গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন

গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীর শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এইসময় নারীর যথার্থ যত্নের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 06:50 AM
Updated : 12 June 2017, 12:18 PM

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা বাসার বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শরীর ও মনের অবস্থা নাজুক থাকে। এই সময় তাকে মানসিকভাবে আঘাত করা বা সে কষ্ট পেতে পারে এমন আচরণ করা মোটেও ঠিক নয়।”

সন্তান হতে যাওয়া মায়ের মানসিক অবস্থা তার গর্ভস্থ শিশুর উপর প্রভাব ফেলে বলে জানান, তিনি।

এই সময়ে নারীদের শরীর দুর্বল থাকে যার প্রভাব পড়ে তার মনে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে তার শারীরিক দুর্বলতা মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। ফলে অনেকের মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়, অনেকের মধ্যে আবার সন্দেহপ্রবণতা দেখা দেয়।

সাধারণত, গর্ভাবস্থায় প্রথম দুইমাস ও শেষের দুই মাস বাদে অন্যান্য সময়ে দৈহিক মিলনে বাধা নেই। তবে অনেকে স্বেচ্ছায় মিলনে বিরত থাকে। যেহেতু এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং গর্ভধারণের কারণে মিলনে বিরত থাকতে হয়ে তাই কোনো কোনো নারীর মধ্যে স্বামীর প্রতি অনাস্থা দেখা দিতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে মাথা গরম করা বা ঝগড়াঝাটি করা ঠিক নয়। এতে মা ও শিশু দুজনেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

স্ত্রীর সন্দেহ প্রবণতা কমাতে স্বামীর করণীয়

এই ধরনের পরিস্থতি সামাল দিতে দুজনের মধ্য বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে এবং স্ত্রী যদি কোনো কারণে সন্দেহ করে থাকে তাহলে মাথা গরম না করে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি যতটা সম্ভব স্ত্রীকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গেলে, তার শরীর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলে, ভবিষ্যতে সন্তানকে নিয়ে দুজনে একসঙ্গে পরিকল্পনা করলে স্ত্রীর মনে সন্দেহ বাসা বাঁধার কোনো সুযোগ পাবে না।

অন্যদিকে এই সময় স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি কম মনযোগ ও সময় দেয় এবং কারণে অকারণে রাগারাগি বা ঝগড়াঝাটি করে তাহলে স্ত্রীর সন্দেহ প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। তাই মা ও শিশুর শারীরিক মানসিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করে স্ত্রীর প্রতি ইতিবাচক আচরণ করুন ও তাকে সময় দিন।

স্ত্রীর খিটমিটে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

স্বামী হিসেবে- গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এর মূল কারণ হল হরমোনের পরিবর্তন। স্ত্রী যদি কোনো কারণে রাগারাগি করে বা মেজাজ খারাপ থাকে তাহলে তার সঙ্গে হেসে কথা বলুন ও ভালো ব্যবহার করুন। কোনো অবস্থাতেই তার প্রতি রুঢ় আচরণ করবেন না। আপনি যদি তার কথা পাল্টা জবাব না দেন তাহলে কিছক্ষণ পরে তার মেজাজ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে অনেকসময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে নিজে অন্যকাজে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে পুরানো কথা না তোলাই ভালো বলে মনে করেন রুমানা বাসার।

পরিবারের অন্যান্য সদস্য- গর্ভবতী মা শ্বশুর বাড়িতে অনেক সময় একাকীত্ব বা অসহায় অনুভব করতে পারেন। এই সময় সম্ভব হলে তার কাছের কাউকে তার পাশে রাখলে মন ফুরফুরে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর বাবার বাড়ির লোক বা আত্মীয় স্বজনদের কাছে রাখা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে শ্বশুর বাড়ির মানুষজনকে তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে, তার দেখাশুনা করতে হবে। শ্বশুর-শাশুড়ী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যদি গর্ভবতী-মায়ের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন তাহলে তার মন ভালো থাকবে এবং আস্থার সৃষ্টি হবে। যেহেতু মায়ের মনের প্রভাব সন্তানের উপরে পড়ে তাই মা খুশি থাকলে তার গর্ভস্থ সন্তানও জন্মের পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি স্বস্তি অনুভব করবে।

আর মায়ের মনে যদি শান্তি না থাকে অথবা গর্ভাবস্থায় মা যদি খুব বেশি খিটখিটে থাকে তাহলে সন্তানও জন্মের পর খিটমিটে মেজাজের অধিকারী হতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিতে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন রুমানা বাসার।