দিগন্ত ছোঁয়া অজল চুগ বন বিহার

বসন্তের দিন, প্রকৃতি জুড়ে হলুদ আর সবুজ রংয়ের বাহার। পাহাড়ের গাছে গাছে নতুন পাতা, তরু পল্লবের ছায়ায় ঢাকা বনানী। ঝরার পাতার পর্ব পেরিয়ে রাবার বাগানজুড়ে সবুজ রংয়ের হাতছানি, ঘন পাতা ঢেকেছে সবুজ রংয়ে।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 12:00 PM
Updated : 12 June 2017, 12:22 PM

দিঘীনালা থেকে অজল চুগের পথে বাইক যাত্রা বাঘাইহাট ১০ নাম্বার পুলিশ ক্যাম্পে বিরতি। ক্যাম্পের পাশেই তিন রাস্তার মিলন পথে ছোট টিলার উপর পারিজাত ফুল গাছ, মান্দার ফুলে হলুদ রংয়ের ইস্টিকুটুম পাখির বিচরণ।

মান্দার বসন্তের ফুল, স্বল্পায়ু'র টকটকে মান্দার যেন সবুজ পাহাড়ের লাল রংযে আভা ছড়ায়। বিরতির পর্ব পেরিয়ে মারিশ্যার সরু সড়কে চললাম অজল চুগের পথে, দুপাশ জুড়ে ঘন সবুজ আর বাঁকানোর পথ। এত বাঁকানো পথে খুব বেশি দূর চোখে পড়ে না।

উঁচুনিচু পাহাড়ে চড়াইউৎরাই পেরিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকেই কাচালং রির্জাভ ফরেস্টের সীমানা শুরু। পথের পাশেই অজল চুগের পৌঁছাতে প্রায় মধ্য বিকেল। বিহারে প্রবেশ পথটা রাস্তা থেকে বেশ কিছু উঁচু, চারপাশে দিগন্ত রেখা ছুঁয়ে থাকা পাহাড়পুঞ্জ। চাপরাশে চেনা-অচেনা পাখির বিচরণ। বিহার ঘেঁষে থাকা বড় বড় বৃক্ষ পল্লবে পাখিদের বিচরণ।

বিহার উপরে উঠতে চোখে নিচের পাহাড়ে কেমন সবুজ রংযে ঢাকা, পুরো কাচালং রিজার্ভ ফরেস্টের অনেকটুকু চোখে পড়ে এখানে আসলে। বিস্তৃত সংরক্ষিত বন ঢেকে কি অপূর্ব আদিমতায়, মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে ছোট জুম বসতি।

নিবিড় অরণ্য অন্য কোথাও এভাবে ধরা দেয় না। মুক্ত আকাশের নিচে বিশাল সমৃদ্ধ বনভূমি। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ, কয়েক রকমের জুম চাষে ভরপুর পাহাড়।

বিহার প্রবেশ পথে বাগান বিলাস, হলুদ অলকানন্দ, অপরাজিতার ফু্লের বাগান, সবুজ কড়ই আর নিমগাছ আচ্ছাদনও চারপাশে। বিহারে স্বাগত জানাল অবস্থানরত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

২০১৪ সালে পাহাড় চূড়ায় এই বিহার প্রতিষ্ঠি করেন শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবির ভান্তে। বিহারটি দিগন্তের সঙ্গে হেলান দেওয়া পাহাড়গুলোকে সাজানো চিত্রপট মনে হচ্ছে।

বিহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কেবলই মনে হচ্ছে, চরাচরের এই বিপুলা পৃথিবীতে বোধহয় শান্তি এখানে কিছুটা বেশি। চারপাশটা পাখির দৃষ্টিতে দেখার এক অপূর্ব সুযোগ নির্মিত ভবনের উপরের ছাদে দাঁড়ালে। যেন হাত বাড়ালে ছোঁয়া যাবে সুনীল আকাশ।

বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুরা আন্তরিক। আলাপে জানায়, পূর্ণিমায় এই বিহার এবং তার চারপাশে অরণ্য যেন মায়াবীপুরী'র দেশে পরিণত হয়।

জোছনার আলোয় ফুটে ওঠে দিগন্তের অবিরত সীমান্ত, সবুজ বনানী আর উপত্যকা। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জমতে থাকে পূর্ণিমার আলো, পাহাড় জুড়ে নেমে আসে রাতের নির্জনতা। রাতচরা পাখির শব্দ নির্জনতা ভাঙে এই ঘন অরণ্যের। এমন গল্পে শুনে মনের কোণে ভেসে উঠে সুনীলের মানস ভ্রমণের গল্প।

মাচাং পাহাড় দর্শনের জন্য বেশ আর্দশ, বিকেলে বসন্ত বাতাস গায়ে ফু্লের ছবি তুলছি বিহারের চারপাশের সাজানো বাগানে, পাতাঝরা গাছের ডালে বসে থাকা সুই চোড়া পাখি, সবুজের মখমলের মতো চেনা বন্য পাখি, বেশ বড় টিয়ার ঝাঁক বিহারের চারপাশে। বলা যায় বিহারটা পাখিদের নিবিড় অভয়াশ্রম। এখানে কেউ পাখি শিকার করে না।

পাহাড়ের একদম খাদ ঘেঁষে থাকা লালজবা শোভা পাচ্ছে বিহার ভাবনা কেন্দ্রের পাশে। বিহারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের জলসীমায় চোখ রাখা যাবে, সবুজ বনানী পেরিয়ে পাহাড়ের বুকে ধরা দেয় রুপালি জলের ধারা। বিহারের

ভিক্ষুরা জানাল, মেঘমুক্ত সময়ে দাঁড়িয়ে বিহার থেকে চোখে পড়ে সাজেক উপত্যকা, মারিশ্যা বাজার, এমনকি আলুটিলা পাহাড়ের চূড়া।

প্রয়োজনীয় তথ্য: ঢাকা থেকে এসি/ননএসি বাসে পৌঁছে যাবেন খাগড়াছড়ি। শ্যামলী, এস আলম, ইকোনো, রিফাত, হানিফ, সেন্টমার্টিনসহ বেশ কিছু এসি/ননএসি বাসে নিয়মিত যাতায়াত করে।

খাগড়াছড়ি থেকে চাঁন্দের গাড়ি কিংবা পিকআপে রির্জাভ নিয়ে কিংবা ভাড়ায় চালিত বাইকে অজলচুগ বিহার ঘুরে আসতে পারেন।