সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেখতে মোটাসোটা বা নিজেকে মোটা অনুভবও করে তাহলেই সেটাকে মোটা বলা যায় না। মোটা বলতে হলে উচ্চতা এবং ওজনের আনুপাতিক হার বিবেচনা করতে হবে।
যারা সেই আনুপাতিক পরিমাপকে মোটা না হয়েও মোটাদের মতো অনুভব করেন, তাদের আসলে মন খারাপ করার কিছু নেই। মোটা সে নয় মোটা হল তার জিন যা তিনি তার বাবা মায়ের কাছে থেকে পেয়েছেন।
তরুণদের বিশেষ করে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ গোলগাল মেয়েদের মধ্যে মোটা অনুভব হওয়ার যে প্রবণতা দেখা যায় এর জন্য পুরোপুরি অবদান তার জিনের।
মুখ্য গবেষক রবি উইডো জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে সর্বপ্রথম এটা দেখানো সম্ভব হয়েছে যে, মানুষ তার ওজন নিয়ে কী ভাবছে এতে তার জিনের প্রভাব আছে। উইডো যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
তিনি আরও জানান, জিনেই এই প্রভাব পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী।
এই গবেষণায় মূলত বৈষয়িক ওজন অর্থাৎ যে ওজন একজনের শরীরে আসলেই রয়েছে সেটাকে পরিমাপ করা হয়। এই পরিমাপ করার ক্ষেত্রে দেখানোর চেষ্টা করা হয় একটি নির্দিষ্ট অবস্থায়, জিনের তারতম্যের জন্যে ওজন অনুভবের কতখানি পার্থক্য হতে পারে।
সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন নামক জার্নালের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে বলা হয়, মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শতকরা ৪৭ জন মানুষের অধিক ওজন অনুভব করার প্রবণতা তাদের বংশধারা থেকে আসে।
বংশগতির এই অনুমান ওজনের অস্তিত্ব অনুভবের সঙ্গে জিনের সম্পর্কের একটা প্রাথমিক ধারণা দেয়, জানান উইডো।
এই গবেষণার জন্য উইডোর দল ন্যাশনাল লনজিটিউডেনল স্টাডি অফ অ্যাডোলসেন্সট টু অ্যাডাল্ট হেলথ নামক গবেষণা থেকে সংগ্রহ করে।
এতে ২০ হাজারেরও বেশি বয়ঃসন্ধি থেকে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে গবেষণাটা চালানো হয়েছিল। এবং একশ জনের মতো যমজ মানুষও ছিলেন। ১৯৯৪ সালে এই গবেষণাটার প্রশ্ন চালানো হয়।
এই ধরনের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে নমুনা তৈরি করে পরে আরও চারবার বাড়িতে বসেই সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। এটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলে।
নতুন গবেষণাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ, গবেষকরা বারবার দেখিয়েছেন হয়েছে যে, প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুতে স্বাস্থ্য মূল্যায়ন শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
এই গবেষণার সহকারী গবেষক জেসন ব্রডম্যান জানান, “একজন মানুষ তার নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজে কী ভাবছেন এটিই তার সুস্থতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড। এটিই সত্যিকারি অর্থে তার মৃত্যুর সম্ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।”
ব্রডম্যান উল্লেখ করেন, যারা সময়ের তাদের শারীরিক সক্ষমতার পরিবর্তন নির্ধারণে কম নমনীয়, তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং উন্নত করার বিষয়ে প্রচেষ্টা তুলনামূলক ভাবে কম হতে পারে।
যদিও ওজনের বিষয়ে প্রতিটা মানুষের জিনের ভূমিকা থাকে তারপরেও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছাও একটা বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে গবেষকরা জোর দেন।
ছবি: রয়টার্স।