বন্ধুর দুরন্ত সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে

হতে পারে বন্ধুই আপনার জীবনে সব। তবে সেই বন্ধুর সন্তান যদি হয় অশান্ত আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি পড়েন সমস্যায়, তবে কী করবেন?

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2017, 11:02 AM
Updated : 11 March 2017, 11:02 AM

জীবনযাপন-বিষয়ক ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুরন্ত শিশুর ‘চিৎকার’, ‘হুটোপুটি’, ‘ঘ্যানঘ্যান’ নিশ্চই বেশিক্ষণ সহ্য হবে না। আবার অন্যের সন্তানকে বেশি শাসনও করা যায় না।

এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করতে পারেন ভিন্ন কিছু উপায়।

কোনো শিশু ত্রুটিহীন নয়: খুব বেশি চঞ্চল শিশুদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাটানো রণক্ষেত্রে থাকার সমান, যা প্রায় অসম্ভব।

ভারতীয় শিশু গবেষক ডা. সার্থক কুমার বলেন, “আট বছরের শিশুরা খুব তৎপর থাকে এবং কোথায় শক্তি খরচ করেত হবে তা তারা জানে না। শিশুর বাবা মা যদি তার আচরণ নিয়ে কিছু না বলে অথবা শিশুর শক্তি কোথায় কীভাবে ব্যবহার করবে সে সম্পর্কে না শেখায় তাহলে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আপনি খুব বেশি কিছু বলতে পারেন না।”

তাই যখন বন্ধু ও তার শিশুর সঙ্গে দেখা হবে সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহসের পরিচয় দিতে হবে।

সুশৃঙ্খল করার চেষ্টা না করা: বন্ধুত্ব যতই ঘনিষ্ট হোক না কেনো, কোনো মা তার সন্তানের প্রতি খুব বেশি কঠিন আচরণ সইতে পারে না। এক্ষেত্রে একটু সচেতন থাকাই ভালো।

যেমন- বন্ধুর সন্তানের যদি হাতের কাছে যা পায় তা-ই ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভ্যাস থাকে এবং কোনো এক সুযোগে আপনার স্মার্ট ফোনটি ছুড়ে ভেঙে ফেলে আর আপনি যদি উচ্চস্বরে তাকে বকা দেন, হয়ত সেটা আপনার বন্ধুর ভালো লাগবে না।

এক্ষেত্রে পরিবারবিষয়ক ভারতীয় পরামর্শদাতা নেহা খান্না বলেন, “অন্যের সন্তানকে কখনও শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়। শিশুদেরকে বরং আচরণ ঠিক করতে বলুন অথবা তাদের পিতামাতাকে তাদের সম্পর্কে জানান। এটি যদি আপনার বন্ধুর সন্তানও হয়ে থাকে সে তার সন্তানকে শাস্তি দিচ্ছে কি দিচ্ছে না তা নিয়ে আপনার মাথা না ঘামানোই ভালো।”

ডা. সার্থক মতামত দেন, “যদি কোনো শিশু খুব ব্যস্ততার ভান করে অথবা রাগে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে তবে তার মনযোগ অন্যদিকে ঘোড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। সেক্ষেত্রে আপনি তাৎক্ষনিকভাবে তাকে কোনো খেলা বা তাকে সঙ্গে নিয়ে গল্পের বই পড়তে পারেন।”

শিশুদের সঙ্গে বড়দের মতো আচরণ করুন: যদি আপনি শিশু-বান্ধব না হন তবে এই বিষয়ে চিন্তিত না হয়ে বরং শিশুর সঙ্গে বড়দের মতোই আচরণ করুন।

ভারতের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক শ্যামা যাদবের মতে, “আপনার সমবয়সি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যেমন আচরণ করেন শিশুর সঙ্গেও তেমন আচরণ করুন। মিষ্টি কিছু অথবা শিশুসুলভ কোনো শব্দ এক্ষেত্রে ব্যবহার করার দরকার নেই। বরং বড়দের মতোই কথা চালিয়ে যান। তাহলে আপনাকে আর ‘শিশু সন্ত্রাসী’ মোকাবিলা করতে হবে না।”

বন্ধুর সঙ্গে যদি একটু শান্তিতে কথা বলতে চান তাহলে তার সন্তানের আগ্রহ কোথায় তা আগে যাচাই করে নিন।

ভারতীয় সফটওয়্যার ব্যবসায়ী শোভা চৌধুরী মনে করেন, বন্ধুর সন্তানকে কোনো কাজে ব্যাস্ত রেখে বন্ধুর সঙ্গে সবচেয়ে শান্তিতে সময় কাটানো যায়।

রক্ষণশীল অভিভাবক: সন্তানের সমালোচনা করলে অনেক অভিভাবকই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেয়। তাই আপনার বলার ধরণের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হন।

ডা. সার্থক পরামর্শ দেন, “কখনও শিশুর নামে নালিশ করা ঠিক নয়। কারণ প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের নামে নালিশ শোনার বিষয়ে রক্ষণশীল হয়ে থাকেন। তাই সন্তানের নামে কিছু বলতে গেলে শব্দ ব্যবহারে সাবধানী হওয়া প্রয়োজন। বন্ধুর সন্তান যদি বাজে শব্দ ব্যবহার করে থাকে অথবা তার যদি মার দেওয়ার অভ্যাস থাকে তবে বন্ধুকে সরাসরি কিছু বলার দরকার নেই। বরং আপনার দুঃসম্পর্কের কোনো আত্মীয়র সন্তানের উদাহরণ দিতে পারেন। কীভাবে সেই আত্মীয়র সন্তানকে আপনি সংশোধন করেছেন সে বিষয়ে বলুন। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় কী তা ‘হাইলাইট’ করে বন্ধুকে বলুন। এভাবে তার মনে কোনো রকম কষ্ট না দিয়েও তার সন্তনের ব্যাপারে সবধান করতে পারবেন।”

আপনি যখন আতিথ্যকর্তা: বাসায় আপনার বন্ধু সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসলে বাসার নিয়মনীতি তাকে বন্ধুসুলভ ভাবে বুঝিয়ে বলুন।

এই বিষয়ে নেহার পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে চকলেট অথবা বিস্কুট খেতে দিন এবং তাকে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন যে বাইরে জিনিস ছুড়ে ফেলা, দেওয়ালে ছবি আঁকা, লাফালাফি করা বা খাবার নিয়ে অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে ঝামেলা করা যাবে না। আর এসব কথা বলার সময় আপনার বন্ধুকে সামনে রাখুন। শিশুকে পরে বকা দেওয়ার চেয়ে আগে বুঝিয়ে বলাই ভালো।

ছবি: রয়টার্স।