অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাদি উৎসব ২০১৬

‘ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ-এফডিসিবি'র উদ্যোগে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাদি উৎসব।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 01:18 PM
Updated : 7 Dec 2016, 01:18 PM

আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটি অংশ এই খাদি আধুনিকতার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আর তাই এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য এফডিসিবি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এই আয়োজন নিয়ে কথা বলেন দেশীয় ফ্যাশন ঘর ‘মায়াসির’য়ের কর্ণধার মাহিন খান।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে একটা সময় খাদি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু এই মিলের সুতার প্রচলনের পর থেকেই খাদি এবং এমন হাতে তৈরি সুতা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।”

হাজার বছর আগে থেকেই আমাদের দেশে চরকায় কাটা সুতা দিয়ে তাঁতে কাপড় বোনার প্রচলন ছিল। আর এটিই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আয়ের উৎস। কিন্তু এখন এই সুতা ও কাপড়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওই পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো অনেক দিক থেকেই বঞ্চিত হয়ে আসছে, এমনটা জানান মাহিন খান।

তিনি বলেন, “চরকায় কাটা সুতার কাপড় থেকে তৈরি পোশাক সাধারণ কাপড়ে তৈরি পোশাক থেকে বেশি আরামদায়ক। এই কাপড়ে তৈরি পোশাকের ঘাম শোষণ ক্ষমতা বেশি থাকে তাই গরমে বেশ আরামদায়ক হয়। তেমনি শীতেও বেশ উপযোগী। মেশিনে বোনা কাপড়ের তুলনায় খাদি কাপড়ের বুনন এবং গঠন অনেকটাই অন্যরকম। তাই খাদি অন্য পোশাকের থেকে অনেকটাই টেকসই।”

গতবছর অনুষ্ঠিত খাদি উৎসবের ফ্যাশন শোয়ের একটি অংশ।

“সব দিক থেকে বেশ আরামদায়ক এবং টেকসই হলেও আধুনিকতার দৌড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে এই খাদি কাপড়। তাই দেশের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই মূলত আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের প্রতিষ্ঠিত ডিজাইনাররা খাদি কাপড়ে তৈরি পোশাক পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।”

খাদি একটি পরিবেশ বান্ধব কাপড়। মিলে তৈরি সুতার তুলনায় খাদি সুতা তৈরি করতে শ্রম প্রয়োজন অনেক বেশি। কিন্তু সেই হারে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না এই কাজের সঙ্গে জড়িতরা, এই বিষয় নিয়ে ক্ষোভ জানান মাহিন খান।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ইত্যদি দেশেও খাদি পোশাকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের দেশেও এই বিলুপ্ত হতে চলা পোশাক সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য এফডিসিবি-র এই উদ্যোগ।

এই বিষয়ে কথা বলেন ফ্যাশন ঘর ‘বিবিয়ানা’-এর কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, “বাংলাদেশের ঐতিহ্যে অনেক ধরনের হাতে বোনা কাপড় ছিল যা দিনকে দিন হারাতে বসেছে। এর মধ্যে খাদি অন্যতম। হাজার বছরের পুরানো এই কাপড় হারাতে বসেছে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনপ্রিয়তার অভাবে। তাই বাংলাশের ঐতিহ্যের এই অংশগুলো ধরে রাখার চেষ্টারই একটি অংশ এই আয়োজন।”

তিনি আরও জানান দেশীয় আরও কিছু কাপড় যেমন- তাঁত, জামদানি এইগুলো নিয়েও ভবিষ্যতে কাজ করতে চান তারা।

খাদি উৎসবে অংশ নেবেন দেশি ১৭ জন ডিজাইনার। তারা হচ্ছেন- মাহিন খাঁন, এমদাদ হক, চন্দনা দেওয়ান, লিপি খন্দকার, বিপ্লব সাহা, মারিয়া ইসলাম, শৈবাল সাহা, ফারাহ আনজুম বারী, কুহু, শাহরুক আমিন, নওশিন খায়ের, হুমায়েরা খাঁন, তেনজিং চাকমা, ফারা দিবা, ফাইজা আহম্মেদ, রিফাত রাকা ও আফসানা ফেরদৌসি।

গতবছর অনুষ্ঠিত খাদি উৎসবের ফ্যাশন শোয়ের একটি অংশ।

দেশের বাইরে থেকে আসছেন ভারতের কারিশমা খাঁন, আনুজ শারমা, গৌরব গুপ্ত ও মায়ান্ক আনান্দ এবং শ্রদ্ধা নিগাম।

পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার সোনালি ধারমা ওয়ারদেনা, মালয়েশিয়ার এডরিক অং এবং নেপালের এন্টি গুরুংও থাকছেন এবারের উৎসবে। এছাড়া থাকছেন ভারতীয় কিউরেটর অর্গ ঘোষ।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনুপ্রেরণায় এই আয়োজন করার পাশাপাশি খাদি কাপড়ের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে সংশ্লিষ্ঠ নানান পেশার মানুষকেও এই উৎসবে সম্পৃক্ত করবার চেষ্টা করবেন তারা।

৯ ও ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে ফ্যাশন শোর মধ্য দিয়ে তাদের ডিজাইন করা পোশাক অতিথির সামনে তুলে ধরা হবে। এরপর ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর গুলশানের গার্ডেনিয়া মিলনায়তনে দু'দিনের প্রদর্শনী ও কেনাবেচার আয়োজন করা হবে। ওই প্রদর্শনীতে ‘খাদি উৎসব’য়ে অংশ্রগ্রহণকারী প্রত্যেক ডিজাইনারের পোশাকগুলো উপস্থাপন করা হবে।

ছবি: আব্দুল মান্নান।