যে কারণে মিষ্টি খেতে মন চায়

মিষ্টি মুখ করার জন্য যখন মন আইঢাই করে তখন বুঝতে হবে শরীরে ভেতরেও কিছু গড়মিল হয়েছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2016, 10:41 AM
Updated : 21 Sept 2016, 10:49 AM

অফিসে কাজ চলছে, চোখের সামনে বিশাল হিসাবের পাতা বা কাজের ফর্দ। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক প্লেট রসে টুপটুপ রসগোল্লা বা গরম গরম জিলাপির ছবি। যতই মন ঘোরানোর চেষ্টা করা হোকই না কেনো, প্রাণ যেন মিষ্টি না খেয়ে জুড়বেই না।

ভারতের পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ সংস্থা নওরিশের কর্ণধার এবং বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ পূজা মাক্ষিজা স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছের মধ্যমে শরীর আসলে কী বার্তা দিতে চায়—

অন্ত্রে পরজীবী বা ছত্রাকের আক্রমণ: মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা যখন খুব বেড়ে যাবে, তখন বুঝতে হবে পেটের ভেতরে পরজীবী আর ছত্রাকরা একদম ‘ফ্রি’ বাড়িঘর বানিয়ে ফেলেছে। এই ছত্রাক এবং পরজীবীরা দেহের অন্ত্রে বাস করে আর চিনি খেয়ে বেঁচে থাকে। শরীরের প্রাকৃতিক চিনি শুষে নিয়ে এরা বেশ আরামে বাস করে আর শরীরে চিনির চাহিদা তৈরি করে। যে সব মানুষ দীর্ঘ মেয়াদে অসুস্থ থাকে এবং যাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধের শক্তি তৈরি হয় তাদের এরকম চিনি খাওয়ার অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়। তবে আন্দাজের ভরসায় না থেকে নিরীক্ষা করে ফেলাই উত্তম।

চিনির অভ্যাস থেকে বেশি মিষ্টি খাওয়া:
চিনি খাওয়া হচ্ছে অনেকটা দুষ্ট চক্রের মতো। যখন আপনি বেশি চিনি খাবেন চিনি মস্তিষ্ককে অধিক ডোপামিন তৈরির নির্দেশনা দিবে। ডোপামিন স্নায়ুর বার্তা পরিবহণ করার তরল। এটাকে ‘ফিল গুড’ হরমোনও বলা হয়। যখন ডোপামিনের মাত্রা কমে যায় তখন আমরা বিমর্ষ হয়ে যাই। এই বিমর্ষ-ভাব কাটাতে চিনি খেতে যায়, এতে আনন্দের পাশাপাশি ওজনও বাড়ে।

কৃত্রিম মিষ্টকারক পদার্থ খাওয়া হচ্ছে: কৃত্রিম মিষ্টকারক পদার্থ যা সাধারণভাবে ‘সুইটনার’ বলে ডাকা হয়, এগুলো অনেকেই চিনির পরিবর্তে খায়। তবে চিনির বদলে খাওয়া হলেও এর লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। কিছু কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, এইগুলো মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে মিষ্টি থেকে এগুলো দূরে তো রাখেই না বরং আরও মিষ্টির দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই যতই চিনিমুক্ত খাবারের লোভনীয় বিজ্ঞাপন আসুকে এগুলোতে কিছুতেই ভোলা যাবে না।

মিষ্টি খেতে চাওয়ার ইচ্ছা যে কারণেই হোক না কেনো মূল একটাই কারণ থাকে তা হল, রক্তে চিনির ঠিক রাখা। এটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবেও ঠিক রাখা যায়—

*আমিষ খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে আনা যায়। আমিষ খুব ভালোভাবে চিনির খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এটাও দেখতে হবে যে শরীর পর্যাপ্ত মাত্রায় আমিষ পাচ্ছে। ওজনের প্রতি কেজির জন্য ০.৮ গ্রাম থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত মাত্রায় আমিষ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে একজন মানুষের ওজন যদি ৬৮ কেজি হয় তবে তাকে অন্তত ৫৫ থেকে ৬৮ গ্রাম আমিষ প্রতিদিন খেতে হবে।

* স্বাস্থ্যসম্মত সকালের নাস্তা খাওয়া খুবই জরুরি। সেখানে কিছু চর্বিমুক্ত আমিষ যেমন ডিমের সাদা অংশ থাকা আবশ্যক।

* প্রতি দুই ঘণ্টায় একটু একটু খাবার খেতে হবে। অনেক লম্বা সময়ের বিরতিতে খাবার খেলে শরীরে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। সারাদিনের খাবারের মোট পরিমাণকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বারে বারে খেতে হবে।

* জাংক ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত এবং কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত খাবার শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে পরে এমন বিপর্যয় আসে যে সার্জারি করানোর মতো গুরুতর ঘটনাও ঘটতে পারে

* পানি খেলে অনেকক্ষণ খাওয়া থেকে দূরে থাকা যায় এবং এইসব মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাকেও দমিয়ে রাখা যায়। এই বুদ্ধিটা এতই দারুণভাবে কাজ করে যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না।