সন্তান বেড়ে উঠুক সুন্দর মানসিকতায়

শিশুর ইতিবাচক মানসিকতা তৈরিতে তার সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ করা প্রয়োজন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2017, 08:53 AM
Updated : 23 May 2017, 08:53 AM

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা বাসার বলেন, “মানুষের ভেতরে স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক গুণাগুণ রয়েছে। একইভাবে যে গুণ যত বেশি চর্চা করা হবে সেটাই বেশি প্রকাশ পাবে। তাই যতটা সম্ভব শিশুকে ইতিবাচক আচরণ ও আদর্শের মাধ্যমে বড় করার চেষ্টা করতে হবে।”

ছোট থেকে শিশুদের সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয় ওরা ঠিক একই আচরণগুলো শেখে এবং ভবিষ্যত জীবনে তার প্রভাব প্রকাশ পায়। তাই শিশুদের সঙ্গে সুন্দর ভাবে কথা বলতে হবে, ওদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। শিশুদের সঙ্গে সবসময় রাগারাগি করলে বা বকা দিয়ে কথা বললে ওদের মনও বিষিয়ে যায়, মেজাজ খিটমিটে হয় এবং অতিরিক্ত শাসনের ফলে সন্তান অবাধ্য হয়ে যায়, জানান তিনি।

শিশুর ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে তার সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ বন্ধ করতে হবে। যতটা সম্ভব শিশুর সঙ্গে 'না' শব্দটি কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন রুমানা বাসার। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন-

"ধরা যাক, আপনার বসার ঘরে মূল্যবান ও পছন্দের কোনো সামগ্রী রয়েছে, হতে পারে তা কোনো ফুলদানি বা ঘর সাজানোর যেকোনো কিছু। আপনার সন্তান যদি বসার ঘরে এসে বল খেলতে চায় বা ছুটাছুটি করে তাহলে তা পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুকে থামানোর জন্য নিষেধ না করে বরং তাকে বারান্দা, ছাদ বা মাঠে খেলতে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন। এতে সে বেশি আকর্ষণ অনুভব করবে।"

অনেক সময় বাসায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলার সময় শিশুরা বিরক্ত করতে থাকে সেক্ষেত্রে তাকে আপনি খেলাধুলা করার বা টেলিভিশনে তার পছন্দের কার্টুন বা যে কোনো গেইম খেলার পরামর্শ দিতে পারেন।  

অর্থাৎ শিশুকে কোনো একটা কাজ থেকে বিরত রাখতে চাইলে তাকে অপেক্ষাকৃত আরও ভালো কোনো উপায় দেখাতে হবে। তবে কিছু কাজ যার কোনো বিকল্প উপায় হয় না যেমন - শিশু যদি বৈদ্যুতিক সকেটে হাত দিতে চায় এবং তাকে অন্য কোনো পথ দেখানোর পরও যদি তার ওইদিকে আগ্রহ না কমে তাহলে তাকে এর অসুবিধা সম্পর্কে জানাতে হবে। কৌশলের মাধ্যমে তার উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে তাকে বোঝানো যেতে পারে, যদি সে সকেটে হাত দেয় তাহলে তার হাতের কতটা ক্ষতি হবে, তার হাত দেখে অন্য বন্ধুরা হাসাহাসি করবে, অথবা কেউ তাকে কোনো উপহার দিলে সে তা ভালোভাবে হাতে নিতে পারবে না - ইত্যাদি।

শিশুদের অপমানবোধ অনেক বেশি।  তাদের এই আত্মসম্মানবোধকে বড়দেরও সম্মান করতে হবে। ছোট থেকেই শিশুর মানসিক যত্ন নেওয়া হলে সে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠবে। শিশুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে অযথা রাগারাগি করলে অথবা তার সব কাজেই  'না' শব্দটি ব্যবহার করলে শিশু ছোট থেকেই নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বড় হয়ে ওঠে। যা তার পরবর্তী জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। 

রুমানা বাসার বলেন, “শিশুর সঙ্গে যতটা সম্ভব ইতিবাচক আচরণ করুন। তার গায়ে হাত তুলবেন না, শাসনের নামে শিশুকে আঘাত করবেন না বা ভয় দেখাবেন না। এতে করে শিশুর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।”

এই অধ্যাপকের পরামর্শ হল, শিশুকে সুনাগরিক ও মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ছোট থেকেই যত্ন নিতে হয়।