নগরে গ্রীষ্মের ফুল

সাদাকালো এই মিথ্যে কথার শহরে রঙিন পরশ বুলিয়ে দেয় বিভিন্ন এলাকার পুষ্পবৃক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার ধারে তপ্ত মৌসুমের ফুলের রংয়ে রাঙাতে যে কোনো ছুটির দিন বেছে নেওয়া যায়।

ফারুখ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 09:57 AM
Updated : 8 May 2017, 01:20 PM

পলাশ শিমুল আর মাদারের দিন শেষ হতেই শুরু হয়েছে লাল কৃষ্ণচূড়ার দিন। সংসদ ভবন আর চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশ দিয়ে চলতে কৃষ্ণচূড়া দেখেই বোঝা যায় প্রকৃতিতে গ্রীষ্ম ভর করেছে।

প্রখর রোদে চোখ ধাঁধায় স্বর্নাভ হলুদ রঙা সোনাইল বা বান্দরের লাঠি আর বেগুনি রংয়ের মনোমুগ্ধকর জারুল। সঙ্গে আছে রাঁধাচূড়া, কুরচি, কাঠগোলাপ, ডুলিচাপা, উদয়পদ্ম, পাদাউক, মধুমঞ্জুরী, পেল্টোফোরাম, কমব্রেটাম, পালাম বা পালান, লাল বা গোলাপি রঙা সোনালু, নাগেশ্বর, হিজল, ঝুমকো লতা, জ্যাকারান্ডা ও কুরচির ফুল।

বরুণ।

গ্রীষ্মের এমন খরতাপেও প্রকৃতির রূপ-রস মনে শান্তির সু-বাতাস বইয়ে দেবে। যান্ত্রিক এই নগর দেখে মনে হবে আমরা দূর কোনও সুন্দর স্বপ্নের আদর আর মায়ায় ভরা ভুবনে চলে এসেছি!

শুক্রবার ছুটির দিন। ফাঁকা শহরে নগরজীবনের গ্রীষ্মের অফুরান শোভা উপভোগের জন্য ভালো সময়।

সোনালু।

শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এখানে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর পেল্টোফোরাম। রমনা উদ্যানে গিয়ে উদয়পদ্মে মাতোয়ারা হবেন। অন্যান্য গাছের তুলনায় কৃষ্ণচূড়া এত যে তা দেখে যে কারও পুরো শহরকে কৃষ্ণচূড়ার শহর বলেই মনে হবে।

কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে সারা শহর ঘুরলেই দেখা যায় গ্রীষ্মের সব ফুলের সমাহার। যেমন জাতীয় সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে মিরপুর রোড ধরে যতই সামনে যাওয়া যায় ততই হলুদাভ কণকচূড়া বা পেল্টোফোরামে মুগ্ধ হবেন। রমনাপার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে মিন্টু রোডসহ সারা শহরেই রয়েছে সেই মুগ্ধতা।

নাগলিঙ্গম।

এবার গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সামেন। এখানে মিলবে জ্যাকারান্ডার। জ্যাকারান্ডারের আরেকটি গাছ দেখে অভিভূত হয়েছি বুড়িগঙ্গা পারের কেরানীগঞ্জ। শুনেছি ‘ফেয়ারলী হাউস’য়ে একটি জ্যাকারান্ডা গাছ রয়েছে তবে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

জ্যাকারান্ডা গাছে ফুল দেখে মনে হবে শুধু তাকিয়েই থাকি। শুধু তাই নয় আরও মনে হবে যেন ঝরা ফুলে ছেঁয়ে থাকা জ্যাকারান্ডার বিছানায় একটু জিড়িয়ে নেই!

মধুমঞ্জরী।

দুষ্প্রাপ্য গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম নাগলিঙ্গম। গাঢ়ো রংয়ের বড় বড় পাতার সমাবেশ গাছের উপরিভাগে। গাছের বাকল বাদামি আর ধূসর ও মসৃণ। সারা বছরই সে গাছের পাতা ঝরে আবার অল্প কিছুদিন পর নতুন পাতা গজায়। এটাই গাছটির বিশেষত্ব।

যা দেখতে পাওয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, ঢাকার বলধা বাগানসহ গুলিসস্তানের কাছে মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গন। তাছাড়া পুর্তমন্ত্রণালয় ভবনের সামনে, নটরডেম কলেজ ও রমনা উদ্যানেও রয়েছে এই গাছ। ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনটি নাগলিঙ্গম গাছ আছে।

জ্যাকারান্ডা

ঢাকা শহরে কুষ্ণচূড়ার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে জারুল ফুলের চমৎকার শোভা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চোখ ধাঁধাঁনো জারুলবীথি মনোমুগ্ধকর। তিন নেতার মাজারের কাছ থেকে হেঁটে হেঁটে রমনা উদ্যান পর্যন্ত হেঁটে চলে গেলে জারুল ফুল থেকে চোখ এড়ানো যাবে না।

কাঠগোলাপ।

গ্রীষ্মের আরেক অন্যতম সুন্দর ফুল সোনালু বা বান্দরের লাঠি। ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে বাহাদুরশাহ পার্কে হাঁটতে গিয়ে সোনালুর সঙ্গে সখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সামনে দিয়ে গেলে সোনালুতে হারিয়ে যাবেন। এছাড়া রমনা উদ্যান, ওসমানী মিলনায়তন আর ঢাকা সুপ্রিমকোর্টের সামনে সোনালু গাছের বীথি চোখ ধাঁধাবে। বলধা গার্ডেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানসহ সারাদেশেই গ্রীষ্মে সোনালুর মেলা।

সোনালুর সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের সব ফুলের মেলায় আপনিও গা ভাসাতে পারলে, ভালো লাগা ষোল আনা!