অর্থ খরচে সময় বাঁচলে হতে পারবেন সুখী

অর্থই অনর্থের মূল— কথাটা আর ঠিক থাকছে না। যদি টাকা খরচ করে সময় বাঁচানো যায় তবে হতে পারবেন সুখী।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2017, 10:24 AM
Updated : 1 August 2017, 08:11 AM

জীবনযাপন-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, একটি গবেষণার ফলাফল থেকে জানানো হয়- যারা সময় বাঁচাতে ঘরের কাজের জন্য লোক নিয়োগ, ‘ডেলিভারি সার্ভিস’ এবং চলাচলে ট্যাক্সির পেছনে যারা পয়সা খরচ করেন তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশি সুখি।

মানে, অর্থ খরচ করে যদি সময় বাঁচাতে পারেন তবে হতে পারবেন সুখী।

চারটি দেশের ছয় হাজার মানুষের উপর এই পর্যালোচনা চালানো হয়। তাদেরকে দুই সপ্তাহের জন্য ৪০ ডলার দেওয়া হয়। প্রথম সপ্তাহে তারা কিছু জিনিস, যেমন- শার্ট কেনে। পরের সপ্তাহে তারা সময় বাঁচানোর জন্য অর্থ খরচ করে।

তারা জানান, জিনিস ক্রয়ের চেয়ে সময় বাঁচিয়ে বেশি আনন্দ অনুভব করেছেন।     

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলেম্বিয়া’র মনোবিজ্ঞানের গবেষক এবং ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’য়ের ‘মানডে'স প্রসেডিং’ গবেষণার সহকারি লেখক এলিজাবেথ ডান বলেন, “অর্থ দিয়ে সুখ কেনা সম্ভব যদি তা ঠিকভাবে খরচ করা হয়।”

“নিজে করতে পছন্দ করেন না এমন কোনো কাজ যখন অর্থের বিনিময়ে অন্যকে দিয়ে করিয়ে সময় বাঁচানো যায় তখন মানুষ নিজেকে অনেক বেশি সুখী মনে করেন।” বলেন, এই গবেষণার প্রধান লেখক হার্ভার্ড বিজনেজ স্কুল’য়ের অ্যাশলি হুইল্যান্স।

যখন অর্থের বিনিময়ে মানুষ কোনো পণ্য ক্রয় করে তখন তারা এতটা সুখী নয় না, জানালেন তিনি।

ডান এবং হুইল্যান্স আরও জানান, আগের গবেষণায় দেখে গেছে টাকা ব্যবহার করে অন্যকে সাহায্য করা বা অন্যান্য ভালো অভিজ্ঞতা যেমন- ‘স্পা’ বা ভ্রমণ করাও পণ্য কেনার চাইতে বেশি সুখ দেয়।

হুইল্যান্স বলেন, “উপার্জন কোনো বিষয় নয়। ধনী বা গরীব, সবার জন্যই সময় বাঁচাতে অর্থ ব্যয় করা আনন্দের বিষয়। এছাড়াও এই তথ্য থেকে দেখা গেছে, কম আয়ের মানুষ সময় বাঁচানোর মধ্য দিয়ে বেশি আনন্দ লাভ করে।”   

তারপরও দেখা গেছে যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ লোক সময় বাঁচাতে অর্থ ব্যয় করেন। যা প্রতি মাসে গড়ে ১৪৮ ডলারের সমান।

‘৪০ ডলার’ খরচের যে গবেষণা করা হয়, সেখান থেকে গবেষকরা কানাডা’র বিজ্ঞান জাদুঘর থেকে ৬০ জন মানুষকে বাছাই করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যখন তারা কোনো সামগ্রী কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করেন তখন তাদের আনন্দের মাত্রা ছিল ৫ এর মধ্যে গড়ে ৩.৭। তবে যখন তারা খাবার ডেলিভারি করাতে অথবা বাসের বদলে ট্যাক্সিতে করে যাতায়াতের জন্য খরচ করেন তখন তাদের আনন্দের মাত্রা ছিল গড়ে ৪।

“পার্থক্য খুব কম হলেও এর তাৎপর্য অনেক বেশি” বলেন ‘হ্যাপি মানি: দ্যা সায়েন্স অব হ্যাপিয়ার স্পেন্ডিং’ বইয়ের সহকারি লেখক ডান।

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না’ এই প্রবাদটা কেবল ভুল নয় পাশাপাশি ‘সময়ই অর্থ’ এই প্রবাদটাও ভুল। আগের গবেষনাগুলোতে দেখা গেছে যে, মানুষ যখন সময়কে অর্থ ভাবে তখন তারা স্বেচ্ছায় অন্যকে সাহায্য করতে অথবা পরিবেশের জন্য কাজ করতেও কম আগ্রহ প্রকাশ করে।”

এই গবেষণার বাইরেও ‘সুখ’ গবেষণাটি বেশ প্রশংসা অর্জন করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়’য়ের এই গবেষণার গবেষক এডয়ার্ড ডায়নার বলেন, গবেষণায় দেখা যায় গরিবদের তুলনায় ধনীরা অনেক বেশি হতাশাগ্রস্ত যা প্রথম অবস্থাতে বোঝা যায় না। তবে এই মানসিক চাপ হচ্ছে সময়ের চাপ। অনেক কিছুই করার থাকলে কেউই সবকিছু করতে পারে না।”  

“তাই সময় কেনা অনেক বেশি অর্থবহ।” যুক্ত করলেন তিনি।

ভ্যাংকুভার থেকে বস্টন যাওয়ার সময় হুইল্যান্স তার গবেষণা চালান।

তিনি একজন লোককে অর্থের বিনিময়ে তার মালামাল বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে নিয়োগ করেন এবং ঘরের অন্যান্য কাজ ও জিনিসপত্র সরবারহ করার জন্য লোক নিয়োগ করেন।

তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে আমি অনেক বেশি আনন্দ অনুভব করেছিলাম।”

একইভাবে ডান-ও তার স্বামীর সঙ্গে ‍গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে ছিলেন। এবং তর্কে জয়ী হবে রেখেছেন গৃহকর্মী। ফলে তার অনেক কাজ কমে যাওয়াতে বেশ সুখী ও আনন্দময় সময় কাটাতে পারছেন।

তাই মনে রাখবেন, সময়ের মূল্যের কাছে অর্থ বা টাকার কোনো মূল্য নেই। কারণ টাকা সবসময়ই পাওয়া যাবে। তবে সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না।

ছবি: রয়টার্স।