শ্যামলী স্কয়ারে পেটপূজা

নগরবাসির বিনোদনের উৎসের অভাবটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় রাজধানীর রেস্তোরাঁর সংখ্যা ও তাদের জনপ্রিয়তা। এমন একটি বিনোদনের উৎস ঢাকার শ্যামলী স্কয়ারের ছয় তলার রেস্তোরাঁগুলো।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2017, 01:26 PM
Updated : 2 Feb 2017, 01:30 PM

২০০৭ সালে শ্যামলী সিনেমা হল ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। ২০১৪ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একই স্থানে আবারও মাথা তুলে দাঁড়ায়, ভবনের নাম দেয়া হয় শ্যামলী স্কয়ার। ক্রমেই ভবনের অন্যান্য তলায় গড়ে ওঠে জামা-কাপড়ের দোকান, সেলুন, পার্লার, টেইলার্স, গয়নার দোকান, মোবাইলের দোকান ইত্যাদি।

আর ভবনের ষষ্ঠ তলায় চালু হয় ফুডকোর্ট। যেহেতু মার্কেটটি নতুন, তাই ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে ছয় তলার ফুডকোর্টের ক্ষেত্রে তা উল্টো।

ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০টি খাবারের দোকান রয়েছে ছয় তলায়। অন্যান্য শপিংমলের ফুডকোর্টের মতো এখানেও ক্রেতাদের বসার জন্য প্রতিটি দোকানের সামনে চেয়ার-টেবিল বসানো হয়েছে। তবে যে দোকানে খাবার অর্ডার করা হবে সেই দোকানের সামনেই বসতে হবে এমন নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে কিছু দোকানের ক্ষেত্রে। তাই বসার আগে কর্মীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো। ব্যক্তিগত বসার জায়গা আছে অনেকগুলো দোকানের।

রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মচারিদের মতে বিগত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে জনপ্রিয়তা বেড়েছে এইসব খাবার দোকানের। যার কৃতিত্ত্ব অনেকটাই ফেইসবুকের। সেট মেন্যুই যেন এখানে প্রধান খাবার।

ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, সবজি, তন্দুরি চিকেন, সুপ, ফালুদা, মুরগির মাংসের তরকারি, পাস্তা, নুডুলস- পরিচিত খাবারগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি বাছাই করে একটি প্লেটে সাজিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন দামের এই সেট মেন্যুগুলো। দামটা ঘোরাফেরা করে ১শ’ টাকা ৪শ’ টাকার মধ্যে।

কথা হল কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকের সঙ্গে।

ক্যাফে থ্রিসিক্সটি: তিন মাস বয়স এই দোকনের, জানালেন ম্যানেজার মোহাম্মদ সুজন। আরও জানান, নিজস্ব বসার জায়গা আছে ১০ জনের। ১৭০ টাকা থেকে ২শ’ টাকায় তিনটি সেট মেন্যু রয়েছে এখানে। এছাড়াও আছে ১১ ধরনের বার্গার। এদের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় পেরি পেরি বার্গার (১২০টাকা), নাগা বার্গার (১৫০ টাকা) ও সাব-স্যান্ডউইচ (১৪০-১৬০ টাকা)। ওয়াইফাই আছে।

