়েন তৈরি করতে পারে।”
“দাম্পত্যজীবনে সঙ্গীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে অশান্তি তৈরি হতে পারে। আর এই সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসার আগেই দুজনের মনেই হতাশা ও অস্বস্তি বাসা বাঁধে।”
সংসারজীবনে প্রায় সব পুরুষ যে ধরনের ভুল করে সেগুলোর একটা ধারণা নিচে দেওয়া হল। বিবাহিত পুরুষরা মিলিয়ে দেখতে পারেন এই ধরনের ভুল আপনিও করছেন কিনা? আর করলে কীভাবে সেটা শোধরাবেন।
সহমর্মিতা: যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া’র মনোবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট মাসলো বলেন, “সহমর্মিতা হল অন্যের অনুভূতি বোঝা, যা প্রতিটি সম্পর্কের জন্যই জরুরি। আর এবিষয়ে পুরুষের তুলনায় নারীরা পারদর্শী। নারী চায় তার অনুভূতি যাতে সঙ্গী বোঝে এবং মূল্যায়ন করে। পুরুষের এটা বোঝা উচিত।”
বেহিসাবী: স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ ছাড়া কোনো ধরনের বড় খরচ একেবারেই করা যাবে না।
ভ্যানডারহোর্স্ট বলেন, “যে কোনো বড় ধরনের খরচ করার আগে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করা আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর বিবাহ বিচ্ছেদের কারণের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা প্রতারণার পরই এর স্থান।”
শারীরিক সম্পর্কে স্বার্থপর মনোভাব: শোবার ঘরে সবচেয়ে অন্তরঙ্গ হয় স্বামী-স্ত্রী। অনেক পুরুষ ভুলে যায়, স্ত্রীকেও আনন্দ দিতে হবে, সেভাবে তাকে প্রস্তুত করতে হবে। সবচেয়ে বাজে হচ্ছে স্বামী হিসেবে এটা ধরতে না পারা।
মাসলো বলেন, “মমত্ব, প্রেম, স্নেহ- স্ত্রীর মনে ভালোবাসা জাগায়। আর এসব তাকে সক্রিয় করে তোলে। বয়সে বড় পুরুষ এই ব্যাপারটা ধরতে পারলেও বেশিরভাগ তরুণ স্বামী এই সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না।”
ভ্যানডারহোর্স্ট বলেন, “যৌনতার ব্যাপারে পুরুষের ধারণা হচ্ছে- এর মাধ্যমেই নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া যায়। তবে নারীর কাছে যৌনতার আগে অন্তরঙ্গ হওয়ার বিষয়টাই প্রাধান্য পায়।”
আর পুরুষ হিসেবে যদি স্ত্রীর অন্তরঙ্গ না হতে পারেন, তবে আপনার গলায় ‘মেডেল’ ঝোলার সম্ভাবনা ক্রমেই কমতে থাকবে।
সঠিকভাবে না শোনা: স্ত্রীর কথা শোনা মানে কথার সঙ্গে হু-হা করা আর মনে মনে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা নয়।
ভ্যানডারহোর্স্ট বলেন, “পুরুষ প্রতিটি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং সমাধানের উপায় বের করে। যা আপনার স্ত্রীর মেজাজ সপ্তমে পৌঁছে দেবে নিঃসন্দেহে।”
“বরং স্ত্রীর কথা ঠিক মতো শোনা অন্তরঙ্গ হওয়া বা ‘কানেকশন’ স্থাপন করার অন্যতম কার্যকর পন্থা।” পরামর্শ দিলেন এই মনোবিজ্ঞানি।
অনুভূতির প্রকাশ: স্ত্রীর মনের অবস্থা শোনার পাশাপাশি নিজের মানসিক অবস্থাও তার কাছে প্রকাশ করা জরুরি। কিছু পুরুষ বা স্বামী মনে করেন নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে হবে, নইলে তাকে সবাই দুর্বল মনে করবে।
তিনি আরও বলেন, “একজন পুরুষের মুখ থেকে আবেগের কথা বের করা বেশ কঠিন কাজ। তবে এটা মানসিক শক্তিরও বহিঃপ্রকাশ। ছোট থেকেই পুরুষ তার আবেগ, ভয় লুকিয়ে রাখতে শেখে। তাই মনের কথা খুলে বলতে সাহস চাই।”
ক্ষমতার খবরদারি: পুরুষ মানেই সকল কর্তৃত্ব আপনার, এমনটা নয়। তবে কিছু পুরুষ তা মানতে পারেন না।
মাসলো বলেন, “স্ত্রীর উপর খবরদারি করে নিজের সকল ইচ্ছা চরিতার্থ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কারণ নারী তা বেশিদিন সইবে না।”
তাহলে স্বামীগণ, সংসারে সুখশান্তির অভাব থাকলে উপরের বিষয়গুলোর সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখুন। আর আজ থেকেই নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করতে থাকুন। দেখবেন শুধু ‘মেডেল’ না স্ত্রী আপনাকে ‘ট্রফি’, ‘সিলভার কাপ’ কিংবা ‘গোল্ড কাপ’ও দিতে থাকবে।
ছবি: নিজস্ব ও রয়টার্স।
আরও পড়ুন