আজব নামে ছেয়েছে ঈদ বাজার

বাহুহীন পোশাকের নাম ‘বাহুবলী’। কিনতে গেলে মন বলে মরি মরি!

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2017, 12:47 PM
Updated : 9 June 2017, 12:47 PM

কিরণমালা, পাখি বা বাজিরাও মাস্তানি নয় এবার ঈদের পোশাক বাজারে দখল করেছে বাহুবলী ২, রাখি বন্ধন, বস ২। পোশাক যেমনই হোক না কেনো নামের বাহার নজর কাড়ার মতো।

বাজার ঘুরে দেখা গেল আগের ঈদগুলোতে পাখি, কিরণমালা বা বাজিরাও মাস্তানির মতো ঘের দেওয়া ফ্রক-কামিজগুলোই এবার আকিকা দেওয়া হয়েছে বাহুবলী ২ নামে। এছাড়াও বাজারে সারারা, ফ্লোর টাচ নামের বেশকিছু পোশাক দেখা গেছে।

একেক দোকানে শিশুদের ফ্রক, স্কার্ট এবং প্যান্ট টপ্সের নামকরণ করা হয়েছে ‘রাখি বন্ধন’ হিসেবে। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সিরিয়ালের নামে নামকরণ করা এসব পোশাকের চাহিদা কেমন তা যাচাই করতে গিয়ে বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অনেকেই এই উদ্ভট নামধারী পোশাক কিনতে বেশ আগ্রহী। এটাকে কেউ কেউ ট্রেন্ড মনে করছেন। আবার অনেকের কাছে নামগুলো হাস্যকর।

রাজধানীর রাপা প্লাজার সুন্দরী ফ্যাশন দোকানের বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, “নিত্যনতুন নাম দেওয়া হয় ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য। যখন যেই সিনেমা বা সিরিয়াল বেশি জনপ্রিয় থাকে তখন ওই নামের পোশাকটা বেশি চলে।”

কিসের ভিত্তিতে এই নাম? পোশাকের ধরনে তেমন কোনো পরিবর্তন না দেখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই নামগুলোর কোনো ভিত্তি নাই। আমরাই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নাম দেই। যখন যেটা চলে তখন তেমন নাম।”

এই ধরনের পোশাকের চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চাহিদা ভালোই। ঈদ উপলক্ষ্যে মানুষরা ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। অনেকে আবার ভারতীয় সুতির আনস্টিচ কামিজের দিকেও বেশ উৎসাহী।”

রাজধানীর অন্যতম বড় শপিংমল পান্থপথের বসুন্ধরা সিটিতে পোশাকের তেমন কোন বাহারি নাম  চোখে পড়েনি। এইখানে ফ্লোর টাচ, গাউন, কোটি যুক্ত পোশাক, পাথর-জরির কাজ করা পোশাক ও কাতান কাপড়ের লেহাঙ্গা দেখা গেছে। তবে কোনোটাতেই কোনো নামকরণ করা হয়নি।

গাউসিয়া ও নিউমার্কেটে এই ধরনের নামের প্রাধান্য চোখে পড়ার মতো। প্রায় সব দোকানেই রয়েছে বাহারি নামের পোশাক।

গাউসিয়ায় পোশাক কিনতে আসা একজন ক্রেতা সাদিয়া আহমেদের কাছে এই বাহারি নামের পোশাকের প্রতি তার আকর্ষণ ও অভিমত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মুচকি হেসে বলেন, “এই সব নাম নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। এই ধরনের নামকরণ করা হচ্ছে ড্রেসের দাম বাড়ানোর কৌশল।”

তিনি আরও বলেন, “উদ্ভট নামের যে সকল পোশাক বাজারে আছে তার সবই ভারী কাতান নয়ত অন্যান্য মোটা কাপড়ের তৈরি। আর অনেক বেশি কারুকাজ করা, যা দেখেই গরম লাগে। আমি ঈদের পোশাক হিসেবে সুতি বা অন্যান্য পাতলা ফাইবারের কাপড় নিব যা ঈদে পরে আরাম পাব। এই গরমে ঈদ হওয়ায় সুতির পোশাকই আমার বেশি পছন্দ।“

নিউ মার্কেটের ক্রেতা নিঝুম রহমান বলেন, “আজব নামধারী পোশাকে খুব একটা আগ্রহ নেই আমার। ওই ধরনের পোশাক খুব একটা পরা হয়না। তাই সুতি, লিনেন বা পাতলা জর্জেটের পোশাক কিনব। আর পছন্দ মতো দুতিনটা গজকাপড় কিনেছি। যা দিয়ে নিজের ডিজাইন মতো কামিজ বানাবো।”

শিশুদের পোশাক ‘রাখি বন্ধন’য়ের চাহিদা সম্পর্কে ক্রেতা মাজিদা আক্তার বলেন, “একেক দোকানে একেক নাম। আমার মেয়ের জন্য একটা ফ্রক কিনলাম এর নাম নাকি ‘রাখি বন্ধন’। কিসের জন্য এই নাম তা জানি না। তবে ফ্রকটা পছন্দ হয়েছে তাই নিয়েছি নামটা বিষয় নয়।”।

সাইন্সল্যাব ও ঢাকা কলেজের উল্টাপাশের দোকানগুলোতে কাজ করা ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে বাহুবলী ২, বস, সুলতান ইত্যাদি নামে। নাম কারণে দামও হাকানো হচ্ছে বেশি।

সেখানে কিনতে আসা, এলিফ্যান্ট রোডের স্থায়ী বাসিন্দা খালেদ আহমেদ বলেন, “শুধু শুধু বিশ্রি সব নাম দিয়ে দাম তিনগুন বাড়ানো হইছে। অথছ এমনি সময়ে এসব পাঞ্জাবির দাম অনেক কম থাকে।”

নাম আসলে যাই হোক ঈদের সময় বিভিন্ন জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমার নামে পোশাকের নাম দেওয়া দাম বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এরকমই ধারণা প্রায় সকল ক্রেতার কাছ থেকেই পাওয়া গেল।