ফুড ক্ল্যান:
সংগ্রামী নারী ব্যবসায়ীর উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে ফুড ক্ল্যানের মালিক রোকসানা বেগমকে। মাত্র এক মাস হল চাকরি ছেড়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় এসেছেন তিনি। লোকবলের অভাবে নিজেই দোকানের বাইরে মেন্যু হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন, এমনকি ক্রেতাদের খাবারও পরিবেশন করেন। ১শ’ টাকা থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে মোট ৯টি সেট মেন্যু মিলবে এখানে। তবে বিশেষ আকর্ষণ হতে পারে কাপল সেট মেন্যু, যাতে মাত্র ১৯০ টাকার মেলে দুজনের খাবার। এছাড়াও আছে বিরিয়ানি, ছোলা বাটরা, সাব-স্যান্ডউইচ, বার্গার, চিকেন ললিপপ, সুপ ইত্যাদি। নিজস্ব বসার ব্যবস্থা আছে ৫০ জনের। ওয়াইফাই আছে।
ক্যাফে লাসানি:
২০১৬ সালের আগস্টে এই রেস্তোরাঁ চালু হয় বলে জানান ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম। নিজস্ব বসার ব্যবস্থা আছে ১২ জনের, ওয়াইফাই আছে। ১৮০ টাকা থেকে ২শ’ টাকার মধ্যে পাঁচটি সেট মেন্যু মিলবে। জনপ্রিয়তায় তালিকায় সেট মেন্যুর পরই জায়গা করে নিয়েছে অ্যারাবিয়ান শর্মা (১২০ টাকা), শর্মা রোল (১৫০ টাকা), ওভেন বেইকড পাস্তা (২২০ টাকা) এবং পিৎজা (৩২০-৪৫০ টাকা)।

রেলিশ ফুডশ: “নিজস্ব ৫০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে আমাদের”— বললেন মালিক চৌধুরি হাবিবুল মিজান। মার্কেটের প্রথমদিকের খাবারের দোকানগুলোর মধ্যে এটি একটি। ১শ’ টাকা থেকে ২২০ টাকায় মিলবে ছয় ধরনের সেট মেন্যু। তবে গতবাঁধা খাবারের বাইরে কিছু ব্যতিক্রমী খাবার মিলবে এখানে।

হাবিবুল মিজানের মতে, “আমাদের বিশেষ পরিবেশনা ১৬ পরতের পরোটা যাতে ব্যবহার করা হয় হাঁড়িমরিচ অথবা পুদিনা পাতা, দাম ১৪৫ টাকা। মূল মেন্যুর বাইরে ক্রেতাদের অর্ডারের ভিত্তিতে রুপচাঁদা ফ্রাই দিচ্ছি আমরা ২৭৫ টাকায়। মুরগির মাংসের স্টেক মিলবে ২১৫-২৫৫ টাকায়।”

ওয়াইফাই আছে।

ডি’কফি পলিটিকস:
“আমরাই মার্কেটের একমাত্র দোকান যেখানে মোমো পাওয়া যায় এবং আমাদের উন্নতমানের কফি মেশিন আছে।” বললেন মালিক খন্দকার মঈন হাসান।

তিনি আরও বলেন, “জানুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করেছি আমরা। ফেইসবুকের কল্যাণে সেট মেন্যু বেশি জনপ্রিয় হলেও আমাদের মূল উদ্দেশ্য কফি ও মোমো। কফি তৈরিতে কফি গ্লোরি’র বিন ব্যবহার করা হয়, ধরন ভেদে দাম ৮০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা। আর ১৬০ টাকায় দিচ্ছি ৮টি মোমো। এছাড়াও আছে ১০ ধরনের বার্গার, দাম ১৪০-১৮০ টাকা।”

মেহেরজান: রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন শিকদারের মতে এটিই মার্কেটের সবচাইতে পুরানো খাবারের দোকান। নিজস্ব এবং কমন স্পেস মিলিয়ে মোট দেড়শ জনের বসার ব্যবস্থা আছে এখানে। আর খাবার অর্ডার করলে এদের নির্দিষ্ট বসার স্থানেই বসতে হবে। সেট মেন্যু আছে মোট ১০টি, দাম ১৭৫ থেকে ৩৬৫ টাকার মধ্যে। ওয়াইফাই আছে।

এছাড়াও আছে ব্যাকস্ট্রিট ক্যাফে, ডোমেস্টিকাস, মেক্সিকান স্পাইস, ক্যাফে ফার্ট লাভ, ক্রেইজি ডাইন, ফুড ফোলিক ইত্যাদি খাবারের দোকান।

সম্ভবত এই শপিংমলের ফুডকোর্টের সবচাইতে ভালো দিক হল, দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে দোকানদাররা বিরক্তিকরভাবে আপনাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করবে না। তবে তা কতদিন বহাল থাকবে তা বলা মুশকিল।

সকাল ১১টা থেকে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বৃহস্পতিবার।