কেশ রাঙানোর উপায়

শুধু সাদা চুল ঢাকতে নয় বরং ফ্যাশনের অঙ্গ হিসেবে চুলে রং করা বিষয়টি এখন বেশ জনপ্রিয়। আর পোশাকের ট্রেন্ডে যেমন নিয়ম করে পরিবর্তন আসছে তেমনি বদলাচ্ছে চুলে রং করার ধরণ।

ইরা ডি. কস্তাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 10:36 AM
Updated : 30 June 2016, 11:56 AM

একটা সময় ছিল যখন চুলে রং করা বলতে মানুষ বুঝত কলপ করা। তখন কালো বা গাঢ় বাদামি রং ব্যবহার করা হত সাদা চুলগুলো ঢেকে ফেলতে।

এই ছক থেকে বের হয়ে এসেছে আধুনিক যুগের ফ্যাশন সচেতন নারীরা। কালো, খয়েরি বা বাদামি রংয়ের বদলে এখন চুলের রংয়ে লাল, গাঢ় গোলাপি, বেগুনি, নীল, ধূসর, সোনালি, তামাটে, সবুজ, কমলা ইত্যাদি রংও প্রাধান্য পাচ্ছে।

তবে চুলে এই ধরনের রং লাগানোর প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং চুল নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থেকে যায়।

এ বিষয়ে দক্ষ নন এমন কারও কাছে এই ধরনের রং করানো হলে চুল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এ ধরনের নানান সমস্যা এবং রং করানোর পর বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানান মেইকআপ আর্টিস্ট এবং প্রশিক্ষক ফারজান মিতু।

ফারজান বলেন, “আমি চুল কালার করতে পছন্দ করি এবং অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন রং ব্যবহার করেছি চুলে। আমার চুল মাঝারি দৈর্ঘ্যের। আর চুল কেটে ছোট করে ফেলার চিন্তা করছিলাম তাই এর আগে ‘গ্যালাক্সি থিম’য়ে চুল রং করার সিদ্ধান্ত নেই। নীল, বেগুনি, ধূসর এবং হালকা বেগুনি (ভায়োলেট) এই রংগুলো ব্যবহার করে চুল রাঙিয়েছি। এক্ষেত্রে আমি আমার পরিচিত একজনের কাছে রং করিয়েছি। কারণ এই ধরনের রং ভালো না হলে চুলে ক্ষতি হয়।”

আমাদের দেশের মানুষদের চুলের রং সাধারণত কালো বা বাদামি হয়ে থাকে। আর এই ধরনের রং কালো চুলে ফুটিয়ে তোলা কোনো ভাবেই সম্ভব না। তাই আগে চুল ব্লিচ করে নিতে হয়।

ফারজান বলেন, “আমার চুল বাদামি। তাই ব্লিচ করা ছাড়া আমার চুলে অন্য রংগুলো ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এ কারণে ব্লিচ করে প্রথমে চুলের প্রাকৃতিক রং ঢেকে তার উপর রং করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ।”

“ব্লিচ করার পর বিশেষ ধরনের টোনার দিয়ে চুল ধুয়ে এর হলদেভাব দূর করতে হয়। এরপর চুল দেখতে অনেকটা সাদা হয়ে যায়। এর উপর মন মতো রং লাগানো হয়। উজ্জ্বল রংগুলো চুলের সঙ্গে মিশে যেতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় নেয়,” বলেন ফারজান।

তিনি জানান, সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হলে এবং রং করা চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করা হলে এই রং চার মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। আর রং করা চুলের জন্য বিশেষ ট্রিটমেন্ট রয়েছে সেটিও স্টাইলিস্টের কাছে করানো ভালো।

রং করার প্রক্রিয়াটি যেমন দীর্ঘ তেমনি এই চুলের পরবর্তী যত্ন নেওয়াও বেশ সময় সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে ফারজানা রং করা চুলের জন্য তৈরি বিশেষ হারবাল বা হালকা কোনো শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “সপ্তাহে তিন বারের বেশি শ্যাম্পু করা ঠিক হবে না। যত বেশি শ্যাম্পু করা হবে তত দ্রুত রং হারাবে চুল। তাই এক্ষেত্রে যদি মাথার তালু তেলতেলে হয়ে যায় তাহলে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘুমানোর সময় চুল অবশ্যই বেণি করে নেওয়া উচিত। এতে চুলে জট বাঁধার সম্ভাবনা কম থাকে।”

চুলে ব্লিচ করার ফলে চুল পাতলা হয়ে গেলেও দেখতে বেশ ফোলা লাগে। আর তাই দেখতে তেমন খারাপ লাগে না।

তবে রং করা চুল বেশ রুক্ষ হয়ে যায়। ফলে চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে। তাই চুলের যত্ন নিতে হয় বেশি করে। রং করার কারণে চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে এমন ধারণা রয়েছে অনেকেরই। তবে চুল পড়ার সমস্যার থেকে চুল ভেঙে পড়ার ভোগান্তিই বেশি, জানান ফারজান মিতু।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ সময় গোসল করার কারণেও রং করা চুলের ক্ষতি হতে পারে। তবে রং করা চুল বেশি রুক্ষ মনে হলে তেল দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া হেয়ার স্প্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।”

পুরো চুলে ব্লিচ করা এবং রং করা যদি পছন্দ না হয় তবে চাইলে অল্প কিছু চুলে স্ট্রিক করা যেতে পারে। এতে সম্পূর্ণ চুল ব্লিচের কারণে পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকবে না। তবে চুলে কয়েকটি স্ট্রিকও এখন বেশ জনপ্রিয় স্টাইল।

তবে অদক্ষ কারও কাছে চুলে রং করানোর ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। দক্ষ এবং এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারও পরামর্শ নিয়ে তবেই চুলে রং করানো উচিত, এমনটাই পরামর্শ দেন ফারজান।

ছবির মডেল: ফারজান মিতু।