ঈদের কেনাকাটায় অনলাইন অফলাইন

সময় নেই, ভিড় ঠেলতে ইচ্ছে করছে না বা গরমের মধ্যে কে যায়- এরকম অনেক কারণেই তরুণসমাজ অনলাইন মার্কেটগুলোতে ঝুঁকছে। তবে ঘুরে ঘুরে ঈদের কেনাকাটায় যে আনন্দ, অনলাইনে সেটা আশা করা গুড়েবালি।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2017, 08:13 AM
Updated : 12 June 2017, 12:09 PM

ঢাকার ধানমণ্ডি ২৭ নাম্বারে অবস্থিত রাপা প্লাজার সুন্দরী ফ্যাশন দোকানের বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, “১১ থেকে ১২ রোজা পর্যন্ত মূলত শিশুদের পোশাকই বেশি বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আর কিছুদিন পর ক্রেতাদের চাপ বাড়বে।”

একই মার্কেটেরই ‘আনস্টিচ থ্রি-পিস’য়ের দোকান ‘একে ফ্যাশন’য়ের মালিক মো. আলম এবারের ঈদ বাজার নিয়ে হতাশার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আমার ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এবারই প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ঈদের আর মাত্র কিছুদিন বাকি। এখনও ঈদের বিক্রি কিছুই হয়নি বললেই চলে। আর এখন যে সময়, এই মুহূর্তে কেউ আর সেভাবে হয়ত আনস্টিচ পোশাক কিনবেও না, কারণ এখন বানানোরও কিছুটা ঝামেলা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার বেশ হতাশ আমরা।”

একরকম চিত্রের দেখা মেলে শপিং সেন্টারটির অন্যান্য ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতেও।

রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত অন্যতম পরিচিত বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে ঢুকে কিছুটা ভিড় চোখে পড়ে। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। নিচ তলায় অবস্থিত ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও বেশিরভাগ দোকানই ছিল ক্রেতাশূন্য। প্রতিটি তলার চিত্রই প্রায় একই রকম। সামনের দিকের দোকানগুলোর আশপাশে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও বেশিরভাগ ভিতরের দিকের দোকানগুলোর বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

তাদের কাছ থেকেও অনেকটা একই ধরনের বিষয় জানা যায়। ছুটির দিনগুলোতে এবং সন্ধ্যায় কিছুটা ভিড় বাড়লেও সারাদিন ক্রেতাসমাগম কমই থাকে।

তবে ভিড় বোঝা যাবে না অথচ ধমছে কেনাকাটা চলছে ‘ফেইসবুক’য়ে খোলা বিভিন্ন অনলাইন-মার্কেটগুলোতে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক এনে সরাসরি পৌঁছে দেন ক্রেতাদের হাতে। আর ঘরে বসেই ভালো জিনিস পাওয়ার সুবিধার কারণে অনেকেই এখন নির্ভরশীল এরকম অনলাইন মার্কেটে।

ফেইসবুক পেইজ ‘এসঅ্যান্ডএস আউটটি’য়ের অ্যাডমিন শামীমা নাসরিন তানিয়া বলেন, “বেশিরভাগ কর্মজীবি নারী কাজের ফাঁকে সময় বের করে ভিড় ঢেলে শপিং সেন্টারে যাওয়ার ঝক্কি নিতে চান না। এ কারণেই তারা ফেইসবুক পেইজগুলো বেছে নিচ্ছেন কেনাকাটার জন্য বলে আমি মনে করি।”

“তাছাড়া আমরা চেষ্টা করি ভারতের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ‘লেটেস্ট কালেকশন’গুলো নিয়ে আসার। আর সে কারণেই যারা কিছুটা ট্রেন্ডি পোশাক পছন্দ করেন তারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন।” বললেন তিনি।

এ বছর ঈদে পোশাকের চাহিদা সম্পর্কে তানিয়া বলেন, “আমি প্রায় আড়াই বছর ধরে এই পেইজ চালাচ্ছি। আগের বছরগুলোতে শাড়ির চাহিদা বেশি ছিল। এবছর ভারতীয় বুটিক পোশাক, বেনারসি, কামদানি, মিরর বসানো ইত্যাদি থ্রি-পিস ও পার্টি পোশাকগুলোই বেশি পছন্দ করছে।”

