ঈদের দিনে ভিন্ন স্বাদে

ঈদের বিশেষ আয়োজনে রয়েছে চট্টগ্রাম বিখ্যাত আখনি বিরিয়ানি ও নলার (পায়া) ঝোল।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2017, 07:43 AM
Updated : 25 June 2017, 07:48 AM

আরও তৈরি করতে পারেন সিজলিং ডিশে আস্ত মাছ ভাজা, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আমের কুলফি আর প্রাণ জুড়ানো বোরহানি।

রেসিপিগুলো দিয়েছেন সানজিদা আফরীন (সানজি)।

চট্রগ্রামের আন্নি (আখনি)

মাংস রান্নার জন্য:
গরুর মাংস হাড়সহ ১ কেজি। পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল-চামচ। পেঁয়াজকুচি (মাঝারি)২টি। আদা ও রসুন বাটা আধা চা-চামচ (বিরিয়ানির মসলায় আদা-রসুন আছে তাই কম দেওয়া হল)। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ। ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ। জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ।

চট্রগ্রামের হাটহাজারির লাল-মরিচের গুঁড়া আধা টেবিল-চামচ। এলাচ ২,৩ টি। দারুচিনি ২ টুকরা। তেজপাতা ২টি। বিরিয়ানির মসলা ১ টেবিল-চামচ (বাজারে পাবেন)। তেল আধা কাপ। লবণ স্বাদ মতো। পানি পরিমাণ মতো। অল্প হলুদ এবং মরিচ দিয়ে আলু ভাজা ৩টি (২ টুকরা করে কাটা)

বিরিয়ানি রান্নার জন্য: চাল (বাসমতি/পোলাও) ১ কেজি। পেঁয়াজকুচি ২টি। এলাচ ৩টি। দারুচিনি ২ টুকরা। তেজপাতা ২টা। কিশমিশ ১ মুঠো। বাদাম (পেস্তা ও কাঠ) পরিমাণ মতো। আলুবোখারা ৬,৭টি। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ। বিরিয়ানির মসলা ১ টেবিল-চামচ। গোলাপ ও কেওড়ার জল সামান্য। লবণ স্বাদ মতো। তেল আধা কাপ। পানি চালের দ্বিগুণ পরিমাণ। চিনি সামান্য।

সাজানোর জন্য বেরেস্তা।

পদ্ধতি: প্রথমে চাল ধুয়ে ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে রাখুন। এবার একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি দিয়ে দুই মিনিট নেড়ে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়ুন যাতে ঝাঁঝাঁলো গন্ধ চলে যায়। তারপর মাংস রান্নার সব মসলা দিয়ে খুব ভালো করে কষিয়ে নিন।

প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করুন।

মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে আগে থেকে ভেজে রাখা আলু দিয়ে নেড়ে নামিয়ে রাখুন। এবার অন্য একটি খোলা পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, কিশমিশ, বাদাম ও আলুবোখারা দিয়ে ভালো করে নেড়ে দুতিন মিনিট পর্যন্ত চাল দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিন।

চাল ভাজা হলে হলুদগুঁড়া ও বিরিয়ানির মসলা দিয়ে আরও দুতিন মিনিট নেড়ে আগে থেকে রান্না করা মাংস দিন। দুই মিনিট ভেজে পরিমাণ মতো পানি, লবণ ও চিনি দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করুন।

চাল সিদ্ধ হয়ে গেলে গোলাপ ও কেওড়ার জল দিয়ে পাঁচ মিনিট দমে দিয়ে নামিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুণ মজাদার চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আখনি বিরিয়ানি।

নোট- চালটা আগে থাকে পানি ঝরিয়ে রাখলে বিরিয়ানি ঝরঝরে হয়। বিরিয়ানিতে ঠাণ্ডা পানি দিলে চালের দ্বিগুণ ও গরম পানি দিলে একটু কম দেবেন তাহলে বিরিয়ানি ঝরঝরে হবে। মাংস ঝোল মাখা মাখা করে রান্না করবেন। বেশি ঝোল থাকলে বিরিয়ানি ঝরঝরে হবে না। এই বিরিয়ানিটি দেখতে হলদে হয়, অনেকটা খিচুড়ির রংয়ের মতো।

নলার ঝোল (পায়া)

উপকরণ:
গরুর পায়া (হাড়সহ মাংস) ১ কেজি। পেঁয়াজকুচি ৪,৫টি। আদা ও রসুন বাটা ১ চা-চামচ। এলাচ ২,৩ টি। দারুচিনি ২ টুকরা। তেজপাতা ২টি। টমেটো ২টি। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ। মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ। ধনেবাটা ১ টেবিল-চামচ। জিরাবাটা ১ চা-চামচ। কাঁচামরিচ ফালি ২,৩টি। ধনেপাতা-কুচি সামান্য। পেঁয়াজপাতা-কুচি সামান্য। তেল ৪ টেবিল-চামচ। লবণ স্বাদ মতো।

বাগারের জন্য: পেঁয়াজ কুচি ২টি। রসুনকুচি ৪টি। তেল পরিমাণ মতো।

সাজানোর জন্য: এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা আদাকুচি ও পুদিনা-পাতা (সামান্য)।

পদ্ধতি: প্রথমে গরুর পায়াগুলো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এবার বড় একটা পাতিলে ধনেপাতা, পেঁয়াজকুচি ও কাঁচামরিচ ফালি বাদ দিয়ে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে বেশি করে পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা (নির্ভর করে চুলার আঁচের উপর)।

