হরমোনের উপর ব্যায়ামের প্রভাব

বয়স বৃদ্ধি, যৌনক্ষমতা, হাড়ের ক্ষয় রোধ, মানসিক চাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হরমোনের প্রভাব স্বাভাবিক রাখতে পারে নিয়মিত শরীরচর্চা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2017, 10:21 AM
Updated : 16 June 2017, 10:25 AM

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের মতে, হরমোন হল দেহের জৈবরাসায়নিক বার্তাবাহক যা শরীরের সাংকেতিক কার্যক্রম হিসেবে কাজ করে। যৌনক্ষমতা, বিপাক ক্রিয়া, ঘুম, প্রজনন ক্ষমতা, মনোভাব সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। শরীরের বেড়ে ওঠা এবং মাংসপেশির গঠনের পেছনেও ভূমিকা রয়েছে।

তাই হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যার সবচাইতে সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায় হল শরীরচর্চা।

শরীরচর্চার মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এমন কয়েকটি হরমোন হল-

আইরিসিন: আঘাত কিংবা বয়সের প্রভাব থেকে মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করাই এই হরমোনের কাজ। শরীরচর্চার কারণে হওয়া ঘাম এই হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। চর্বির সঙ্গে দুভাবে লড়াই করে হরমোনটি। প্রথমত, ক্ষতিকর সাদা চর্বিকে উপকারী বাদামি চর্বিতে রূপান্তরকারী জিনগুলোকে সক্রিয় করে। দ্বিতীয়ত, একই ধরনের ‘স্টেম সেলগুলো’ চর্বিতে জমানো রোধ করে হাড় গঠনকারী কোষে পরিণত করে।

ইস্ট্রোজেন: ‘ইস্ট্রোন’, ‘ইস্ট্রাডিওল’ ও ‘ইস্ট্রিওল’- এই তিন রাসায়নিক উপাদানের দলকে বলা হয় ‘ইস্ট্রোজেন’। জরায়ু, স্তন ও প্রজনন অঙ্গের গঠনের পেছনে দায়ী এই হরমোন। হাড়, যকৃত, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, বিভিন্ন কোষ এবং হাড়ের বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে ‘ইস্ট্রোজেন’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ বছর বয়স থেকেই বেশিরভাগ নারীর শরীরে এই হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। আর রজঃবন্ধের পর হরমোনটির উৎপাদন আরও কমে যায়।

নারীদের শরীরে এই হরমোন প্রয়োজনীয় থাকলেও অতিরিক্ত হলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

শরীরচর্চা এই হরমোনের উৎপাদন কমায়। স্তন ক্যান্সারের রোগীরা এবং চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া নারীরা নিয়মিত শরীরচর্চা করলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে।

টেস্টোস্টেরন: পুরুষের যৌন হরমোন হলেও টেস্টোস্টেরন নারীদের শরীরেও তৈরি হয়, তবে পরিমাণে অল্প। যৌনসঙ্গম আরও তৃপ্তিদায়ক করার পাশাপাশি পেশির বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পূরণ করে হরমোনটি। পেশির ঘনত্ব ও যৌনক্ষমতা বাড়াতে এবং পেটের চর্বি কমাতেও সহায়ক।

ব্যায়াম এই হরমন উৎপাদনে গতি বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ): শরীরের কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালনা হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেশি ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়. চর্বির বিপাকক্রিয়া দ্রুত করে। ঘুমানোর সময় শরীরে এইচজিএইচ তৈরি হয়। তবে বিশেষ কিছু শরীরচর্চাও এই হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে। যেমন- ভারোত্তলন এবং অল্পতেই হাঁপিয়ে যান এমন ব্যায়াম।

কর্টিসল: দুশ্চিন্তা নিয়ামক হরমোন হিসেবে পরিচিত। মানসিক চাপের কারণে শরীরের উপর যে প্রভাব পড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করে হরমোনটি। এছাড়াও আমিষকে কর্মশক্তিতে রূপান্তর করা, গ্লাইকোজেন নিঃসরণ এবং জ্বালাপোড়া দমানোও এই হরমোনের কাজ। তবে কর্টিসলের অতিরিক্ত মাত্রা তলপেটের চর্বি বাড়ায়।

অল্প পরিশ্রমের ব্যায়ামে কর্টিসলের মাত্রা কমে। অপরদিকে মাঝারি ও ভারী ব্যায়ামের কারণে এর মাত্রা বাড়ে। উচ্চমাত্রার সহনশীলতা বৃদ্ধিকারী ব্যায়ামগুলো দীর্ঘমেয়াদী কর্টিসলভিত্তিক রোগের কারণ হবে।

তাই সহনশীলতাবর্ধক ব্যায়াম করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।