সোনাদিয়া দ্বীপে তাবুবাস

দিগন্তব্যাপী সুনীল আকাশ, আকাশমুখী দীর্ঘ ঘন ঝাউবন, সবুজ তৃণভূমি বুকে জেগে থাকা সোনাঝরা বালুকাবেলা, ঝিনুক বাধানো সৈকত সোনাদিয়া দ্বীপ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2016, 10:51 AM
Updated : 18 Nov 2016, 10:52 AM

সেখানে বেড়ানো ও থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন পরিব্রাজক সমির মল্লিক।

এই দ্বীপে হেমন্তের পূর্ণিমায় তাবুবাস যেন স্বপ্নের মতোই ছিল।

স্বপ্ন আর অধরা রইল না। সোনাদিয়ায় তাবুবাসের আয়োজন করে ভ্রমনসংস্থা- নেচার ট্র্যাভেলস বাংলাদেশ। কক্সবাজারে থেকে খোলা ছাদের ট্রলারে রওনা হলাম দ্বীপ সোনাদিয়ার পথে।

মাথার উপরে কড়কড়ে রোদ। ঝলমলে আলোয় জলের স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি ছাপিয়ে নৌপথের দুধারে জলে ডোবা নোনা পানি বন।

ঘাট ছেড়ে যত গভীরে যাচ্ছি ততই হারিয়ে যাচ্ছে স্থলভূমি। সমুদ্রের নোনাজল ছুঁয়ে টেউ তুলে জলযান ছুটছে নীল আকাশের নিচে। জলের বুকে জেগে থাকা সারি সারি নোনাপানির বন। এই যেন ম্যানগ্রোভ গোত্রীয় বন, জোয়ারের পানি কমে গেলে বন থেকে নেমে যায় জল।

বিশাল জলরাশির পথ পেরিয়ে আমাদের ট্রলার চলল ছোট খালে পথ ধরে। দুধারে কেবল বৃক্ষের ঘন বন। সবুজে ঘেরা খালের ধারে জেলেদের মাছ শিকার। এখানকার মুল জীবিকা সেটাই।

সোনাদিয়া দ্বীপের লালকাঁকড়া।

দ্বীপের সীমানায় পা দিতে দিতে প্রায় মধ্যদুপুর। খালের পানি কমে যাওয়ায়, ট্রলার নোঙর করেছে কিছুটা কম পানির মধ্যে, পানি পেরিয়ে কাদা মাঠ। কাদা জুড়ে ছোট ছোট শামুক। একে একে সবাই ট্রলার থেকে নেমে কাদা পেরেতো লাগল। চোরাবালির মতো কাদাতে তলিয়ে যাচ্ছে পা। এক পা দিয়ে, অন্য পা কাদা থেকে তুলতে হয়। নরম কাদায় হাঁটার অভ্যাসটা বেশির ভাগের প্রথমবার।

কাদা পেরিয়ে, সোনাদিয়ার সবুজ তৃণভূমি। দূর থেকে চো্খে পড়ে ঝাউগাছের বিশাল বন। দেখে মুগ্ধ হবে যে কোনো পথিক!

সবুজ মাঠ পেরিয়ে ঝাউবনে ঢুকতেই মনে হয় এই যেন সবুজের দুয়ার। সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা এই সবুজ মায়াবি দ্বীপ রক্ষা করে যাচ্ছে ঝাউবন।

ঝাউবনের সবুজ ছায়ায় ক্যাম্পিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো। ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের খুব কাছেই সৈকত, সুমদ্র থেকে ভেসে আসে গর্জন।

ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশে চু্লা জ্বালানো হয়েছে। এখানেই রান্নার আয়োজন। ঝাউবন পেরিয়ে এখানে সৈকতের সীমানা। ঘন ঝাউবন পেরিয়ে বালুকাবেলার দুপাশে চোখ ধাঁধানো চিত্রপট।

সোনাদিয়া দ্বীপের অভিযাত্রীরা।

ঝিনুকে বাঁধানো সৈকত, যতটুকু চোখ যায় কেবল নীল জলের ধারা। সমুদ্রের বুক থেকে ঢেউ এসে একের পর এক আছড়ে পড়ছে সৈকতে। জনশূন্য এই সৈকত যেন একান্তই নিজস্ব।

ঝাউবনে ঘেরা সৈকতজুড়ে- ঝিনুক, নুরী পাথর আর লাল কাকড়া। লাল কাকড়া সোনাদিয়ায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। তবে মানুষের পায়ের শব্দ এরা অনেক দূর থেকে পায়।

সৈকতে লাল আভায় সূর্যাস্ত শেষে ক্যাম্পিং ফিরে জ্যোৎস্না বিলাস পর্ব।

ঝাউগাছের ফাঁক গলে নেমে অপরূপ জোছনার আলো। যেন চাঁদ থেকে মোমের মতো গলে নামছে আলোর ছটা! এই যেন অন্য সোনাদিয়া।

ক্যাম্প ফায়ারের আলোকরশ্মিতে পুরো ঝাউবন, ক্যাম্পগ্রাউন্ড লালচে আলোয় ভরপুর। আর সমুদ্র থেকে ক্রমাগত ভেসে আসছে আছড়ে পড়া টেউয়ের গর্জন।

সোনাদিয়া দ্বীপের সৈকত এরকম শামুক-ঝিনুকে ভরা।

রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে এই গর্জন যেন গ্রাস করছে পুরো দ্বীপকে। চারপাশে ছড়ানো তাবুর ক্যাম্পগ্রাউন্ডে বসে আক্ষরিকভাবে ভাবেই মনে হচ্ছে সোনায় মোড়ানো আমাদের সোনাদিয়া দ্বীপ।

জল-জোছনায় বিলিন হতে সোনাদিয়া বাক্যতীত।

যেভাবে যাবেন: সোনাদিয়া যেতে আগে যেতে হবে কক্সবাজার।

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে এসি/নন এসি বাসে কক্সবাজার পৌছে, কোনো হোটেলে অল্প সময়ে ফ্রেশ হয়ে, সকালের নাস্তা শেষ করেই রওনা হতে হবে।

কক্সবাজারের ছয় নম্বর ঘাট কিংবা বিডব্লিউটিসি ঘাট থেকে সোনাদিয়ার ট্রলার ছাড়ে। তবে ট্রলার আগে থেকে রির্জাভ করে নিতে হবে।

ট্রলারে প্রায় দুই ঘণ্টার নৌভ্রমণে পৌঁছে যাবেন দ্বীপ সোনাদিয়ায়।

এভাবেই কাদা মাড়িয়ে উঠতে হয় সোনাদিয়া দ্বীপে।

প্রয়োজনীয় তথ্য:
সোনাদিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। স্থানীয় গাইড/স্থানীয় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

রান্নার প্রয়োজনীয় উপাদান কক্সবাজার থেকে কিনে নিয়ে যেতে হবে।

সোনাদিয়ায় রাতে থাকার জন্য কোনো হোটেল বা রির্সোট নেই। তাই সেখানে রাত কাটাতে হয় নিজস্ব তাবুতে। তাই অবশ্যই তাবু নিয়ে যেতে হবে।

সোনাদিয়া ভ্রমণে তথ্য ও সহযোগিতা জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭, ০১৭১১-৬৬১১১১ নম্বরে।

ছবি: লেখক।