চল্লিশে নয় আলসে

এই বয়সে শারীরিক পরিবর্তণের সঙ্গে তাল মেলাতে চাই ব্যতিক্রমধর্মী খাদ্যাভ্যাস।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2016, 11:30 AM
Updated : 25 August 2016, 11:33 AM

চল্লিশে পা দিতে যাচ্ছেন এমন নারীরা অনেক সময় ভাবেন, জীবনযাত্রা একই রকম থাকার পরও হঠাৎ করে কেনো ওজন বাড়ছে? এর কারণ প্রতি ১০ বছরে শরীরে পরিবর্তন আসে, সঙ্গে পাল্টায় পুষ্টি চাহিদাও।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ ম্যারিয়েন জাকবসেন এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেন, “চল্লিশে পৌঁছে নারীরা ওজন বৃদ্ধি, ‘লিন বডি ম্যাস’ হারানো, হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগত সমস্যায় পড়তে থাকেন। এত সমস্যার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের তাল মেলাতে হিমশিমে খেতে হয়।”

ভারতীয় পুষ্টিবিদ ইশি খোসলা বলেন, “বিশ বছর বয়সে যা খেতেন, চল্লিশে পৌঁছে তা আর নিয়মিত খাওয়া যাবে না। এ বয়সে কী খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন সবগুলো বিষয়ের প্রতি কড়া নজর দিতে হবে। কারণ এগুলো নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ওজনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

হরমোনজনীত সমস্যা: হঠাৎ করে এ বয়সে ওজন বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ শরীর রজোবন্ধের দিকে এগোচ্ছে। এ সময় শরীরে ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোন তৈরি হয় কম, ফলে চর্বি বিপাক হয় ভিন্নভাবে।

ভারতীয় খাদ্যাভ্যাস বিশেষজ্ঞ দেভানি শাহ বলেন, “হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে পেটে চর্বি জমা, শরীর ফোলা, পানি জমা, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, পুষ্টিজনিত সমস্যা, ‘মুড সুইং’ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।”

পেটের চর্বি দূর করতে প্রতিদিন ১০ মিনিট পেটের ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। কর্বোহাইড্রেট থেকে ওজন বৃদ্ধি কমাতে উদ্ভিদভিত্তিক খাবার যেমন ডাল, পরিশোধিত শষ্যজাতীয় খাবার ইত্যাদি খেতে পারেন।

ইশি খোসলার মতে, “এ বয়সে প্রচুর ওষুধ খাওয়ার কারণেও হজম প্রক্রিয়ায় গোলমাল বাধে। এ থেকেও ওজন বাড়ে অনেকের। আমলকি, অ্যালোভেরা, তুলসী, সয়া, হলুদ ইত্যাদি খেলে উপকার পেতে পারেন। পাশাপাশি হাঁটাহাঁটি, হালকা শক্তিবর্ধক ব্যায়াম, ইয়োগাতেও মিলবে বেশ উপকার।”

হাড়ের সুস্বাস্থ্য: মাঝ বয়সে হাড়ের ঘনত্বজনিত সমস্যা সবচাইতে বেশি ভোগায় নারীদের। এজন্য প্রয়োজন ‘বায়োঅ্যাভেইলেবল ক্যালসিয়াম’, যে ক্যালসিয়াম পুরোপুরি হজম হয় এবং যথাযথ স্থানে পৌঁছায়।

দেভানি শাহ বলেন, “চল্লিশের পর শরীর ক্যালসিয়ামের চুল্লিতে পরিণত হয়। গ্রহণ করে কম, তবে খরচ করে বেশি।”

এজন্য খেতে হবে সবুজ শাকসবজি, বীজ, বাদাম, ছোলা, দই ইত্যাদি যা ‘বায়োঅ্যাভেইলেবল’ ক্যালসিয়ামের যোগান দেবে।

দুধ এক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর নয়। আর ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও সহজে শরীরে শোষিত হয় না।

গ্যাসের সমস্যা: মধ্যবয়সে বিভিন্ন খাবারে সংবেদনশীলতা স্বাভাবিক ব্যাপার। হঠাৎ করেই তৈরি হয় ‘ল্যাকটোজ, হুইট ইনটোলেরেন্ট’ সমস্যা, অর্থাৎ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এবং গম পেটে সহ্য হয় না।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, ‘ট্রান্স ফ্যাট’ ও ‘প্রিজারভেটিভ’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন ইশি খোসলা। রান্না ঘরকে বানিয়ে ফেলতে হবে নিজস্ব হাসপাতাল এবং নিজের পছন্দ ও সীমাবদ্ধতা অনুযায়ি খাবার তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে।

দেভানি শাহ বলেন, “রাতের খাবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই সেরে ফেলতে চেষ্টা করতে হবে। হজমক্রিয়াকে সুষম করতে ভেষজ চা পান করতে পারেন। চায়ে জিরা, পুদিনা-পাতা, লেবু, হিং, জোয়ান, হলুদ, গোলমরিচ ইত্যাদি খাবারে ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”

ছবি: রয়টার্স।