দক্ষিণের জলের রাজ্যে ভ্রমণ

এক দিনে ঘুরে বেড়ানো যায় তিন জেলার এই খালগুলোতে। আর উপভোগ করা যায় তিনটি অসাধারণ ভাসমান বাজার।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2016, 09:28 AM
Updated : 30 July 2016, 10:16 AM

এই সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর একটি দক্ষিণাঞ্চলের জলের রাজ্য। বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠী- এই তিন জেলার ছোট ছোট খালগুলোর স্রোতের সঙ্গে বয়ে চলা এ অঞ্চলের মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা আর এখানকার ভাসমান বাজারগুলো এ ভ্রমণের মূল আকর্ষণ।

বরিশাল জেলার বানারিপাড়ায় সন্ধ্যা নদী থেকে ছোট ছোট খাল ঢুকেছে এখানকার গ্রামগুলোতে। এ খালগুলোকে কেন্দ্র করেই এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা বহমান।

দৈনন্দিন কাজ কর্মের বেশিরভাগই এ খালগুলোকে কেন্দ্র করেই। কারও বাড়ির পেছনে, কারও বাড়ির সামনে থেকেই বয়ে চলেছে খালগুলো। সবার বাড়ির সামনেই সাধ্যমতো ঘাট বানানো আছে।

বর্তমান সময়ে এ এলাকায় সড়ক পথের উন্নয়ন ঘটলেও অনেকের কাছেই এখনও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এসব জলপথই রয়ে গেছে। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম এখনও অনেকের কাছেই নৌকা আর খাল।

আটঘরের ভাসমান বাজার, স্বরূপকাঠী, পিরোজপুর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

কুড়িয়ানার নৌকার হাটের পথে বিক্রেতা, স্বরূপকাঠী, পিরোজপুর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

বানারিপাড়া থেকে খালে ঘুরে ঘুরে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর বাজারে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বর্তমান নাম নেছারাবাদ। এখানকার আটঘরে এ সময়ে প্রতিদিনই বসে ভাসমান বাজার।

আটঘর বাজারের প্রধান পণ্য পেয়ারা। এছাড়া স্থানীয় উৎপাদিত নানান সবজি, পান, সুপারিসহ নানান ফলমূল নৌকায় করে বিক্রি হয় এ বাজারে।

আটঘর বাজারটি মূলত তিন খালের মোহনায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বাজারের ব্যস্ততা বেশি থাকে।

আটঘর থেকে সামান্য সামনেই কুড়িয়ানা। এখানেও বর্ষা মৌসুমে বসে একটি নৌকার হাট। শুক্রবার এখানকার হাটের দিন। প্রধান পণ্য নৌকা হলেও মাছ ধরার সরঞ্জামাদিও বিক্রি হয়।

তবে এ হাটের ব্যস্ততা বাড়ে দুপুরের পরে। সকাল থেকে কুড়িয়ানা হাটে বড় বড় নৌকায় বোঝাই করে ছোট ছোট নৌকা। এসব নৌকা এনে কুড়িয়ানার খালে ভাসিয়ে রাখা হয় বিক্রির জন্য। ভরা মৌসুমে খাল পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কও ভরে যায় নৌকায়।

কুড়িয়ানার নৌকার হাটের পথে বিক্রেতা, স্বরূপকাঠী, পিরোজপুর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

ভিমরুলির পেয়ারার বাগান, ঝালকাঠী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

কুড়িয়ানা থেকে বিভিন্ন খালে ঘুরে প্রায় দুই ঘণ্টায় যাওয়া যায় ভিমরুলির ভাসমান বাজারে। এ বাজারে যাওয়ার পথেই দেখে নিতে পারেন পেয়ারার বাগান।

এখানে খালের দুইপাশে শুধুই পেয়ারার বাগান। পছন্দের যে কোনো বাগান দেখে নিতে পারেন। এখানকার পেয়ারার বাগানগুলোও অনেকটাই পানির ভেতরে। নিচু জমির ভেতরে নালা কেটে তার দুইপাশে লাগানো পেয়ারার গাছ।

ভিমরুলি ভাসমান বাজারটি ঝালকাঠী জেলার সদর উপজেলায়। জুলাই থেকে অগাস্ট মাসে ভিমরুলি বাজারের ব্যস্ততা বেশি থাকে। এ সময়ে এ বাজারের প্রধান পণ্য পেয়ারা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাট থেকে হুলারহাট বিংবা ভান্ডারিয়া-গামী লঞ্চে চড়ে সকাল সকাল নামতে পারবেন বানারিপাড়ায়। এ পথে রাজদূত ৭, অগ্রদূত প্লাসসহ কয়েকটি লঞ্চ চলাচল করে।

ঢাকা থেকে বানারিপাড়া লঞ্চের দ্বৈত কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা। একক কেবিন ১ হাজার টাকা। ডেকে জনপ্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা।

ভিমরুলির পেয়ারার বাগান, ঝালকাঠী। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

ভিমরুলির ভাসমান বাজার ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

এছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে যে কোনো লঞ্চে বরিশাল পৌঁছে সেখান থেকেও বাসে যাওয়া যায় বানারিপাড়া।

বরিশালে নথুলস্নাবাদ বাস স্টেশন থেকে প্রতি ত্রিশ মিনিট পর পর বানারিপাড়ার বাস ছেড়ে যায়।

কীভাবে বেড়াবেন

বানারিপাড়া থেকে সারা দিনের জন্য ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে হবে এসব এলাকায়। সারা দিনের জন্য দশ জনের উপযোগী একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।

সারা দিন ঘুরে বানারিপাড়া থেকে বরিশাল ফিরে ঢাকায় ফিরতে পারেন। ফিরতি পথে দেখে নিতে পারেন বরিশালের সবচেয়ে আর্ষণীয় মসজিদ গুঠিয়া এলাকায় বায়তুল আমান জামে মসজিদ।

প্রয়োজনীয় তথ্য

ঢাকা থেকে রাতের লঞ্চে ভ্রমণ করে পরের দিন বেড়িয়ে আবার রাতের লঞ্চেই ফিরে আসা যায়। এ ভ্রমণের পুরোটাই জলপথে। সাঁতার জানা না থাকলে সঙ্গে তাই লাইফ জ্যাকেট নেওয়া জরুরি।

ভ্রমণের সময় দুপুরের খাবারের জন্য ভালো জায়গা আটঘর বাজারের সন্ধ্যা রাণীর রেস্তোরাঁ (০১৯২৩৭৪৪৯৩৭) কিংবা ভিমরুলি বাজারে জনি রেস্তোরাঁ (০১৭৩১৮১৮১৬৭)।