অনলাইন ভিত্তিক প্রসাধনী পেইজ ‘মারজুক’স’য়ের মিম সাবিহা সাবরিন বলেন, “আসলে আমাদের দেশের শপিং সেন্টারের দোকানগুলোতে কসমেটিকসের কোয়ালিটি নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া সেখান থেকে কোনো কিছু কেনার পর সমস্যা হলে বলারও সুযোগ থাকে না। আমরা চেষ্টা করি গ্রাহকদের জন্য ভালো ও ব্র্যান্ডের প্রসাধনীগুলো নিয়ে আসতে।”

তবে অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাকের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

অনলাইনে ঈদের পোশাক অর্ডার করে হাতে পাওয়ার পর হতাশার কথা জানান মাকসুদা আজীজ।

তিনি বলেন, “কাজের চাপে শপিংয়ে যাওয়ার ঝক্কি এড়াতে ভারতীয় একটি ব্র্যান্ডের পোশাক ঘরে বসেই অর্ডার করি। দামটাও কম না। কিন্তু হাতে পাওয়ার পর কাপড় ও কাজের মান থেকে এতটাই হতাশ হয়েছি যে তা আর বলার নয়। তারা রেপ্লিকা দিয়েছে যা অত্যন্ত নিম্নমানের অথচ ছবি দেখিয়েছিলো ব্র্যান্ডের পোশাকটির।”

এমন সমস্যা অহরহই হচ্ছে অনলাইনে। টাকা দিয়ে বাজে পোশাক কেনার অভিজ্ঞতা অনেকেরই। তাই অনেকেই আবার এড়িয়ে চলতে চান অনলাইনে কেনাকাটা। তাই কষ্ট হলেও শপিং সেন্টারেই চলে যান।

কর্মজীবি সুমাইরা রহমান উপমা, “অনলাইনে ছবি দেখে অর্ডার করার পর হাতে পেলে তা ভালো নাও লাগতে পারে, তাই কষ্ট হলেও শপিং সেন্টারে যেতে হয়।”

“তবে কসমেটিকস কেনার ক্ষেত্রে অনলাইনই বেশি পছন্দ। কারণ উপযুক্ত দামে ব্র্যান্ডের প্রসাধনীগুলো হাতে পাওয়া যায়। বাজারে তো নকলে ভরা।” বলেন উপমা।

অন্যদিকে গৃহিনী সায়মা জামান বলেন, “আমি গত দুই থেকে আড়াই বছর ধরে নিজের পোশাকগুলো অনলাইনেই কিনে থাকি। কারণ শপিং কমপ্লেক্সে পুরানো ডিজাইনের ড্রেসগুলোই পাওয়া যায়, সে তুলনায় অনলাইন পেইজগুলোতে ‘লেটেস্ট কালেকশন’ থাকে। শুধু আমার মেয়েদের কাপড় কেনার জন্যই মার্কেটে যাওয়া হয়।”

অনলাইন থেকে খারাপ পোশাক পাওয়ার বিষয়ে সায়মা বলেন, “আসলে ভালো খারাপ সব জায়গায় আছে। আর অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে পেইজ বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অর্ডার দেওয়ার আগে অবশ্যই ওই পেইজের রিভিউ এবং অন্যদের মতামত ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে তবেই অর্ডার করতে হবে।”

শামীমা নাসরিন তানিয়া বলেন, “আসলে যারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন তাদের উদাহরণ হিসেবে ধরা ঠিক না। তবে আমরা যারা দীর্ঘদিন কাজ করছি, চেষ্টা করি আমাদের কাছ থেকে যারা কিনছেন তাদের সন্তুষ্ট রাখতে। ছবির সঙ্গে পোশাকের রং ভিন্ন হতেই পারে, কারণ ক্যামেরা ও লাইটিং-য়ের বিষয় রয়েছে। তাই এ বিষয়টি আমরা আগেই ক্রেতাদের বলে দেই।”

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি।