রন্ধন পদ্ধতির প্রভাব

সিদ্ধ, রোস্টিং, মাইক্রোওয়েভ, গ্রিল, সৌতে/স্টর ফ্রাই, বেইক, তেলে ভাজা ও ভাপে সিদ্ধ- একেক পদ্ধতির রান্না খাবারে পড়ে একেক রকম প্রভাব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2017, 08:52 AM
Updated : 5 June 2017, 08:53 AM

সিদ্ধ করার সময় খাবার থেকে হারায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ। ভাজা খাবার খেতে মজা হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এরকম আট পদ্ধতির রান্নায় খাবারে কীরকম প্রভাব পড়ে সেটাই জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট।

প্রথমেই জানা থাকা দরকার কোন পদ্ধতির রান্নায় কোন পুষ্টি উপাদান হারায়।

* পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি।

* চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ ও ভিটামিন কে।

* পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।

সিদ্ধ: নির্দিষ্ট কিছু সবজিতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন থাকে। দীর্ঘসময় সবজিগুলোকে পানিতে রাখলে এই ভিটামিনগুলো পানিতে মিশে যেতে পারে। তাই শাকসবজি ভিটামিন সি’য়ের একটি বড় উৎস হলেও সিদ্ধ করার সময় এতে থাকা ভিটামিন সি সিংহভাগই হারিয়ে যায়। অপরদিকে ভিটামিন বি হল তাপের প্রতি সংবেদনশীল।

তবে এই সবজিগুলো যে পানিতে সিদ্ধ করা হয়েছে সেই পানিসহ খাওয়া হলে হারানো ভিটামিনের ৮০ শতাংশই ফিরে পাওয়া সম্ভব।

রোস্টিং: এই শুকনা রন্ধন পদ্ধতিতে খাবার আগুনে ঝলসানো হয়। দীর্ঘসময় বেশি তাপমাত্রার সংস্পর্শে থাকার কারণে খাবার থেকে তাপ সংবেদনশীল ভিটামিন ‘বি’ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এই রন্ধন প্রক্রিয়ার অন্য কোনো ভিটামিন নষ্ট হয় না। তাই একে স্বাস্থ্যকর রন্ধন পদ্ধতি বলা যায়।

মাইক্রোওয়েভ: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, খাবারের পুষ্টিগুণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা সবচাইতে নিরাপদ, তবে শর্ত প্রযোজ্য।

প্রথমত, খাবার একটানা আধা মিনিট থেকে এক মিনিটের বেশি সময় রান্না করা যাবে না।

দ্বিতীয়ত, খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে গরম করা যাবে না।

গ্রিল করা: আরেকটি শুকনা রন্ধন পদ্ধতি, যেখানে খাবার তৈরি করতে নিচ থেকে তাপ দেওয়া হয়। যেহেতু বেশি তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয় আর খাবারে ধোঁয়াটে স্বাদ আসে, তাই এই পদ্ধতিকে স্বাস্থ্যকর বলা উচিত হবে না।

কারণ, ধোঁয়া যা স্বভাবতই ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করে। ধোঁয়া কমানোর মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে ভিটামিন-বি নষ্ট হবেই।

সৌতে / স্টর ফ্রাই বা হালকা ভাজা: কড়াইতে হালকা তেল বা চর্বি দিয়ে তাতে খাবার নেড়েচেড়ে রান্না করার পদ্ধতির নাম ‘সৌতে’ এবং ‘স্টর-ফ্রাই’। তবে পার্থক্য হল ‘স্টর-ফ্রাই’ করতে বেশি তাপ দিতে হয়ে।

বলতে গেলে দুটাই রান্নার আদর্শ পদ্ধতি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তাই একে স্বাস্থ্যকর রন্ধন পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পাশাপাশি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোর শরীরে ভালোভাবে শোষণ হতেও সাহায্য করে।

বেইক: এটিও শুকনা রন্ধন পদ্ধতি। যাতে প্রয়োজন উচ্চ তাপমাত্রা। তবে এটি স্বাস্থ্যকর কারণ এতে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর চারপাশ থেকে তাপ প্রয়োগ করা হয় বলে খাবার ভালোভাবে রান্না হয়। ফলে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য ভিটামিন নষ্ট হওয়ার হার কম।

তেলে ভাজা: এই পদ্ধতিতে খাবারের স্বাদ বাড়লেও স্বাস্থ্যের জন্য সৃষ্টি হয় নানান ঝুঁকি। গরম তেলে খাবারের চারপাশ এবং ভেতরে-বাইরে সমানভাবে রান্না হয়।

তবে পদ্ধতিতে মাছ বা এই ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণ ধ্বংস হয়। দীর্ঘসময় উচ্চতাপে তেল গরম করার ফলে কিছু বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয় যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই রান্নায় এই পদ্ধতি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। আর করলেও স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা উচিত।

ভাপে সিদ্ধ: খাবারের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখতে সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে এই পদ্ধতিকে। সব ধরনের সবজি রান্নার আদর্শ উপায় ভাপে সেদ্ধ করা। এর সবচাইতে ভালো দিক হল পানিতে দ্রবণীয় যে ভিটামিনগুলো সিদ্ধ করার সময় বেরিয়ে আসে, তা আবারও ওই খাবারের গিয়েই জমা হয়। কারণ ভাপে সিদ্ধ করতে ব্যবহৃত পানি খাবারে শোষিত হয়। সিদ্ধ করার সময় ১ টেবিল-চামচ স্বাস্থ্যকর তেল যেমন- সরিষা কিংবা তিলের তেল দিলে খাবারের স্বাদ বাড়বে।

ছবি: রয়টার্স।