ভীমরুলি, কুরিয়ানা ও আটঘর বিখ্যাত ভাসমান পেয়ারা বাজারের জন্য। সারিসারি ভাসমান নৌকায় সবুজ হলুদ পেয়ারার ছড়াছড়ি। ক্রেতাবিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত জায়গাটি এক বিস্ময় বটে।
ভিমরুলির জলবাজারের সে বিস্ময় দেখতে আগের দিন রাতে ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশালের পথে রওনা হই। ভোর চারটায় পৌঁছে যাই। সকাল ছয়টায় আমরা লঞ্চঘাট ছাড়ি। এখান থেকেই আমাদের সঙ্গী হন সোহানুর রহমান সোহান। ৫০ টাকা ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় চেপে চলে আসি নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিজার্ভ মহেন্দ্রোতে চেপে স্বরূপকাঠি খেয়াঘাট যখন পৌঁছি তখন সকাল প্রায় নয়টা। আর এখান থেকেই ৮শ’ টাকায় ট্রলার ভাড়া করে আমাদের পানিপথে যাত্রা হয় শুরু। যেই ট্রলারের চালক হৃদয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা স্বরূপকাঠি পেছনে ফেলে চলে আসি মাহমুদ কাঠি। মাহমুদ কাঠিতেও রয়েছে জলবাজার। মাহমুদ কাঠির জলবাজারে সব ধরনের গাছের চারা বিক্রি হয়। এই এলাকা পার হতেই আমরা এক অদ্ভূদ রূপের জগত প্রবেশ করি। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। যেন সবুজ রূপকথার রাজ্য।
দূর থেকে ভাসমান পেয়ারার বাজার দেখে মুগ্ধ আমার মুখ থেকে একটি মাত্র শব্দ বের হল ’আশ্চর্য’।
পেয়ারা আর কোষা নৌকা ছাড়া চোখে পড়ল না আর কিছুই। অবশ্য ব্যাপারিদের ট্রলার ছিল। ছিল পেয়ারার খরিদ্দার আর পেয়ারার মালিকের হাঁকডাক।
আমরা ঘন্টা তিনেক ভিমরুলির জলবাজার বা পেয়ারার হাঁটে ছিলাম। স্থানীয়রা যাকে বলে গোইয়ার হাঁট। বাজার ঘুরে ঘুরে পেয়ারা চাষি, ক্রেতা ও অতিথিদের উৎসব আকারের আনন্দ দেখলাম। আবার কষ্টও চোখে পড়ল।
সকালের দিকে পেয়ারা বিক্রি হচ্ছিল ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা মন দরে। সেই পেয়ারাই বেলা পরার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হতে দেখলাম ১শ’ থেকে ৬০ টাকা মন দরে।
আমি আবার বাকরুদ্ধ হলাম। তারপর সারাদিনের আনন্দের সঙ্গে কষ্ট বুকে চেঁপে আটঘর কুরিয়ানা দিকে ট্রলার ভাসালাম।
ভীমরুলি, কুরিয়ানা ও আটঘরের ভাসমান পেয়ারার বাজার দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে বরিশালের স্বরূপকাঠি।
ঢাকা থেকে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্যাডেল চালিত স্টিমার ছেড়ে যায় বরিশালের উদ্দেশ্যে। স্টিমারে চেপে বসতে পারেন অথবা রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে চলাচল করা ঢাকা-বরিশাল রুটের বিশাল সব লঞ্চ। সুরভী, কীর্ত্তনখোলা, সুন্দরবন নামের সে সব লঞ্চে এক বৃহস্পতিবার চড়ে বসলেই হল, বরিশাল পৌঁছে যাবেন।
স্বরূপকাঠি থেকেই রিজার্ভ ট্রলারে সোজা ভীমরুলি যাওয়া যায়।
স্বরূপকাঠি ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখার জন্য ট্রলার ভাড়া রিজার্ভ ৮শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।
ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ ভাড়া ডেক ২শ’ টাকা। কেবিন ডাবল ১ হাজার ৮শ’ টাকা নন এসি।
স্টিমারের ডেকের ভাড়া ৩শ’ আর কেবিন ভাড়া ডাবল ১ হাজার ২শ’ নন এসি।
ডেক বাদে কেবিনে যেতে চাইলে আগে থেকে টিকিট বুকিং দেওয়া দরকার। কারণ, চাইলেই বরিশাল লঞ্চের টিকিট পাওয়া সম্ভব না।
আরেকটা কথা, বরিশাল নেমে ফেরার টিকিট কেটে নেবেন। অবশ্য ডেকের যাত্রী হলে সে সমস্যা নেই!
ছবি: লেখক।