নলার মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতা, পেঁয়াজকুচি ও কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন আরও পাঁচ মিনিট।

এই সময়ের মধ্যে অন্য একটি পাত্রে পেঁয়াজ ও রসুনের বাগার তৈরি করে রান্না করা নলার ঝোলে ঢেলে দিন। ব্যস হয়ে গেল মজাদার চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নলার ঝোল।

নোট- নলাতে পানি বার বার না দিয়ে একসঙ্গে বেশি করে দেবেন। আর মাঝারি আঁচে রাখবেন আগুনের তাপ। টমেটো ও ধনেপাতা-কুচির বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। যেহেতু লম্বা সময় ধরে রান্না হবে এবং পরে পানি কমে আসবে তাই একেবারে লবণ বেশি দেবেন না।

সিজলিং ডিসে আস্ত মাছভাজি

উপকরণ:
মাছ ভাজার জন্য আস্ত সরপুঁটি মাছ ১টি। লালমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ। হাটহাজারির মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ। লেবুর রস ৩ টুকরা। লবণ পরিমাণ মতো। তেল-ভাজার জন্য।

মেরিনেইশনের জন্য: মোটা করে কাটা পেঁয়াজকুচি ১ কাপ। ক্যাপ্সিকাম-কুচি আধা কাপ করে (লাল ও সবুজ)।

আর লাগবে একটা সিজলিং ডিশ। বাজারে পাবেন।

পদ্ধতি: প্রথমে আস্ত মাছ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এখন ছুরি দিয়ে চিড়ে মাছ ভাজার সব উপকরণ ভালো মাছের দুপাশে ও ভেতরে মাখিয়ে ফ্রিজে সারারাত রেখে দিন।

ভাজার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল দিয়ে মাছ মাঝারি আঁচে ভেজে নিন।

অন্য একটি চুলায় সিজলং ডিসটাকে ভালোভাবে গরম করে নিন (১০ মিনিটের মতো)।

গরম হলে এতে মোটা করে কাটা পেঁয়াজ ও ক্যাপ্সিকাম দিয়ে দুই মিনিট রাখুন (আঁচ বেশি থাকবে)।

তারপর আগে থেকে ভাজামাছ দিয়ে উপর থেকে অল্প লেবুর রস ও তেল দিন। দেখবেন ধোঁয়া হচ্ছে এবং খুব সুন্দর গন্ধ পাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে সিজলিং ডিসে ধোঁয়াসহ টেবিলে পরিবেশন করুন মজাদার দেশি সরপুঁটি ভাজা।

নোট- পরিবেশনের ঠিক আগে আগে সিজলিং ডিসটি খুব ভালো করে গরম করবেন। মাছ মাঝারি আঁচে এক পিঠ একটু হয়ে গেলেই অন্য উল্টে দেবেন। একদিক বেশি হয়ে গেলে পরে উল্টাতে গেলে ছিঁড়ে যাবে চামড়া।

আমের কুলফি

উপকরণ:
দুধ ৩ লিটার। আমের পাল্প/পিউরি দেড় কাপ। এলাচ ৫,৬টি। দারুচিনি ৪ টুকরা। তেজপাতা ৩টি। চিনি সাড়ে ৩ কাপ। লবণ সামান্য। জাফরান ১ চা-চামচ। পেস্তাবাদাম-কুচি আধা কাপ। কেওড়ার জল সামান্য।

আরও লাগবে কুলফি মোল্ড/পেপার গ্লাস ২০টি। ২টি পাকাআমের কুচি।

সাজানোর জন্য: জাফরান, আমের পাল্প ও ক্রিম সামান্য।

পদ্ধতি: প্রথমে একটি বাটিতে গরম দুধে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। একটি বড় খোলা পাতিলে মাঝারি আঁচে এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে দুধ জ্বাল দিয়ে দেড় লিটারে নামিয়ে আনুন।

আবার এতে চিনি, লবণ, জাফরান, বাদামকুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। এবার সামান্য কেওড়ার জল দিয়ে দুই মিনিট রেখে চুলার আঁচ বন্ধ করে ঠাণ্ডা হতে দিন।

তারপর কুলফি মোল্ডে ঢেলে উপরে পাকাআমের কুচি দিয়ে সারারাত ডিপ ফ্রিজে রাখুন।

পরিবেশনের সময় উপরে সামান্য আমের পাল্প ঢেলে ও অল্প জাফরান ছিটিয়ে দিন। তারপ দুপাশে ক্রিম দিয়ে সুন্দর করে পরিবেশন করুন।

বোরহানি

উপকরণ:
পুদিনাপাতা আধা কাপ। ধনেপাতা আধা কাপের একটু কম। কাঁচামরিচ ৪,৫টি। টক দই ২ কাপ। লবণ স্বাদ মতো। বিট লবণ ১ চা-চামচ। চিনি ২ টেবিল-চামচ। গোলমরিচের গুঁড়া  ১ চা-চামচ। ভাজা ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ। ভাজা জিরারগুঁড়া ১ চা-চামচ।

পদ্ধতি: প্রথমে পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ ও পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।

এবার বাকি উপকরণ দিয়ে আবার ব্লেন্ড করে গ্লাসে ঢেলে বরফের টুকরাসহ সুন্দর করে পরিবেশন করুন।

সমন্বয়ে: ইশরাত জে. মৌরি।

আরও রেসিপি