রাজধানী থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসা যায়।
ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা একটি রাস্তা সোজা গিয়ে ইতি টেনেছে দোহারের মৈনট ঘাটে। এখানে এসে সড়কটির দুই পাশের চর দেখে অনেকেরই ভুল মনে হতে পারে। এটি কী নদীর চর, নাকি সমুদ্রের কোনো বেলাভূমি!
মৈনট ঘাট ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার একটি জায়গা। এপাড়ে দোহার আর ওপাড়ে ফরিদপুর। মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুরের গোপালপুরের স্পিড বোটে পারাপার হন মানুষ।
নানান কারণে মৈনট ঘাট এখন ঢাকার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ ঘাটের আশপাশে বিশেষ করে পূর্ব পাশে বিশাল চর আর সামনে বিস্তীর্ণ পদ্মা। এখান থেকে পদ্মা নদীতে নৌকায় ঘুরেও বেড়ানো যায় পাড় ধরে।
তাছাড়া এ মৌসুমে প্রচুর রংবেরংয়ের পালের নৌকাও দেখা যায় মৈনট ঘাটে।
মৈনট ঘাট থেকে পদ্মায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিড বোট। আট জনের চড়ার উপযোগী একটি বোটের ভাড়া ত্রিশ মিটিটের জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া ছোট বড় নানান আকারের ইঞ্জিন নৌকাও আছে। আড়াইশ থেকে ৮শ’ টাকা ঘণ্টায় এসব ইঞ্জিন নৌকায় চার থেকে ২০/২৫ জন একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো যায়।
মৈনট ঘাটে বেড়াতে গিয়ে পদ্মার মাছও কেনার সুযোগ আছে। নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখা হওয়া জেলে নৌকা থেকে মাছও কিনতে পারেন। তবে পদ্মার সেই টাটকা মাছের স্বাদ নিতে হলে দাম বেশ কিছুটা বেশিই গুনতে হবে।
মৈনট ঘাট ও পদ্মার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দিনের দ্বিতীয়ভাগই ভালো। সেখানে সূর্যাস্ত না দেখে ফেরা উচিৎ হবে না।
তবে সারা দিনের একটি ভ্রমণ সূচী করে দিনের প্রথম অংশে বেড়াতে পারেন ঢাকার নবাবগঞ্জের প্রাচীন স্থাপনা ও স্থানগুলোতে।
সকালে ঢাকা থেকে বেড়িয়ে প্রথমে দেখে নিন নবাবগঞ্জের কলাকোপার ঐতিহাসিক গান্ধী মাঠ, প্রাচীন প্রাসাদ, এন হাউজ, জগবন্ধু সাহা হাউজ এবং খেলারাম দাতার বাড়ি। এছাড়া নবাবগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন জজ বাড়ি ও উকিলবাড়ি দেখতেও ভুল করবেন না। ঢুঁ মারতে পারেন বান্দুরার জপমালা রাণীর গির্জায়ও।
মৈনটঘাট থেকে ঢাকায় ফেরার সর্বশেষ ট্রিপ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। তবে নবাবগঞ্জের সব জায়গা ও মৈনট ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিজস্ব গাড়ি কিংবা কয়েকজন মিলে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে যাওয়া ভালো।
প্রয়োজনীয় তথ্য: মৈনট ঘাটে দুটি মাত্র রেস্তোরাঁ আছে। এগুলোতে মাঝেমধ্যে পদ্মার ইলিশ পাওয়া গেলেও ছুটির দিনগুলোতে মৈটন ঘাটের পর্যটকের ভিড় লেগে যায় বলে তা ভাগে পাওয়া দুষ্কর। তবে মৈনট ঘাটের কাছে কার্তিকপুর বাজারে তুলনামূলক ভালো খাবারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া মৈনট ঘাট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জয়পাড়া বাজারেও খাবারের ভালো ব্যবস্থা আছে।
কার্তিকপুর বাজারের রণজিৎ ও নিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মিষ্টির সুনাম আছে।
মনে রাখবেন: এ সময়ে পদ্মায় হঠাৎ হঠাৎই ঢেউ বেড়ে যায়। খুব ছোট নৌকা নিয়ে তাই পদ্মার ভেতরে বেড়াতে যাবেন না। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া
সুন্দর এ জায়গায় এরইমধ্যে আমরা পর্যটকরা নষ্ট করতে শুরু করেছি। প্রকৃতির কোমল এ জায়গাটিতে বেড়াতে গিয়ে তাই কোনো ভাবেই প্লাস্টিকের বোতল, চিপস-বিস্কুটের প্যাকেটসহ অন্য কোনো বর্জ্য ফেলে আসবেন না।
জায়গাটিতে এখনও ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। তাই নিজেদের বর্জ্যগুলো নিজ দায়িত্বে সঙ্গে এনে নিরাপদ কোথাও ফেলুন।