রোজায় বাড়তি যত্ন

ঈদের দিন নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চান সবাই, তাই আগে থেকেই যত্ন নিতে হবে। পুরো রমজান মাসে কিছুটা বাড়তি যত্ন এবং সচেতন থাকলেই ত্বক সুন্দর রাখা সম্ভব।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 09:53 AM
Updated : 7 June 2017, 08:10 AM

এই রমজান মাসে ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে করণীয় কিছু বিষয় তুলে ধরেন ‘রেড বিউটি পার্লার’য়ের কর্ণধার আফরোজা পারভিন।

তিনি বলেন, “রমজান মাসে আমাদের দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় এবং খাবারে কিছুটা অনিয়ম দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শরীরে কিছু পুষ্টি উপাদান এবং খনিজ উপাদানের অভাব দেখা দিতে পারে। আর শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিলে এর প্রভাব পড়বে ত্বকেও। তাই সেহেরি এবং ইফতারে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

গরমের সময় রোজা হওয়ায় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই ইফতারের সময় এবং পরে প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে বলে পরামর্শ দেন আফরোজা পারভিন।

তিনি বলেন, “যে কোনো সময়ই পানি কম পান করার ফলে পানিশূন্যতা হতে পারে। তার উপর বয়স এক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। বয়স ৩০ বা এর কম যাদের তাদের তুলনায় ৩৫ বা তারও বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতার প্রকোপ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তাদের ত্বকে পানি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির প্রভাব বেশি পড়ে। তাই বয়স ভেদে নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

“ইফতারের সময় প্রচুর পানি পান করুন। বিশেষ করে পানিজাতীয় খাবার, ফল ও ফলের রস রাখা উচিত ইফতারের তালিকায়। আমাদের দেশে ইফতারে প্রচুর ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে, যা মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।” বলেন আফরোজা পারভিন।

ত্বক এই সময় শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ত্বকে পানি ঝাপটা দেওয়া বেশ উপকারী। দিনে কয়েক বার মুখে পানি ঝাপটা দেওয়ার পরামর্শ দেন আফরোজা পারভিন।

ইফতারের পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ঘরোয়া উপাদানে তৈরি মাস্ক বা ফেইস প্যাক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

বিভিন্ন ধরনের তাজা ফল, মধু, বেসন, হলুদ ইত্যাদি উপাদান দিয়ে ফেইসমাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরোয়া উপাদান ব্যবহারে ত্বকে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে না তাই এ ধরনের মাস্ক নিরাপদ।

এখানে কয়েকটি মাস্ক তৈরির উপায় উল্লেখ করা হল।

কমলা: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল কমলা ত্বকের জন্যে বেশ উপযোগী। টাটকা কমলার খোসা ত্বকে ঘষে নেওয়া যেতে পারে। অথবা খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। গুঁড়া করা খোসা, দুধ ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মাস্ক ও স্ক্রাব তৈরি করে ব্যবহার করা যায়।

কলা: ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া ত্বক পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে এই ফল। একটি কলা ভালোভাবে চটকে নিয়ে সঙ্গে খানিকটা মধু এবং গুঁড়া করা ওটস মিশিয়ে নিতে হবে। ১৫ মিনিট পর অল্প দুধ দিয়ে মুখ ভিজিয়ে নিয়ে আলতোভাবে ঘষে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

এছাড়াও আরও কিছু উপাদান দিয়ে মাস্ক তৈরি করা যেতে পারে।

ময়দার ফেইস মাস্ক: গম, ছোলা, ডাল, ভুট্টা ইত্যাদি যে কোনো শস্যের তৈরি ময়দা ২ টেবিল-চামচ, এক চিমটি হলুদগুঁড়া এবং পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করতে হবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এ মিশ্রণের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মেশাতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি করার পর পরিষ্কার মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

মাস্কটি শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

গুঁড়াদুধের ফেইস মাস্ক: এক চামচ গুঁড়াদুধ, এক চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মুখ ও গলা ভালোভাবে পরিষ্কার করে মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

শসা ও লেবুর রসের ফেইস মাস্ক: এক চামচ শসার রস ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে এই মাস্ক তৈরি করতে হবে। মাস্কটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সঠিক খ্যাদ্যাভ্যাস এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হলেই ঈদের সময় কাঙ্ক্ষিত সুন্দর ত্বক পাওয়া যাবে বলে মনে করেন আফরোজা পারভিন।

ছবি: অপূর্ব খন্দকার।