মেজাজ যখন কালবৈশাখী

রাগ যখন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিক তখন মনে রাখুন ৫টি ‘এস’।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2017, 07:27 AM
Updated : 28 May 2017, 07:38 AM

সকাল থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। সঙ্গী বা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা চলছে। কিংবা একসঙ্গে কোথাও গিয়েছেন বেড়াতে। সবই ঠিক ছিল। তবে হঠাৎ কোনো একটা কারণে তালু হতে থাকলো গরম। আর সেটা কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। আপনার গলার স্বর কর্কশ হতে থাকলে... দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রাগের মাথায় গালাগালিও শুরু করে দিলেন। নিজেই হয়ত ভাবছেন এমন কেনো করছেন, অথছ সামলাতেও পারছেন না।

এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কারণ হিসেবে মনস্তত্ত্ব-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের ‘জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ক্লিনিকল সহযোগী অধ্যাপক ডাবলিউ রবার্ট নে- তার প্রকাশিত বই ‘ওভারকামিং অ্যাঙ্গার ইন ইউওর রিলেশোনশিপ’য়ে পাঁচটি ইংরেজি শব্দের উপর জোর দিয়েছেন, যেগুলো শুরু হয়েছে ‘এস’ দিয়ে।

এগুলো হল- স্লিপ বা ঘুম, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, সাবস্টান্স বা বস্তু, সাসটিনান্স বা খাদ্য এবং সিকনেস বা অসুস্থতা।

ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সঠিকভাবে চিন্তা করতে এবং শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি যোগায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানুষ খিটখিটে হয় যায় এবং প্রাণবন্তভাবও কমে আসে।

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণয়া দেখা গিয়েছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে আট ঘণ্টা এবং শিশু-কিশোরদের আট ঘণ্টারও বেশি ঘুমের প্রয়োজন।

ব্যায়াম ও ঘুমের সময়ের অনিয়ম, মানসিক চাপ, কিছু ওষুধ, অ্যালকোহলের আধিক্য, অসুখ ইত্যাদি রাতের ঘুম নষ্ট করে দেয়। এগুলো সমাধান না করলে সম্পর্কের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

মানসিক চাপ: প্রবাদতূল্য হরমোন বিশেষজ্ঞ ড. হান্স স্যালি ও তার দল শরীরের উপর মানসিক চাপের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন।

তিনি বলেন, “মানসিক চাপে থাকা অবস্থায় সামান্য কোনো কারণে মানুষ অধৈর্য্য বোধ করে। অনেক কাজের চাপ, কাজ শেষ করার অবাস্তব সময়সীমা, জীবনের কোনো পরিবর্তন (হতে পারে সেটা শুভ) মনকে বিপদজনক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে এবং মানুষ রেগে উঠতে পারে।”

বস্তু: অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এবং অন্যান্য পদার্থ, যেগুলো আমরা পান করে থাকি তা আমাদের অনুভূতিতেও প্রভাব ফেলে। অনেকেই ভাবেন অ্যালকোহল মানুষকে সুখী করে। বাস্তবে আসলে তা হয় না।

কেউ যদি আগে থেকেই বিরক্ত, দুঃখী বা উদ্বিগ্ন থাকেন তবে অ্যালকোহল সে অনুভূতিগুলোকে আরও তীব্র করে দেয়। ক্যাফেইনও দুঃচিন্তার মাত্রা বাড়ায়। বিরক্তি ও মানসিক চাপের পারদকে উপরের দিকে নিতে থাকে।

কিছু ওষুধও মানসিক চাপ বাড়ানোর জন্য দায়ী থাকে। অবৈধ্য ওষুধ বা নিয়ন্ত্রণহীন মাত্রায় ওষুধের ব্যবহার মানুষের পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে অথবা অনুভূতিকে তীব্র করে দেয়। অনেক সময় মানুষকে আক্রমণাত্মকও করে ফেলে।

খাদ্য: আবেগ নিয়ন্ত্রণে সঠিক পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা আবশ্যক। আমরা যদি কোনো একটি বেলার খাবার বাদ দেই তবে আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে খুব কমে যেতে পারে। এটি আমাদের ক্লান্ত ও অধৈর্য্য করে ফেলে।

এভাবে আমরা সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। অনেক পুষ্টিবিজ্ঞানী মনে করেন, খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি চিনি রাখা বা ‘জাংক ফুড’ খাওয়ার অভ্যাস আমাদের ‘মুড সুয়িং’ বাড়িয়ে দেয়। ফলে, ধৈর্য্য কমে যায় আর তুচ্ছ কারণে আমরা রেগে উঠি।

সঠিক মাত্রায় সুষম পুষ্টি সম্বলিত খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন গ্রহণ করলে শরীর এবং মন দুটোই সব রকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৈরি থাকে।

অসুস্থতা: যখন মানুষ অসুস্থ থাকে অথবা কোনো শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যুঝতে থাকে তখন তার সহ্য করার ক্ষমতা কমে আসে। মাথা ব্যথা, পেটের গণ্ডগোল, শরীরের অন্য কোথাও ব্যথা, ঠাণ্ডা, ফ্লু ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা সেরে যাওয়ার পরেও দুর্বলতার কারণে খিটখিটে লাগে।

আবার দীর্ঘমেয়াদী অসুখ, ডায়বেটিক, কোমড়ে ব্যথা, মাইগ্রেইন ইত্যাদি মানুষের মনোসংযোগে বাধা দেয়। এভাবেও মানুষ অধৈর্য্য হয়ে পড়ে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না এবং ক্ষেপে ওঠে।

তাই বেশি রাগ উঠলে বা আক্রোশ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে উপরের ‘এস’গুলোর কথা চিন্তা করুন। আর যে কোনো একটির সঙ্গে মিলে গেলেও সেটা নিয়ন্ত্রণ করে আত্মিয়স্বজন, বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে সুন্দর সময় পার করে ভালো থাকুন।

ছবি: রয়টার্স।