একসময় গহনা মানে ছিল সোনা বা রূপার কারুকাজ। চলতি ফ্যাশন দুনিয়ায় গহনা শুধু দামি ধাতু বা ডিজাইনে সীমাবদ্ধ নেই। গহনার উপকরণ এবং নকশায় বদল এসেছে অনেক।
সোনা রূপা বা অন্য কোনো ধাতুর সঙ্গে অনেক আগেই রত্ন পাথর, মুক্তার ব্যবহার ছিল। এখন গহনার উপকরণে কাঠ, কড়ি, মাটি ইত্যাদিও যুক্ত হয় নিজস্ব মহিমায়।
এ বছরের মূল আকর্ষণ হচ্ছে কাপড়ের গহনা। কখনও কাপড়ের লম্বা মালা কখনও ইয়ক দিয়ে কাপড়ের চন্দ্র হার। যেটাই হোক— কাপড় এখন গহনার উপকরণ হিসেবে দাপটে অবস্থানে আছে।
ফ্যাশন হাউজ বিবিয়ানার কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, “ফ্যাশন দুনিয়া সব সময় নতুন কিছু খোঁজে। তাছাড়া সুতা বা কাপড়ের গহনাগুলো খুব আরামদায়ক। যাদের ধাতুতে এলার্জি হয় তাদের জন্য কাপড়ের গহনা খুবই ভালো বিকল্প।”
“বর্ষায় ঈদ হওয়ায় বৃষ্টির পানি এবং স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় ঘাম দুটোকেই মোকাবেলা করতে হবে। পানির সঙ্গে ধাতুর রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এতে ধাতুর রংও বদলে যায় আবার ত্বকেও তার প্রভাব পরে,” ব্যাখ্যা করলেন লিপি।
তিনি আরও বলেন, “সুতার গহনাগুলো খুব রংচংয়ে। বলতে গেলে সব পোশাকের সঙ্গেই মিলিয়ে মিলিয়ে কেনা যায়। আর দামে সস্তা বলে আলাদা আলাদা পোশাকের জন্য আলাদা আলাদা গহনা কিনতে সমস্যাও হয় না।”
কাপড় ও সুতায় তৈরি গহনা পাওয়া যাবে, সাদাকালো, বিশ্বরঙ, বিবিয়ানা, যাত্রা, অরণ্য, আইডিয়া ক্রাফট প্রভৃতি ফ্যাশন হাউজের আউটলেটগুলোতে। দাম শুরু দেড়শ টাকা থেকে।
একটা সময় ছিল গহনা বলতে খুব চকচকে মসৃণ কিছু বোঝা হত। হালের গহনায় চকচকে বা মসৃণ দুটোই একটা প্রকরণ মাত্র। অমসৃণ, ফিকে দেখতে ধাতুর গহনার চাহিদাও কম নয়।
রূপার গহনার দাম ফ্যাশন হাউজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে হাজার দুয়েক টাকার মধ্যে সুন্দর রূপার গহনা হয়ে যায়। রূপার গহনা পাওয়া যাবে আড়ং, যাত্রা ও অঞ্জনসে।
আড়ং’য়ের গহনা বিভাগে সোনা, রূপা বা পিতল ছাড়াও কয়েক বছর ধরে যোগ করা হয়েছে অন্য ধরনের গহনা।
ফ্যাশন জুয়েলারি নামে এই গহনায় কাঠ, সুতা, হালকা ধাতু, রঙিন বিডস ছাড়াও বিভিন্ন গাছের বীজ দিয়ে তৈরি গহনার সন্ধান পাওয়া যায়। এই গহনার মধ্যে কানের দুল, মালা, নেকলেস, নূপুর, বালা সবই পাওয়া যায়। দামে সস্তা বলে এই বিভাগের গহনার প্রতি ‘টিনেইজ’ ক্রেতাদের আগ্রহ খুব বেশি।
গহনার এত উপকরণের আবির্ভাবের পরেও ‘মুক্তা’ তার নিজস্ব মহিমা ধরে রেখেছে।
ঈদের সকালের হালকা সাজের সঙ্গে মুক্তার গহনার কোনো তুলনাই নেই। বাজারে এখন নানান রংয়ের মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার সঙ্গে সঙ্গে অন্য পাথর, রত্ন বা ধাতুর ব্যবহারে তৈরি গহনাও এই ঈদে সমাদৃত হবে বলে ধারণা করেন ফ্যাশন বোদ্ধারা।
এসব প্রচলিত ফ্যাশন হাউজের বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু গহনার নকশাকর হাল ফ্যাশনে ভালো প্রভাব রাখছেন। এমন একজন লোরা খান। তার উদ্যোগ ‘সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি’ মূলত ফেইসবুক ভিত্তিক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
পেশায় লোরা একজন স্থপতি। তবে তিনি সকল কাজ গহনার ডিজাইনে নিবিষ্ট করেছেন।
লোরার নকশা করা গহনাতে যেমন আছে দাদী-নানীদের আমলের হাতে বানানো গহনার নকশা তেমনি রয়েছে ছবির ফ্রেমের বড় বড় লকেটে সীতা হার বা চন্দ্র হার। গহনাগুলোর নামও খুব অভিনব- আনারকলি, পদ্ম, তাজমহল। বাদ যাচ্ছে না রিক্সা আর্ট বা পাথরও।
ঈদ উপলক্ষ্যে লোরা নানান ধরনের গহনা এনেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বড় আকারের নাকের ফুল, খোপার কাঁটা এবং নূপুর। সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরির ফেইসবুক পেইজ থেকে তাদের গহনার বিস্তারিত দাম জানা যাবে।
দাদী নানীদের আমলের হাতে তৈরি গহনা কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। তাদের মকরমুখী বালা, পাতলা পাতের হার কাটাইয়ের কাজ করা গহনা এখন রূপা বা পিতলে তৈরি হচ্ছে। হালকা পাতলা এ গহনাগুলো সোনালির পাশাপাশি তামাটে-রূপা বা অক্সডাইজ রংয়ে বেশই সমাদৃত।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, ঈদে এবার দেশীয় সব গহনার পাশাপাশি তিব্বতি গহনারও বেশ কদর। তিব্বতি গহনার বৈশিষ্ট্য হল- এগুলোর উজ্জ্বল রংয়ের পাথরের ব্যবহার এবং মিনার কাজ। এই গহনার ধাতুও বেশ ভারি আর রংগুলোও বেশ অভিনব। মূলত ফিরোজা রংয়ের সঙ্গে উজ্জ্বল হলুদ, নীল, কমলা, লাল রং মিলিয়ে বানানো এই গহনাগুলো খুব আকর্ষণীয়। দাম শুরু ১ হাজার টাকা থেকে। পাওয়া যাবে বিশ্বরঙ, আইডিয়া ক্রাফট প্রভৃতি ফ্যাশন হাউজে।
ছবি: সৌজন্যে সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি।